ড.গোলসান আরা বেগমঃ করোনা তুই তো সুপার পাওয়ারের খেলা খেলছিস।তোর মনে দয়া মায়া,ভালোবাসা বা প্রেমবোধ নেই।তুই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে গলা টিপে হত্যা করছিস। ৯জুলাই ২০২১ সালে বাংলাদেশ ২১২ জনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস দৃস্টি সীমানার বাইরে। তুই নিজেই তো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির ফুটবল। সারা পৃথিবীতে তোর হিংস্র আদিপত্য। জানিস তো ফুটবল প্রেমি গ্লোবাল ভিলেজের সকল মানুষ অপেক্ষা করছে ১১ জুলাই ২০২১সালে ব্রাজিল বনাম আর্জেটিনা এর ফাইনাল খেলা দেখার জন্য। টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় দলের সার্পোটারদের মাঝে। চায়ের দোকানে,বারে, রসগুজ্ঞনের আসরে চলছে তর্কের লড়াই। কেউ কেউ হার জিতের স্বপ্নেও আছে মেথে।করোনা তুই কোন দলের পক্ষে অবস্থান নিবে।মানুষকে কি রেহাই দিবে না।
পাঁচ বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্টিত হয়।এবার কোপা অ্যামেরিকায় খেলাটি চলছে। বহু ফুটবল দলকে হারিয়ে বিশ্ববিখ্যাত এই দুইটি দল মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। জানি না বিশ্বকাপ,সোনার বুট,,জয়ের শিরোপা কার ঘরে যাবে। আমি ব্রাজিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি কবিতা লিখে ফেইজ বুক ফেইজে ইতি মধ্যেই পোষ্ট দিয়েছি। তাতে ব্রাজিলের সার্পোটাররা খুশী হয়ে অভিবাদন জানিয়েছে। অপরপক্ষে আর্জেটিনার সার্পোটাররা করেছে গালমন্দ। দেখি কবিতাটি কারো পছন্দ হয় কিনা।
ব্রাজিল সেরা
আর্জেন্টিনা হেরে গেলে,ব্রাজিলের কি হবে
স্বপ্ন ভঙ্গ করে,সেওকি আস্তকুঁড়ে যাবে
আমরা ব্রাজিল সেনা,শক্ত মোদের মনোবল
শিরোপা জয়ে থাকবো অনড় অবিচল।
ফুটবল রাজা ব্রাজিল,সকল দলের সেরা
করবো বিশ্বকাপ জয়,ব্রাজিল ভক্তরা
উড়াও জয়ের পতাকা,গাও বিজয়ের গান
আমাদের প্রিয় দল,করবে শিরোপা দান।
ম্যাজিকের মত খেলা,দেখতে যদি চাও
ব্রাজিলের খেলা দেখতে,এক্কুনি বসে যাও
উত্তেজনা উৎকন্ঠায় গোল করে বার বার
ব্রাজিলই সেরা খেলা বিশ্বকে দেয় উপহার।
করোনা তুই জানিস বাংলাদেশের সার্পোটাররা সাঙ্গাতিক ভাবে কতো সেনসেটিভ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা নিয়ে। তারা দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, পাড়া,মহল্লা এমন কি বাড়ীতে বাড়িতে পছন্দের দলের পতাকা ইত্তোলন করে। তাছাড়া দলীয় গেঞ্জি পড়ে ঘুরে বেড়ায়, ছবি তুলে ফেইজ বুক ফেইজে পোষ্ট দিয়ে জয়োল্লাস করে। নেমে আসে সবার মনে আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাতম। শিশুরাও না বুঝেই নাচতে থাকে আনন্দে।
কেউ তর্ক কথায় চরম উত্তেজনায় পৌঁছে যায়।পারে তো প্রতিপক্ষের মাথায় ভাঙ্গে কাঁঠাল বা ছুঁড়ে ইট পাটকেল।আহারে একেই বলে যৌবনের উদ্দ্যামতা। কিন্ত ভয়াবহ করোনার জন্য আনন্দের প্রকৃত নির্যাস তুলে নিতে পারছে না মাথায়।
ইতিমধ্যেই জানা গেছে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎ পিষ্ট হয়ে মারা গেছে একজন।চলছে কে কত বড় লম্বা চওড়া দলীয় পতাকা উড়াতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা। খেলা চলা কালিন সময়ে কেউ কেউ আবেগে আপ্লুত হয়ে হার্ট এটাকে মারা যাবে। কেউ বা তার পছন্দের দল হেরে গেলে নিজের অজান্তেই লাত্তি দিয়ে টিভি ভেঙ্গে ফেলবে। আবার এই খেলার উত্তেজনায় স্বামী স্ত্রীর তালাক দেয়ার খরবও বেরিয়ে আসবে। এ দিকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদরে দামচাইল বাজার এলাকায় ব্রাজিল সমর্থককে পিটিয়েছে প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আটারো কোটি জনগণের দেশ বাংলাদেশে এই ফুটবল খেলাকে নিয়ে চলে ঘরে ঘরে, ভাইয়ে ভাইয়ে,পিতা সন্তান,স্বামী স্ত্রীতে ভীষণ উত্তেজনা।
ওরে মানুষের মাংস খাদক করোনা, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সেরা প্লেয়ার বিশ্ব বিখ্যাত ফুটবলার নেইমার ও মেসিকে চিনিস। তোর সাথে দেখা হলে এক লাত্তি দিয়ে পাঠিয়ে দিতো মঙ্গল গ্রহে।,পৃথিবীকে করতো করোনা মুক্ত। পরমানবিক বোমার সত্বাধিকারী বিশ্বনেতারা তোর টিকিটা ছুঁইতে পারলে বোমা মেরে ভর্তা করে দিতো।করোনা তুই এতোই ক্ষুদ্র যে অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তোকে দেখতে হয়।তোর সাথে কোন মল্ল যুদ্ধ করা যাচ্ছে না। এর ফাঁকে তুইও করছিস বুক ফুলিয়ে আতংক বিস্তার। কেড়ে নিচ্ছিস মানুষের জীবন অসময়ে।
বিশ্বাকাপ ফুটবল খেলার উত্তেজনা বিশ্ববাসীকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষিক শক্তিতে যুক্ত করছে সামান্য হলেও সাহস,প্রেরণা। করোনার কারণে মানুষ চাকুরী চুত্য হচ্ছে,মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া, নিম্ন শ্রেনির মানুষের আয় রোজগার কমে যাওয়া, শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,শিশু- কিশোরা অসহনীয় গৃহবন্দি জীবন যাপন করছে, জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে নেমে আসছে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, ভয় আতংকে দিশেহারা মানুষ কি করবে, কোথায় নিরাপত্তা পাবে বুঝে ওঠতে পারছে না।অস্কফাম নামের একটি সংস্থা তাদের গবেষণা রিপোর্টে বলছে প্রতি ১ মিনিটে বিশ্বে ১১ জন ক্ষুধায়,৭জন করোনায় মারা যাচ্ছে(১০ জুলাই ২০২১,দৈনিক প্রথম আলো)।প্রতিদিন মৃত্যু ঝুকি মাথায় নিয়ে মানুষ ঘুমিয়ে পরে ও জেগে ওঠে ধরফর করতে করতে।এক ভয়াবহ অন্ধকার মানুষের জীবনকে তিতা,ফাংসে করে দিচ্ছে। হায় করোনা তুই কি মনুষ্য জীবনে শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে দিবে না?
ফিরে আসি খেলা প্রসঙ্গে,যে দিন খেলার আসর বসে, গ্লোবাল জগতে তৈরী হয় আনন্দের সেতু বন্ধন।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারকা খচিত বিভিন্ন পর্যায়ের সেলিব্রেটিরা, ফুটবল প্রেমিরা ছুটে যায় খেলার আসরে, খুব কাছে থেকে ও স্বচক্ষে খেলার মাধুর্য উপভোগ করতে। খেলার প্রাঙ্গন, খেলার মাঠ বর্ণিল লাইট, ফেন্টুন, ব্যানার, কারুকার্যতা দিয়ে করে উপভোগ্য ও আকর্ষণীয়। মানুষ প্রবেশ করে চোখ ধাঁধানো আনন্দ ঘণ জগতে। টিভির সামনে বসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগণ হারিয়ে যায় ফুটবল খেলার মাঠে গড়ানো খেলায়।যে দল জিতে, তাদের আনন্দের সীমা রেখা থাকে না।পরাজিতরা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফিরে। সার্পোটারদের অবস্থাও হয় একই রখম। হায় করোনা তুই এতো নির্দয় কেন হলে।মানুষের স্বপ্নের পৃথিবীকে কেন ভয়ের সাগরে নিক্ষেপ করলে।
পরিশেষে বলবো খেলা শেষে মানুষ যেমন মানুষের পাশে দাঁড়ায় সব কিছু যন্ত্রণা দুরে ঠেলে। করোনা তুই বহু সুপার পাওয়ারের খেলা খেলেছিস।এবার থামাও তোমার বেপরোয়া আচরণ।মানুষকে স্বস্থি দাও।বাঁচতে দাও বিশ্ব সৌরমন্ডলের অধিবাসীকে।
লেখকঃ কবি,সিনেট সদস্য,উপদেষ্টা সদস্য- বাংলাদেশ কৃষকলীগ।