ঢাকা ১১:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হায়রে নারী জাতির সম-অধিকারের বিড়াম্বনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
  • ২৯৩ বার
ড.গোলসান আরা বেগমঃ গত ১০ মে ২০২১ এ  গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শাহবাগ, ঢাকায় আমার লিখা বই জমা দিয়েছি সরকারি টেন্ডারের বিধি মোতাবেক। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাইব্রেরি সমূহে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন প্রকল্পে বই ক্রয় করবে সরকার। বই দুইটির শিরোনাম হলো ১। ৭১’এর দিন দিনান্ত ২।অমর কাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। সুচিন্তক প্রকাশন বই দুইটি প্রকাশনার দায়িত্বে রয়েছে।প্রকাশককে সঙ্গে নিয়ে করোনা মহামারীর ভয় আতংককে মোকাবেলা করে আমি নিজেই গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি বিরাট লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে লেখক বা প্রকাশক বই জমা দিচ্ছে।
২০০০ সাল থেকে লিখছি, বইও প্রকাশ করছি। কিন্তু বই বিক্রি করার কোন অভিজ্ঞতাই অর্জন করতে পারি নাই।এবারই প্রথম সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বইয়ের তালিকা জমা দিয়েছি।দেখা যাক আমার শ্রমে ঘামে রচিত বইয়ের মাধ্যমে  দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে মুজিবীয় আদর্শকে পৌঁছে দিতে পারি কি না।এর অাগে হায় বঙ্গবন্ধু এ কী করলাম, নারী তুমি পারবেই -এই শিরোনামে দুইটি বই গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ক্রয় করেছে। যার চেক পেয়েছি অাজকেই।  ফলে অামার লেখক জীবন স্বার্থক হলো,সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ বহু গুন বেড়ে গেলো।
গণগ্রন্থাগারের নীচতলায় বই জমা নেয়া হচ্ছে।আমি একটু এগিয়ে গিয়ে  কতৃপক্ষকে বললাম – নারীরা কি আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে বই জমা দিতে পারবে? প্রতি উত্তরে বললেন — নিয়ে আসেন। একটি মেয়ে বই হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো পুরুষদের ভেতরে লাইনে।আমার সাথে সেও নারীদের লাইনে দাঁড়িয়ে গেলো।একটু পর আরো একজন নারী লেখক এলো।আমরা বই জমা দিতে যাচ্ছি, এমন সময় কয়েকজন পুরুষ লেখক চিৎকার দিয়ে উঠলো। নারী বলে উনারা আগে কাজ করে চলে যাবে, তা হবে না। হৈ চৈ বাঁধিয়ে বসে। অনেক বাজে মন্তব্য করতে থাকে।
আমি তখন এগিয়ে গিয়ে বললাম — এখানে আমাদের সম-অধিকার জাহির করতে হবে কেন? ঘরে,বাইরে,নীতি,নৈতিকতায় কোথায় আছে সম-অধিকার। বেশ কিছুটা উচ্চ স্বরেই কথা বিনিময় করছিলাম।এমন সময় কতৃপক্ষের এক জন ছুটে এসে আমাকে থামালেন ও হাত থেকে বই তুলে নিয়ে জমা রিসিট ধরিয়ে দিলেন। সম-অধিকারের ছন্দপতন দেখে কষ্ট পেয়েছি,পাশাপাশি খুশী হয়েছি নিজের অধিকার রক্ষা করতে পেরে। কিন্তু পদে পদে আমরা নারীরা এভাবে কত লড়াই করবো?
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সেলুট জানাই।১৯৭২ এ জাতীয় সংবিধানে বঙ্গবন্ধুই নারী পুরুষে সম-অধিকার প্রতিষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত করছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। তা মানা হলে – সব চেয়ে বড় জায়গা জাতীয় সংসদে ৫০ % আসন থাকতো নারীর। এমনকি নারী সমাজের দাবী অনুযায়ী ৩৩% আসনও নারীর ভাগ্যে নেই।৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মাঝে ৫০টি সংরক্ষিত আসন দিয়েছে নারীকে। কোন নারী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে আসার বিধানও  আছে।
সংরক্ষিত আসনের নারীরা মনোনয়নের মাধ্যমে, পেছন দরজা দিয়ে, তৈল মর্দন করে বা অর্থের বিনিময়ে সাংসদ হয়।ফলে বহু অযোগ্য নারীরা ঢোকে যায় প্রবিত্র জাতীয় সংসদে।নারী সমাজ দাবি উত্থান করে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের ।তা হলে যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটবে।টাকা দিয়ে সাংসদ পাপুলের স্ত্রীর মতো নারীরা এ ধরনের অবৈধ রাস্তা পাবে না। স্থানীয় সরকার সমুহে যেমন ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা,জেলা পরিষদ,পৌরসভা সিটির্পোরেশন,পৌর সভা ইত্যাদি পর্যায়ে যদি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন হতে পারে,তা হলে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন হতে অসুবিধা কোথায়? এটা হলো নারী সমাজকে দাবিয়ে রাখার কৌশল সুত্র।আমি নিশ্চিত হয়ে ভবিষ্যত বাণী উচ্চারণ করছি — নারীর ক্ষমতায়ন যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে,অচিরেই এই আসনে নির্বাচন দিতে কতৃপক্ষ বাধ্য হবে,সে দিন বেশী দুরে নয়।
জাতিসংঘ প্রনীত সিডো সনদেও সম-অধিকার প্রতিষ্টার তাগিদ রয়েছে। জাতীর কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন -এ বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক নার। সেই অর্ধেক নারীর  বিড়াম্বনার খবর কেউ কি জানে না? সবাই জানে কিন্তু আমলে আনে না। বরং পদে পদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। সেই বর্ববর যুগের মত আবারো নারীকে পেছনমুখী স্রোতে ঠেলে দেয়ার নানা ফন্দিফিকির করে। হেফাজতে ইসলাম তো নারীর হাতে পায়ে শেকল পড়ানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।  ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করে বলছে — নারীকে চতুর্থ শ্রেণির বেশী পড়াশুনা করার প্রয়োজন নেই। সন্তান উৎপাদন করবে,স্বামীর সেবা করবে,ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। নারীরে চাকুরি করবে কেন?
গত কাল গিয়ে ছিলাম একটা ইফতার পার্টিতে, সেখানেও তুলছে নানা ফেৎনা। নারী পুরুষ এক সাথে ইফতারি করলে রোজা হালকা হয়ে যায়।আরো নানা কথা।অথচ হজ্জ করতে গিয়ে সেখানে এক লাইনে দাঁড়িয়ে নারী পুরুষে নামাজ পড়েছি। আজকাল প্রায় মসজিদে নারীদের জন্য নামাজ আদায় করার সুব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তো কোন ফেৎনা ওঠে না। ওয়াজ মাহফিলে নারীকে বকাবকি করতে না পারলে ওয়াজ মাহফিল প্রাণ পায় না বা শুদ্ধ হয় না। এ কি ধরনের আজব কথা।
আজকে গিয়েছিলাম ব্যাংকে টাকা ওঠাতে।সেখানে গিয়ে দেখি ই-য়া বড় লাইন। নারীরা পুরুষের ভেতরে দাঁড়িয়ে হিমশিম খাচ্ছে।এক দিকে গরম, করোনা আতংক, রোজার তেস্টা।আমি গাড়ি থেকে নেমেই ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে চলে চাই।আমাকে দাঁড়োয়ান আটকানোর চেস্টা করে। আমি বিরক্ত হয়ে বলি সরেন।ঢোকতে ঢোকতে বলি — এখানে সম-ধিকারের রক্ষণবেক্ষণ চলছে। আমার রাগান্নিত চেহারা দেখে এগিয়ে আসে পিয়নগুলো। তাড়াতাড়ি কাজ করে দিয়ে বিদায় দেয়। ঈদের বকশিশ ধরিয়ে দিয়ে অামিও রাগে কটমট করতে করতে বেরিয়ে আসি। দেখে এসেছি অনেক নারী লাইনে দাঁড়িয়ে এদিক সে দিক চোখ ঘুরাচ্ছে। এই হলো আমাদের নারী সমাজের সম-অধিকারের বিড়ম্বনা।
অথচ পৃথিবীর বহু দেশে নারী পুরুষে সম-অধিকারের বিষয়টি রয়েছে পাকাপোক্ত ও  সুপ্রতিষ্টিত।এড়িয়ে যাবার বা ফাঁকি দেয়ার সুষোগ নেই। বিশ্ব বিখ্যাত ধনাঢ্য ব্যক্তি বিলগেটসকে কে না চিনে। ২৭ বাছর দাম্পত্য জীবন পাড়ি দেয়ার পর সেই বিখ্যাত পরিবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। তারা তাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পদ স্বামী স্ত্রী সমভাবে বন্টন করে নিয়েছে। কারন সে দেশে নিয়ম ভঙ্গ করার অধিকার কারো নেই।
আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছদ হলে নারী তার গায়ের বস্ত্র ছাড়া কিচ্ছু পায় না।পেটের সন্তানও তার না।নারীর বাবার দেয়া যৌতুকের জিনিস পত্র রেখে অাসে স্বামীর ঘরে। কাবিন নামার টাকা পেতে হলে কোর্ট কাছারি ঘুরে পায়ের চেন্ডেল খুয়াতে হয় কয়েক জোড়া।তারপরও কেউ পায়, কেউ পায় না।
ভেবে দেখুন তো – মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া, মৃত স্বামীর সাথে জীবিত স্ত্রীকে কবর দেয়া, স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা– এসব কি নির্দয়,নিষ্টুর অমানবিক কাজ ছিলো না। ঐ সমস্ত  বিধি বিধানকে ঢলে পিষে ভর্তা করেছে সমাজ, সভ্যতার স্বস্তির পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনে। নারীকে তুলে এনেছে আলোর দোয়ারে।এখন নারী আঙ্গুল ঘুরায় আর সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষে সম-অধিকার চায়।অচিরেই তা প্রতিষ্টিত হবে। ভয়ের কারণ নেই ভালোবাসার বাহু বন্ধন প্রেমের কারণে অটুট থাকবে।
লেখকঃ কবি,সিনেট সদস্য-জাবি,উপদেষ্টা- বাংলাদেশ কৃষকলীগ।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হায়রে নারী জাতির সম-অধিকারের বিড়াম্বনা

আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
ড.গোলসান আরা বেগমঃ গত ১০ মে ২০২১ এ  গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শাহবাগ, ঢাকায় আমার লিখা বই জমা দিয়েছি সরকারি টেন্ডারের বিধি মোতাবেক। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাইব্রেরি সমূহে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন প্রকল্পে বই ক্রয় করবে সরকার। বই দুইটির শিরোনাম হলো ১। ৭১’এর দিন দিনান্ত ২।অমর কাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। সুচিন্তক প্রকাশন বই দুইটি প্রকাশনার দায়িত্বে রয়েছে।প্রকাশককে সঙ্গে নিয়ে করোনা মহামারীর ভয় আতংককে মোকাবেলা করে আমি নিজেই গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি বিরাট লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে লেখক বা প্রকাশক বই জমা দিচ্ছে।
২০০০ সাল থেকে লিখছি, বইও প্রকাশ করছি। কিন্তু বই বিক্রি করার কোন অভিজ্ঞতাই অর্জন করতে পারি নাই।এবারই প্রথম সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বইয়ের তালিকা জমা দিয়েছি।দেখা যাক আমার শ্রমে ঘামে রচিত বইয়ের মাধ্যমে  দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে মুজিবীয় আদর্শকে পৌঁছে দিতে পারি কি না।এর অাগে হায় বঙ্গবন্ধু এ কী করলাম, নারী তুমি পারবেই -এই শিরোনামে দুইটি বই গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ক্রয় করেছে। যার চেক পেয়েছি অাজকেই।  ফলে অামার লেখক জীবন স্বার্থক হলো,সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ বহু গুন বেড়ে গেলো।
গণগ্রন্থাগারের নীচতলায় বই জমা নেয়া হচ্ছে।আমি একটু এগিয়ে গিয়ে  কতৃপক্ষকে বললাম – নারীরা কি আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে বই জমা দিতে পারবে? প্রতি উত্তরে বললেন — নিয়ে আসেন। একটি মেয়ে বই হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো পুরুষদের ভেতরে লাইনে।আমার সাথে সেও নারীদের লাইনে দাঁড়িয়ে গেলো।একটু পর আরো একজন নারী লেখক এলো।আমরা বই জমা দিতে যাচ্ছি, এমন সময় কয়েকজন পুরুষ লেখক চিৎকার দিয়ে উঠলো। নারী বলে উনারা আগে কাজ করে চলে যাবে, তা হবে না। হৈ চৈ বাঁধিয়ে বসে। অনেক বাজে মন্তব্য করতে থাকে।
আমি তখন এগিয়ে গিয়ে বললাম — এখানে আমাদের সম-অধিকার জাহির করতে হবে কেন? ঘরে,বাইরে,নীতি,নৈতিকতায় কোথায় আছে সম-অধিকার। বেশ কিছুটা উচ্চ স্বরেই কথা বিনিময় করছিলাম।এমন সময় কতৃপক্ষের এক জন ছুটে এসে আমাকে থামালেন ও হাত থেকে বই তুলে নিয়ে জমা রিসিট ধরিয়ে দিলেন। সম-অধিকারের ছন্দপতন দেখে কষ্ট পেয়েছি,পাশাপাশি খুশী হয়েছি নিজের অধিকার রক্ষা করতে পেরে। কিন্তু পদে পদে আমরা নারীরা এভাবে কত লড়াই করবো?
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সেলুট জানাই।১৯৭২ এ জাতীয় সংবিধানে বঙ্গবন্ধুই নারী পুরুষে সম-অধিকার প্রতিষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত করছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। তা মানা হলে – সব চেয়ে বড় জায়গা জাতীয় সংসদে ৫০ % আসন থাকতো নারীর। এমনকি নারী সমাজের দাবী অনুযায়ী ৩৩% আসনও নারীর ভাগ্যে নেই।৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মাঝে ৫০টি সংরক্ষিত আসন দিয়েছে নারীকে। কোন নারী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে আসার বিধানও  আছে।
সংরক্ষিত আসনের নারীরা মনোনয়নের মাধ্যমে, পেছন দরজা দিয়ে, তৈল মর্দন করে বা অর্থের বিনিময়ে সাংসদ হয়।ফলে বহু অযোগ্য নারীরা ঢোকে যায় প্রবিত্র জাতীয় সংসদে।নারী সমাজ দাবি উত্থান করে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের ।তা হলে যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটবে।টাকা দিয়ে সাংসদ পাপুলের স্ত্রীর মতো নারীরা এ ধরনের অবৈধ রাস্তা পাবে না। স্থানীয় সরকার সমুহে যেমন ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা,জেলা পরিষদ,পৌরসভা সিটির্পোরেশন,পৌর সভা ইত্যাদি পর্যায়ে যদি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন হতে পারে,তা হলে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন হতে অসুবিধা কোথায়? এটা হলো নারী সমাজকে দাবিয়ে রাখার কৌশল সুত্র।আমি নিশ্চিত হয়ে ভবিষ্যত বাণী উচ্চারণ করছি — নারীর ক্ষমতায়ন যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে,অচিরেই এই আসনে নির্বাচন দিতে কতৃপক্ষ বাধ্য হবে,সে দিন বেশী দুরে নয়।
জাতিসংঘ প্রনীত সিডো সনদেও সম-অধিকার প্রতিষ্টার তাগিদ রয়েছে। জাতীর কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন -এ বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক নার। সেই অর্ধেক নারীর  বিড়াম্বনার খবর কেউ কি জানে না? সবাই জানে কিন্তু আমলে আনে না। বরং পদে পদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। সেই বর্ববর যুগের মত আবারো নারীকে পেছনমুখী স্রোতে ঠেলে দেয়ার নানা ফন্দিফিকির করে। হেফাজতে ইসলাম তো নারীর হাতে পায়ে শেকল পড়ানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।  ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করে বলছে — নারীকে চতুর্থ শ্রেণির বেশী পড়াশুনা করার প্রয়োজন নেই। সন্তান উৎপাদন করবে,স্বামীর সেবা করবে,ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। নারীরে চাকুরি করবে কেন?
গত কাল গিয়ে ছিলাম একটা ইফতার পার্টিতে, সেখানেও তুলছে নানা ফেৎনা। নারী পুরুষ এক সাথে ইফতারি করলে রোজা হালকা হয়ে যায়।আরো নানা কথা।অথচ হজ্জ করতে গিয়ে সেখানে এক লাইনে দাঁড়িয়ে নারী পুরুষে নামাজ পড়েছি। আজকাল প্রায় মসজিদে নারীদের জন্য নামাজ আদায় করার সুব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তো কোন ফেৎনা ওঠে না। ওয়াজ মাহফিলে নারীকে বকাবকি করতে না পারলে ওয়াজ মাহফিল প্রাণ পায় না বা শুদ্ধ হয় না। এ কি ধরনের আজব কথা।
আজকে গিয়েছিলাম ব্যাংকে টাকা ওঠাতে।সেখানে গিয়ে দেখি ই-য়া বড় লাইন। নারীরা পুরুষের ভেতরে দাঁড়িয়ে হিমশিম খাচ্ছে।এক দিকে গরম, করোনা আতংক, রোজার তেস্টা।আমি গাড়ি থেকে নেমেই ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে চলে চাই।আমাকে দাঁড়োয়ান আটকানোর চেস্টা করে। আমি বিরক্ত হয়ে বলি সরেন।ঢোকতে ঢোকতে বলি — এখানে সম-ধিকারের রক্ষণবেক্ষণ চলছে। আমার রাগান্নিত চেহারা দেখে এগিয়ে আসে পিয়নগুলো। তাড়াতাড়ি কাজ করে দিয়ে বিদায় দেয়। ঈদের বকশিশ ধরিয়ে দিয়ে অামিও রাগে কটমট করতে করতে বেরিয়ে আসি। দেখে এসেছি অনেক নারী লাইনে দাঁড়িয়ে এদিক সে দিক চোখ ঘুরাচ্ছে। এই হলো আমাদের নারী সমাজের সম-অধিকারের বিড়ম্বনা।
অথচ পৃথিবীর বহু দেশে নারী পুরুষে সম-অধিকারের বিষয়টি রয়েছে পাকাপোক্ত ও  সুপ্রতিষ্টিত।এড়িয়ে যাবার বা ফাঁকি দেয়ার সুষোগ নেই। বিশ্ব বিখ্যাত ধনাঢ্য ব্যক্তি বিলগেটসকে কে না চিনে। ২৭ বাছর দাম্পত্য জীবন পাড়ি দেয়ার পর সেই বিখ্যাত পরিবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। তারা তাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পদ স্বামী স্ত্রী সমভাবে বন্টন করে নিয়েছে। কারন সে দেশে নিয়ম ভঙ্গ করার অধিকার কারো নেই।
আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছদ হলে নারী তার গায়ের বস্ত্র ছাড়া কিচ্ছু পায় না।পেটের সন্তানও তার না।নারীর বাবার দেয়া যৌতুকের জিনিস পত্র রেখে অাসে স্বামীর ঘরে। কাবিন নামার টাকা পেতে হলে কোর্ট কাছারি ঘুরে পায়ের চেন্ডেল খুয়াতে হয় কয়েক জোড়া।তারপরও কেউ পায়, কেউ পায় না।
ভেবে দেখুন তো – মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া, মৃত স্বামীর সাথে জীবিত স্ত্রীকে কবর দেয়া, স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা– এসব কি নির্দয়,নিষ্টুর অমানবিক কাজ ছিলো না। ঐ সমস্ত  বিধি বিধানকে ঢলে পিষে ভর্তা করেছে সমাজ, সভ্যতার স্বস্তির পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনে। নারীকে তুলে এনেছে আলোর দোয়ারে।এখন নারী আঙ্গুল ঘুরায় আর সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষে সম-অধিকার চায়।অচিরেই তা প্রতিষ্টিত হবে। ভয়ের কারণ নেই ভালোবাসার বাহু বন্ধন প্রেমের কারণে অটুট থাকবে।
লেখকঃ কবি,সিনেট সদস্য-জাবি,উপদেষ্টা- বাংলাদেশ কৃষকলীগ।