ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের নাম জানার ইচ্ছে নেই কেন পুলিশের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬
  • ২৬১ বার

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে বসবাসকারী সব ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৭টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ‘ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম’ তৈরি করেছে ডিএমপি। তবে ১৭টি প্রশ্নের কোনোটিতে ভাড়াটিয়ার মায়ের নাম চাওয়া হয়নি।

মায়ের নাম থাকলে অপরাধী শনাক্তে পুলিশ আরেক ধাপ এগিয়ে থাকতো বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ভাড়াটিয়ার মায়ের নাম জানার ইচ্ছে পুলিশের নেই কেন?

২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে ডিএমপি। ভাড়াটিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইমেইল আইডি, ড্রাইভারের নাম, গৃহকর্মীর তথ্যসহ অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে কেবল মায়ের নামটি।

উন্নত দেশগুলোতে বাবার আগেই চাওয়া হয় মায়ের নাম। মায়ের পেশাও জানতে চাওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ চারটি দলিলে বাবার নামের পরই মায়ের নাম বসানোর ঘর রাখা হয়েছে।

বাবার নামের পাশাপাশি এই ফরমে মায়ের নাম থাকলে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে পুলিশের আরো সুবিধা হতো বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস সরকার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, যে কেউ ভুল তথ্য দিতে পারেন। ফরমটিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হলেও মায়ের নামটি বাদ পড়েছে।

ফরমে মায়ের নাম উল্লেখ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটি ডেটাবেজ তৈরিতে যেসব প্রয়োজনীয় তথ্য দরকার এর সবগুলোই চাওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে ভাড়াটিয়াদের এই তথ্যগুলো থাকলেই চলবে।

এছাড়াও পুলিশের এই নিবন্ধন ফরমটিতে তিন সন্তান এবং একজন গৃহকর্মীর তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনেকেরই তিনজনের বেশি সন্তান এবং একাধিক গৃহকর্মী থাকেন।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সব ভাড়াটিয়াকে নিজেদের তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরেও যদি কোনো ভাড়াটিয়া তথ্য না দেন, সেই ভাড়াটিয়া যদি কোনো অপরাধ করেন তাহলে বাড়িওয়ালাকেও সেই অপরাধের দায় নিতে হবে বলে বলা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন কমিশনার।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে রাজধানীতে কর্মরত বিট পুলিশরা। বর্তমানে রাজধানীর প্রতিটি থানায় তিন থেকে ৯টি বিটসহ সর্বমোট ২৮৭টি বিট এই কাজ করছে। প্রতিটি বিটের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)।

এদিকে বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের মঙ্গলবার একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। তার যুক্তি, একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট আইডির তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ সব তথ্যে নিয়ে পুলিশ কী করবে এবং একজন ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এসব ব্যক্তিগত তথ্যের মাধ্যমে পুলিশ কারো বিরুদ্ধে নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে জনস্বার্থে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠিয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মায়ের নাম জানার ইচ্ছে নেই কেন পুলিশের

আপডেট টাইম : ১০:৩৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে বসবাসকারী সব ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৭টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ‘ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম’ তৈরি করেছে ডিএমপি। তবে ১৭টি প্রশ্নের কোনোটিতে ভাড়াটিয়ার মায়ের নাম চাওয়া হয়নি।

মায়ের নাম থাকলে অপরাধী শনাক্তে পুলিশ আরেক ধাপ এগিয়ে থাকতো বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ভাড়াটিয়ার মায়ের নাম জানার ইচ্ছে পুলিশের নেই কেন?

২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে ডিএমপি। ভাড়াটিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইমেইল আইডি, ড্রাইভারের নাম, গৃহকর্মীর তথ্যসহ অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে কেবল মায়ের নামটি।

উন্নত দেশগুলোতে বাবার আগেই চাওয়া হয় মায়ের নাম। মায়ের পেশাও জানতে চাওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ চারটি দলিলে বাবার নামের পরই মায়ের নাম বসানোর ঘর রাখা হয়েছে।

বাবার নামের পাশাপাশি এই ফরমে মায়ের নাম থাকলে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে পুলিশের আরো সুবিধা হতো বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস সরকার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, যে কেউ ভুল তথ্য দিতে পারেন। ফরমটিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হলেও মায়ের নামটি বাদ পড়েছে।

ফরমে মায়ের নাম উল্লেখ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটি ডেটাবেজ তৈরিতে যেসব প্রয়োজনীয় তথ্য দরকার এর সবগুলোই চাওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে ভাড়াটিয়াদের এই তথ্যগুলো থাকলেই চলবে।

এছাড়াও পুলিশের এই নিবন্ধন ফরমটিতে তিন সন্তান এবং একজন গৃহকর্মীর তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনেকেরই তিনজনের বেশি সন্তান এবং একাধিক গৃহকর্মী থাকেন।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সব ভাড়াটিয়াকে নিজেদের তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরেও যদি কোনো ভাড়াটিয়া তথ্য না দেন, সেই ভাড়াটিয়া যদি কোনো অপরাধ করেন তাহলে বাড়িওয়ালাকেও সেই অপরাধের দায় নিতে হবে বলে বলা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন কমিশনার।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে রাজধানীতে কর্মরত বিট পুলিশরা। বর্তমানে রাজধানীর প্রতিটি থানায় তিন থেকে ৯টি বিটসহ সর্বমোট ২৮৭টি বিট এই কাজ করছে। প্রতিটি বিটের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)।

এদিকে বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের মঙ্গলবার একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। তার যুক্তি, একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট আইডির তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ সব তথ্যে নিয়ে পুলিশ কী করবে এবং একজন ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এসব ব্যক্তিগত তথ্যের মাধ্যমে পুলিশ কারো বিরুদ্ধে নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে জনস্বার্থে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠিয়েছি।