কিশোরগঞ্জে ফারজানা আক্তার নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কক্ষ পরিদর্শকের পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জ মানবাধিকার ফোরামের সদস্য সংগঠনগুলোর পক্ষে সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার লুনা, অ্যাডভোকেট জহুরা খাতুন তামান্না, পপি প্রতিনিধি বেলী বদন তৈয়বা, তানিয়া ইসলাম, ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গোলসান আরা বেগম, কামরুন্নাহার এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা শাখার সভানেত্রী সুলতানা রাজিয়ার স্বাক্ষরে দেয়া স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্র কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গত ১ মার্চ পরীক্ষার্থী ফারজানা আক্তারের মা আকলিমা আকবর এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার্থী ফারজানা আক্তার গণিত পরীক্ষা শেষে কক্ষ থেকে বের হয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে হাসাহাসি করায় ক্ষিপ্ত হন কক্ষ পরিদর্শক নাসিমা আক্তার। এ সময় ফারজানাকে ডেকে নিয়ে তিনি গালিগালাজ করেন এবং তার প্রবেশপত্র চান।
পরীক্ষার্থী ফারজানা এতে ভীত হয়ে প্রবেশপত্র না দিলে পেছনের পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র নিয়ে রোল নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে ফারজানার উত্তরপত্র লেখা খাতা বের করেন। খাতাটি দীর্ঘক্ষণ প্রত্যক্ষ করে ফারজানাকে গণিত বিষয়ে নিশ্চিত ফেল করানোর হুমকি দেন। বিষয়টি সহপাঠীরা ফারজানার বাবা এম এ আকবর খন্দকারকে জানালে তিনি পরিদর্শক নাসিমা আক্তারের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে কথা বললে নাসিমা আক্তার পরীক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এ নিয়ে পরীক্ষার্থীর বাবা কেন্দ্র সচিব এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীরের সাথে সাক্ষাৎ করে পরীক্ষার উত্তরপত্র লেখা খাতায় কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর বিষয়টি এড়িয়ে গেলে পরীক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের দুঃশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। ফলে গণিত বিষয়ের ফলাফল নিয়ে পরিবারটি অনিশ্চয়তায় ভুগছে। এর জের ধরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান পরীক্ষা দেওয়ার একপর্যায়ে ফারজানা পরীক্ষা কেন্দ্রেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জ্ঞান হারায়। পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্মারকলিপিতে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
তবে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর জানান, ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষ করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। পরে অন্তত ১০ মিনিট পর এসে দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শকের কাছে পুনরায় তার উত্তরপত্র লেখা খাতাটি ফেরত চায়। এ সময় কক্ষ পরিদর্শক নাসিমা আক্তার পুনরায় খাতা দেয়া যাবে না জানালে পরীক্ষার্থী ফারজানা তাকে গালি দেয়। কক্ষ পরিদর্শক গালি দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই পরীক্ষার্থী তার বান্ধবীকে গালি দিয়েছে বলে জানায়। কক্ষ পরিদর্শক নাসিমা পরীক্ষার্থী ফারজানাকে ফেল করানোর কোন ধরনের হুমকি দেননি জানিয়ে শাহনাজ কবীর বলেন, বিষয়টির ওখানেই শেষ হলেও তার অভিভাবক আমার কাছে এসে এ ব্যাপারে কথা বলেন। এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থীর বাবাকে আশ্বস্ত করার পর তিনি চলে যান। এখন নানা অবান্তর অভিযোগ করে পরিস্থিতি ঘোলা করার যে অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে, তা দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।