করোনা নিয়ন্ত্রণে কারফিউ কোনো সমাধান হবে না: ফখরুল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা নিয়ন্ত্রণে কারফিউ কোনো সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার দুপুরে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় পরামর্শ কমিটির কারফিউ জারির পরামর্শ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করি, কারফিউ জারিটা কোনো সমাধান নয়। এই লকডাউনেও যদি আপনি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারেন এবং সেখানে যদি তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারেন সেখানে ওই অপরিকল্পিত লকডাউনও তো সঠিক সমাধান আনতে পারবে না। আমাদের দেখেন পর পর যে লকডাউনগুলো হয়েছে, সরকারি ছুটি, লকডাউন, কঠোর লকডাউন- আমরা কিন্তু সেই ভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করা দরকার, সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্ব, সেই দূরত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব হয় নাই। লকডাউনে কি দেখা যাচ্ছে? মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে, বলা যায় যে, অনেকে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষ তারা কোনো রকমের সহযোগিতা পাচ্ছে না। ইনফরমাল সেক্টর তো এমনিতেই তারা ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে কাজ করে। দুইবার লকডাউনের ফলে এই ক্ষুদ্র মানুষগুলো তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে, পথে বসে গেছে। আমি বৃটেনের খবর জানি, যুক্তরাষ্ট্রের খবর জানি, যারা ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট চালান, ইনফরমাল সেক্টর যেগুলো আছে এরা কিন্তু সকলেই আগেই প্রণোদনা পেয়ে গেছে।

ঢাকার সিভিল সার্জন জেলার সব হাসপাতালে সাংবাদিকদের করোনা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দিতে যে সার্কুলার জারি করেছেন তার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ধরনের সার্কুলার প্রমাণ করে যে, তারা (সরকার) প্রকৃত তথ্য গোপন করছে এবং করতে চায়। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকার প্রকাশিত সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। এই ধরনের তথ্য গোপনের প্রচেষ্টা স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র পরিপন্থি।
নারায়ণগঞ্জের ‘হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার ব্রিগেডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাটি হত্যার পর্যায়ে পড়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কল-কারখানার নির্মাণ মান, পরিবেশ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি না করার কারণেই এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেডের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ২৭ ঘণ্টা যাবৎ আগুন নেভাতে না পারা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ জন শিশু-কিশোর ও মহিলা শ্রমিকদের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার চরম অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
‘সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, সেই আকুল আবেদনের মধ্যে বলা হয়েছে যে, কি পরিমাণ টাকা তারা করোনায় ব্যয় করছেন। একটা টেস্টের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যয় করছেন এবং তারা যে হিসাব দিয়েছেন তাতে এই কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছেন। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, কোথাও কোনো রকমের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, সিলিন্ডার নেই, বেড নেই-এই যে চরম অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি। যার ফলেই আজকে করোনা পরিস্থিতি আক্রমণাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে, একে সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আপনি জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নিচ্ছেন, জনগণের কাছ থেকে সমস্ত ভ্যাট নিচ্ছেন অথচ আপনি জনগণের জন্য কোনো ব্যয় করছেন না। কিসে ব্যয় করছেন? মেগা প্রজেক্টে ব্যয় করছেন যেটাতে এই মুহূর্তে দেশের প্রান্তিক মানুষগুলোকে বাঁচানোর কোনো পথ নেই। এখন তাদেরকে না বাঁচানো গেলে অন্যথায় সত্যিকার অর্থেই তারা দারিদ্র্যের নিম্নস্তরে নেমে যাবে- শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
‘একলা চলো’ নীতিতে ওরা বিশ্বাসী’
করোনা মোকাবিলায় বিএনপি’র দেয়া আপদকালীন কমিটি গঠনসহ ৫ দফা প্রস্তাব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনারা সুনির্দিষ্টভাবে বলুক কোনটা কোনটা বাস্তবায়ন করেছেন। চর্বিত চর্বণ তো প্রতিদিন উনারা করছেন। তাদের সমস্যাটা হচ্ছে যে, তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চান না। আমরা শুধুমাত্র সমালোচনা করি না, পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও দেই। এই যে তাদের একলা চলো নীতি, দুর্নীতি করো নীতি, লুটপাট করো নীতি- এটাই তো এই দেশটাকে, এই জাতিকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ওয়ার্ড পর্যায় কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আবার ওয়ার্ড কমিটিতে দুর্নীতি শুরু হবে। ওখানে টাকা-পয়সা ভাগ করে নেবে আর কি। আমরা মনে করি এটা ফিজিবল না। আমরা বলেছি যে, সরকারের যে হাসপাতালগুলো আছে সেগুলো ইক্যুইপ্ট করুক, সেই হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়াক, ডাক্তার বাড়াক, সেই হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করুক, আইসিইউ বেড রাখুক তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এমন তো না যে, সমস্যা অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে- তাতো না। হাসপাতালগুলোতে সুবিধা বাড়ালে মানুষ চিকিৎসাটা নিতে পারবে আর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করবে কি জন্য? কারণটা কী?
‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প’ নামের আড়ালে উপহারের ঘর নির্মাণে ‘হরিলুট’ চলছে উল্লেখ করে অবিলম্বে দুর্নীতির এই লোক দেখানো প্রকল্প বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর