হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোথাও ভাসমান, কোথাও আবার পানির নিচে, কোথাও আলিশানভাব কোথাও আবার সাদামাটাভাবে উপস্থাপনা। রেস্তোরাঁ বা খাবার হোটেলের এমনসব বৈচিত্র বেশ অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গতানুগতিক ধারা থেকে বেড়িয়ে এসে অনেকেই ক্রেতা আকৃষ্ট করতে এমন নানান কিছু করেছেন। রিকশার আদলে বসার স্থান কিংবা মাটির পাত্রে খাবার পরিবেশন। কিছুটা ভিন্নতা তো এনে দিয়েছেই তাদের। তবে কবরস্থানে রেস্তোরাঁ তৈরির কথা চিন্তা করেছেন কখনো?
আহমেদাবাদের লাকি রেস্তরাঁ। পুরো রেস্তোরাঁটিই কবরস্থানে তৈরি। লাল দরওয়াজা এলাকায় অবস্থিত এই অদ্ভূত রেস্তোরাঁতে এই কারণেই বেশিরভাগ মানুষ খেতে আসেন। মৃত মানুষের সমাধির পাশেই খাবার পরিবেশন করা হয়। সমাধিগুলো খুবই যত্নসহকারে রাখা হয়। প্রতিদিন রেস্তোরাঁ কর্মীরা তা পরিষ্কার করে সাজিয়ে রাখেন।
লোভনীয় সব দক্ষিণী খাবারে সাজানো এই রেস্তোরাঁয় খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ভারতের আহমেদাবাদে। কয়েক দশক ধরে বন্ধ ছিল শতাব্দী প্রাচীন এই কবরস্থান। পরে সেই জায়গার মালিকের কাছ থেকে পুরো কবরস্থানটা কিনে নেন কৃষাণ কুট্টি। ভূতের ভয় তো দূরের কথা মালিক কৃষাণ মনে করেন কবরগুলোর জন্যই তার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে। খাবারের গুণমান ছাড়াও এখানে লোক আসার বড় কারণ ওই কবরগুলো।
তবে কবরগুলো কাদের তা তিনি নিজেও জানেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ষোড়শ শতকের কোনো এক সুফি সাধকের ভক্তদের কবর ওগুলো। ওই সুফির কবরও আছে কাছেই আর এক জায়গায়। তবে কবরস্থানে রেস্তোরাঁ করলেও কৃষাণ কবরগুলোর সরিয়ে ফেলা তো দূরের কথা বরং খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন সেগুলো। রোজ সকালে রেস্তোরাঁ খোলার আগে রেস্তোরাঁর কর্মীরা কবরগুলোতে নতুন চাদর পাতেন, ছড়িয়ে দেন তাজা ফুল। প্রতিটি কবরের চারপাশ গ্রিল দিয়ে সুন্দর করে বাঁধিয়েও দিয়েছেন কৃষাণ।
কবরস্থানের গুনে টানা ৫০বছর ধরে জমজমাট হয়ে চালু থাকা নিউ লাকি রেস্তোরাঁর এতই পসার বেড়েছে যে আগে যেখানে শুধু চা বিস্কুট আর মাখন টোস্ট বিক্রি হত এখন খদ্দের সামলাতে খুলতে হয়েছে দুটো বিভাগ। এক জায়গায় শুধু আগের মতো মালাইদার দুধ চা-বিস্কুট-টোস্ট পাওয়া যায়, আর এক জায়গায় চা-কফি-কোল্ডড্রিঙ্কের সঙ্গে দক্ষিণের সব মজাদার খাবার।
এখানে খেতে আসা মানুষজন এসব সমাধিগুলো কখনো অস্বাভাবিক মনে করে না। অনেকের মতে এখানে খেতে আসা মানুষগুলো ‘জীবন এবং মৃত্যুর অনুভূতি’ বুঝতে পারে।