হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাকালেও থেমে নেই শিশু-কিশোরী ও রোহিঙ্গা পাচার। পাচারকারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোরীদেরকেই পাচারের জন্য টার্গেট করে। গত কয়েক বছরে পাচারের ক্ষেত্রে ফেসবুক, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের মানব পাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই নারীদের বেশির ভাগকে জোর করে যৌন পেশায় বাধ্য করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তবে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয় তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ দাবি করেছে, বছরে এই সংখ্যা ৫০ হাজার। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সংখ্যার সত্যতা নিয়ে কখনো কিছু বলা হয়নি।
অন্যদিকে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় ২ হাজার নারীকে গত ১০ বছরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম পাচারের শিকার ৬৭৫ জন নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৬ থেকে ২০ বছরের কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার। এরপরেই আছে ১১ থেকে ১৫ বছরের কিশোরীরা। যাদের বেশির ভাগই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার।
রোহিঙ্গা পাচার :বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের পাচারও থেমে নেই। এই তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে সোয়া লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়েছে যার বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। সে সময় মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জঙ্গলে একাধিক গণকবরের সন্ধান মেলে। এরপর মাঝে দুই বছর মানব পাচার কমে যায়। এরপর ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। সেখান থেকে ফের মানব পাচার শুরু হয়।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১ হাজার ৫৯৭ জন রোহিঙ্গা পাচার হয়। ২০২০ সালে অন্তত ২ হাজার ৪০০ মানুষ সাগরপথ পাড়ি দিয়েছে। এভাবে যেতে গিয়ে অন্তত ২০০ জন ডুবে গেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কিশোরী পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, কী করে তারা ভারতীয় নানা ধরনের পরিচয় কার্ড পেয়ে যাচ্ছে? ভ্রমণ ভিসায় কী করে এত লোক চলে যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। মানব পাচার আইনে ৯ বছরে ৩৬টা মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হলো কেন? অপরাধীদের বিচার করতে হবে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানব পাচার বিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবে না।