হুট করে কর্মী ছাটাই করে বিক্ষোভের মুখে পড়ে দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক এখন নানা ভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে কর্মীদের তাড়াতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, ‘দাঙ্গা ও ভাঙচুরের মতো কল্পিত অভিযোগে শোকজ বা কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান থেকে শুরু করে হুট করে ল্যাপটপ সিজ করে নেয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।’
তাদের অভিযোগ, ‘বহুজাতিক ভিম্পলকমের বাংলাদেশী সাবসিডিয়ারি বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা ছিল রিস্ট্রাকচারিং বা পুনর্গঠনের নামে বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাটাই। ডিজিটাল রুপান্তরের নামে বিপুল সংখ্যক কর্মীদেরকে অযোগ্য ও অদক্ষ ঘোষণা করে তিন চার মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করে দেয়া। কিন্তু এই ছাটাই কার্যক্রম শুরু করার আগেই বাংলালিংকের কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে ফেললে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় বাংলালিংক ম্যানেজমেন্ট। বলা যায়, পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত একজন সিনিয়র কর্মীকে ছাটাই করে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে যায় তারা। এসময় ট্রেড ইউনিয়নের একজন সংগঠককে ডেকে নিয়ে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে ইন্টারোগেট করানোর ফলে তাকে মারাত্বক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পুরো ঘটনা গণমাধ্যমে চলে আসলে সারা দেশে এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এসময় ট্রেড ইউনিয়কে দুর্বল করার জন্য ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম বা ভিএসএস ঘোষণা করা হয়।’
‘কিন্তু প্রাথমিকভাবে ভিএসএস এ পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায়, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও লাইন ম্যানেজারদের মাধ্যমে কর্মীদেরকে ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়। কর্মীদেরকে বলা হয়, ভিএসএস একটা সুযোগ- যদি সময় থাকতে তারা এই সুযোগ গ্রহণ না করে তাহলে, ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে- কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাদের চাকরি হারাতে হবে। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কর্মীদেরকে বার বার এই ভাবে চাপ দেয়া হয় স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে দেয়ার জন্য। কর্মীদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, যারা ভিএসএস এর জন্য আবেদন করেছেন, তাদের বেশিরভাগই এই ভয়ভীতি ও অনিশ্চয়তার কারণেই করেছেন’-উল্লেখ করে সংগঠনটি।
‘কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করার জন্য বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের আরেকটি উপায় হলো শোকজ বা কারণ দর্শাও নোটিশ। অস্বচ্ছ ভাবে, কোন কারণ না দেখিয়ে একজন কর্মী ছাটাইয়ের প্রতিবাদে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চিফ টেকনিক্যাল অফিসার বা সিটিও কে ঘেরাও করার ঘটনাকে উপলক্ষ করে বেশ কয়েকজন কর্মীকে শোকজ বা কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা শোকজ নোটিশ এ তাদেরকে কতগুলো মিথ্যা ও কল্পিত অভিযোগে কেন আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভাঙচুর করা, রায়টের পরিস্থিতি তৈরী ইত্যাদি। সকলেই জানেন, গণমাধ্যমেও এসেছে- ঐ রাতে কি ঘটনা ঘটেছিল। কর্মীরা স্বত:স্ফুর্ত ভাবে বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয় টাইগার ডেন এর ভেতরে জমায়েত হয়ে সেখানে উপস্থিত সিটিও এর কাছে কর্মী ছাটাইয়ের কারণ জানতে চায় এবং না জানা পর্যন্ত স্থান ত্যাগে অস্বীকৃতি জানায়। এই সময় চাকরিচ্যুত কর্মীর সহকর্মীরা, আত্মীয় ও শুভাকাংক্ষিরা অফিসের বাইরে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে; রায়ট বা দাঙ্গা ও ভাংচুরের মত কোন ঘটনাই সেদিন ঘটেনি। কল্পিত অভিযোগে কেন শাস্তি দেয়া হবে না ধাচের নোটিশ যে আসলে কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই দেয়া হয়েছে তা পরিস্কার। এই ভিএসএস কর্মসূচী চলাকালীন সময়ের মধ্যেই শোকজ নোটিশের উদ্দেশ্য আরো পরিস্কার হয়ে যায় যখন দেখা গেল- শোকজ পাওয়া কর্মীদের কয়েকজন আতংকিত হয়ে ভিএসএস এর আবেদন করার পর তাদের শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘কর্মীদের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য বাংলালিংক ১লা মার্চ থেকে নতুন এটেন্ডেন্স পলিসি চালু করেছে। এই এটেন্ডেন্স পলিসি অনুসারে কোন কর্মী সকাল ৯ টা থেকে ৫টা এই সময়ের ভেতরে কোন ভাবেই বাইরে যেতে পারবেনা, এমনকি কর্মীদের আশংকা ব্যাক্তিগত ছোটখাট কাজ যেমন অফিসের নিকটস্থ ব্যাংকের সাথে লেনদেন ইত্যাদি কারণেও যদি কোন কর্মী ঐ সময়ে অফিসের বাইরে যায় কিংবা অফিসের সামনে মানবন্ধন বা বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে তাহলে সেটাকে হয়রানির অযুহাত হিসেবে ব্যাবহারের জন্যই এই অদ্ভুত এটেন্ডেন্স পলিসি করেছে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ।’
এদিকে কর্মী হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে বাধা দানের অভিযোগে বাংলালিংক এমপ্লায়িজ ইউনিয়নের শ্রম আদালতে করা মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালত ভিএসএস কার্যক্রম সহ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য কর্মীদের চাকুরিচ্যুতি, বদলি, সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত ও বেতন বন্ধ করার সকল কার্যক্রমের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ ও জারি করেন আদালত।
এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতারা বলেন, ‘আমরা পরিস্কার বলতে চাই, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা কম্প্লায়েন্স ভঙ্গের কোন অভিযোগ থাকলে স্বচ্ছতার সাথে তার তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। কিন্তু শুধু মাত্র ট্রেড ইউনিয়ন করবার জন্য যদি কাউকে হয়রানি করা হয়, যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অস্বচ্ছভাবে কাউকে ছাটাই করার চেষ্টা করা হয়, যদি কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করার জন্য কমপ্লায়েন্স ইস্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন তা প্রতিরোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’