হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ৩১ জুলাই শেষ হলো দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম। কোভিড-১৯ মহামারি ও লকডাউনের কারণে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্নেন্স বিষয়ক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ) এর একটি উদ্যোগ। বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম একটি বহু-মাত্রিক অংশীজন, যুব এবং যুব নারীদের নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা বাংলাদেশে ইন্টারনেট গভর্নেন্স নিয়ে কাজ করছে।
প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট গভর্নেন্স সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা এই প্রোগ্রামে ইয়ুথ আইজিএফ বাংলাদশ ইনফ্লুয়েন্সার হান্ট, ইয়ুথ এ্যামবাসেডর প্রোগ্রাম, ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স, মানবতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে শিশু এবং কিশোরদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি এর প্রভাব, ক্ষতিকর দিক এবং উত্তরণের উপায়, যুব উদ্যোক্তা তৈরি-ডোমেন নাম নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সুরক্ষা, যুবদের ক্ষমতায়ন: বিগ ডেটা ও আইওটি, সাইবার ভ্যালু-সিস্টেম এবং ম্যালপ্র্যাকটিস, ওটিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং মনিটাইজেশন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট গভর্নেন্সে অংশগ্রহণ, যুবদের জন্য সরকারী সুযোগ: প্রশিক্ষণ ও অনুদান ।
সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারী, প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, একাডেমিয়া, যুব এবং গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধিবৃন্দ ইয়ুথ ইন্টারনেট (জুম প্ল্যাটফর্ম) অংশগ্রহণ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলো হলো ইয়ুথ আইজিএফ বাংলাদশ ইনফ্লুয়েন্সার হান্ট, ইয়ুথ এ্যামবাসেডর ও অন্যান্য সেশন।
ই ওয়াই হোস্ট লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেন আলোচনা করেন যুব উদ্যোক্তা তৈরি ডোমেন নাম নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন।
মো. সিরাজুল ইসলাম, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ও সিস্টেম এনালিস্ট, ঢাকা ইউনিভর্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, গাজীপুর, আলোচনা করেন যুবদের ক্ষমতায়ন: বিগ ডেটা ও আইওটি নিয়ে।
অভিযান ভট্টাচার্য, সিনিয়র সাইনটিস্ট, টিসিএস রিসার্চ, কোলকাতা, ভারত এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আইসক কোলকাতা চাপ্টার, সাইবার ভ্যালু-সিস্টেম এবং ম্যালপ্র্যাকটিস এর বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরেন।
সালাহউদ্দিন সেলিম, সম্প্রচার ও আইটি প্রধান সময় টেলিভিশন, ওটিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং মনিটাইজেশন নিয়ে আলোচনা করেন।
শ্রীদীপ রায়ামাঝি সেক্রেটারি এশিয়া প্যাসিফিক স্কুল অব ইনটারনেট গভর্নেন্স এবং লার্ন ইন্টারনেট গভর্নেন্স এর প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট গভর্নেন্সে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন।
শাহরিয়ার হাসান জিসান, ন্যাশনাল কনসালটেন্ট এটুআই, আইসিটি ডিভিশন, যুবদের জন্য সরকারী সুযোগ: প্রশিক্ষণ ও অনুদান নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ২০২১ এর চেয়ারপার্সন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা ইয়ুথ আইজএফ এর ইনফ্লুয়েন্সার হান্ট এর ফলাফল ঘোষণা করেন।
৮ জন বিভাগীয় ফোকাল বক্তব্য রাখেন ভূবন ফয়সাল আহমেদ, ঢাকা, সাজ্জাদ হোসেন, বরিশাল, মো. অশরাফুর রহমান পিয়াস, চট্টগ্রাম, মো. রিয়াদ হাসান বাদশা, রংপুর, শাহরিয়া দীপ, রাজশাহী, ইমরান হোসেন, খুলনা, সো. মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহ, সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন, সিলেট।
বিশেষ অতিথি: তাসনুভা আনান শিশির, অভিনেত্রী ও সংবাদ উপস্থাপক, এই উদ্যোগ তরুণ ও যুবকদের ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে।
মো. আব্দুল হক অনু, সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম বলেন এর আগের বছরগুলোতে বিআইজিএফ এর প্রোগ্রামে যুবদের জন্য একটি সেশন বরাদ্দ থাকতো। তবে এই প্রথমবারের মতো যুব ও যুব নারীদের জন্য বাংলাদেশে পূর্ণ যুব আইজিএফের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যুব ও যুব নারীরা এখন সক্ষমতা অর্জন করছে। তারা তাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।
রাশেদ মেহেদি, প্রেসিডেন্ট টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (টিআরএনবি), বিশেষ সংবাদদাতা দৈনিক সমকাল, ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। আমাদের একটি তথ্য সুরক্ষা আইন প্রয়োজন যা আমাদের যা নিয়ে কোন বিতর্ক থাকবেনা। আমাদের মিস ইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন ও ফেইক নিউজ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যুব ও যুব নারীদের আরো দায়িত্ব নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে।
এ এইচ এম বজলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) উল্লেখ করেন, বিআইজিএফ জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান সংরক্ষণের জন্য ইন্টারেনট গভর্নেন্স নিয়ে সরকার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে। এই প্রোগ্রামটি যুবসমাজ এর, যুবসমাজের দ্বারা এবং যুব সমাজের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যুবকদের এবং তরুণ প্রজন্মকে একটি শক্তিশালী ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা তাদের ক্ষমতায়ন করা, তাদের কণ্ঠস্বর জোরালো করা এবং নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার জন্য কাজ করছে। ডিজিটাল সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য, যুবকদের ক্ষমতায়ন, জ্ঞানবৃদ্ধি এবং ক্ষমতাশীলদের প্রভাবিত করার জন্য আপস্কিলিং, ডিস্কিলিং এবং রিস্কিলিংয়ের জন্য কাজ করা উচিত।
হাসানুল হক ইনু, এমপি, চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি বলেন বিআইজিএফ-বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেস ফোরামের উদ্যোগে গতকাল ও আজ দুইদিনব্যাপী এর সমাপনী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে এই ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ৩২ জন বক্তা হিসেবে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সারাদেশ থেকে ১৫০ এর বেশি অংশগ্রহণকারী এতে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন আমরা এখন ডিজিটাল পরস্পর-নির্ভরশীলতা (ইন্ডিপেন্ডেন্স) পর্যায়ে। এখানে সব মহল স্বীকার করেছেন যে, ইন্টারনেটের স্থিতিশীলতা, নির্ভরযোগ্যতা, টেকসই মজবুত অবস্থা দরকার। (সিকিউরিটি, স্ট্যাবিলিটি, রোবাস্টনেস, রেজিলেন্স এন্ড ফাংশনস)
অপরদিকে এটাও সবাই স্বীকার করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন যে, আইসিটি ও ইন্টারনেটকে অপব্যবহার করে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনিরাপত্তা করা, মানবাধিকার লংঘন করা এবং সরকার-প্রশাসন ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক মহলও জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্বার্থ বিঘিœত করছে। তাই এরকম পরিস্থিতিতে সামনে এগুতে হলে “ডিজিটাল শান্তি পরিকল্পনা” দরকার। দরকার “ডিজিটাল পরস্পর-পরস্পর নির্ভরশীলতা”। যা বৈশ্বিক-আঞ্চলিক-জাতীয় পর্যায় ভিত্তিক হতে হবে। এর জন্য ডিজিটাল টেকসই করা পরিকল্পনা ও ডিজিটাল মানবাধিকার পরিকল্পনা ইমার্জিং টেকনোলজির-আনার পরিকল্পনা। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ ও অর্থনীতি সবার জন্য গড়তে হলে, তাই ইন্টারনেট হতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা বিধানে, মানবাধিকার নিশ্চিতে ফেয়ার ডিজিটাল বাজারে উদ্যোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতের কার্যকরী হাতিয়ার।
এসব লক্ষ্য কার্যকর করতে, আমাদের একমত হতে হবে ইন্টারনেট এর সেফটি এবং সিকিউরিটি প্রসঙ্গে এবং অপরদিকে ডিজিটিাল যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ব্যবহারকারীদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। সেফটি, সিকিউরিটি ওপ্রাইভেসি প্রসঙ্গে তাই ডিজিটাল জগত-ডিজিটাল জগতে বিচরণকারী মানুষদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলা এবং জাতীয় চুক্তি করতে হবে। যাতে ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা থাকে, টেকসই ডিজিটাল উন্নয়ন হয় এবং সব অংশীজন মানুষের অধিকার সুরক্ষা হয়।
এসব নীতিগত বিষয় সামনে নিয়ে এমুহুর্তে দেশের বিকাশমান ডিজিটাল সমাজকে আরো বেগমান ও কার্যকর করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ইন্টারনেট অধিকার-মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি; মৌলিক অধিকার হিসাবে বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। সাশ্রীয় মূল্যে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত জরুরী ভিত্তিতে করা। ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্ট ফোন তথা এনড্রয়েড ফোন নিশ্চিত করতে এন্ড্রয়েড ফোনের উপর সব ট্যাক্স প্রত্যাহার করা।
ফ্রিজ, টিভিসহ যন্ত্রপাতি সহজ ভিত্তিতে কেনা বেচা হয়, তাই এন্ড্রয়েড ফোন ও কিস্তিতে কেনা-বেচার পদ্ধতি চালু করা। স্থানীয় সরকার সে লক্ষ্যে কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখবে। ব্রডব্যন্ড সংযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার এ বিষয়ে তদারকি করা দরকার।
তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার লেখা-আয়ত্ব করার জন্য উপজেলা-জেলায় কার্যকর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জরুরী ভিত্তিতে গড়া, এই সব প্রশিক্ষণ দায়সারা গোছের না করে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রশিক্ষণ চালানো দরকার। তথ্য সুরক্ষা (ডাটা প্রটেকশন এক্ট) আইন এবং ই-কমার্স জরুরি ভিত্তিতে করা।