সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন মাঠ কাঁপালেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন ২৮ জুলাই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা বিপত্তি। নির্বাচন হবে কি হবে না তা নিয়ে নানা গুজব রটছে এলাকায়। এ কারণে অনেকটা বিব্রত ভোটাররা। এরই মধ্যে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক অভিযোগ তুলেছেন প্রচারণায় বাধা ও হুমকি দেওয়ার। এরই মধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসরাইল হোসেন মারা গেছেন। সব মিলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এত কিছুর পরও নির্বাচনের সর্বশেষ প্রচারণায় সরগরম এলাকা। রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ কাঁপিয়েছেন নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে।

দুপুরে সিলেট পৌঁছান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। বিকালে আসনটির কয়েকটি এলাকায় সমাবেশে বক্তব্য দেন তারা।

সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থনে বালাগঞ্জে এক জনসভায় যোগ দেন তারা। বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এই জনসভায় মানুষের ঢল নামে। জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২৫ জন। শেখ হাসিনা হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কারণ হাবিবের মধ্যে এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন আছে। সে শেখ হাসিনার আদরের দুলাল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তাই শেখ হাসিনার প্রার্থী হাবিবকে বিজয়ী করতে হবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি হাবিবকে দিয়ে এই এলাকার উন্নয়ন করাব।’

বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুরের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে সিলেট-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘তরুণরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রচারণায় গিয়ে যেমন বিগত দিনের উন্নয়ন দেখেছি, তেমনি মানুষের কষ্টও দেখেছি। নান্দনিক-আধুনিক সিলেট-৩ আসন উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য।’ জনসভায় প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

বালাগঞ্জের সমাবেশ শেষে রাতে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নৌকার প্রার্থী হাবিবের পক্ষে পুরো নির্বাচনি এলাকায় দিনভর সভা, সমাবেশ করে।

শুধু নৌকার প্রার্থী নয়, অন্য প্রার্থীরাও এদিন বেশ তৎপর ছিলেন। জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক ভোট চেয়ে জাপার পুরনো দুর্গ উদ্ধারের আহ্বান জানান এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রচারের শুরু থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি সামনে আনেন এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ তোলেন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। রোববার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নিজের প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ভোটাররা ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবে না। আরেকটি ভোটারহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে ষড়যন্ত্র চলছে।’

এদিন প্রচার চালান সাবেক এমপি ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মোটর গাড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। তার সঙ্গে দলের নেতারা না থাকলেও অনেক কর্মী-সমর্থক ছিলেন। প্রচারকালে তিনি বাড়ি বাড়ি গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এই নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নাটকীয় নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে সব কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার জন্য নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করে বিবৃতি দিয়েছে জেলা যুবদল। এর পরও কোনো নেতাকর্মী প্রচারে সম্পৃক্ত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এই আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া। ডাব প্রতীক নিয়ে প্রচার চালান তিনি।

এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যে ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর সুপ্রিমকোর্টের ৫ আইনজীবী আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। তারা হলেন মুজাহিদুল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, জোবায়দুর রহমান, জহিরুল ইসলাম এবং মুস্তাফিজুর রহমান। করোনা সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে ২৮ জুলাই উপ-নির্বাচন স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে নোটিশে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে এমন হুলুস্থুল কাণ্ডের মধ্যেই করোনায় মারা গেছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসরাইল হোসেন। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ৩ জুলাই তার স্থলে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ১১ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে এই আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এ কারণে আসনটি শূন্য হয়।

সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আইনি নোটিশের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। জাপার প্রার্থী আতিকের প্রচারে বাধা ও হমকির ব্যাপারেও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে তিনি (আতিক) কয়েকটি কেন্দ্রের ব্যাপারে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর