ঢাকা ১০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝরে গেলো গোলাপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
  • ২১৫ বার

শরীফ সাদীঃ 

বন্ধু, তুমি সুবাসিত গোলাপ।

মিষ্টি-মধুর হাস্য-রসের গোলাপ।

তুমি অসময়ে চলে গেলে প্রত্যাশিত ঠিকানায়,জান্নাতে।

চিরতরে চলে যাওয়ার আগে তোমাকে নিয়ে এ কেমন নির্মম রাজনৈতিক খেলা খেলেছে কতিপয় তষ্কর নেতা?

কি পাষাণ ওরা, তোমাকে মৃত্যু শয্যায় রেখে তোমার হাতের ছাপ নিলো।

তোমার অচেতন মন কি বন্ধুর অযৌক্তিক দণ্ডাদেশে সম্মতিসূচক সাক্ষর করতে রাজি ছিলো?

বন্ধুর অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষরের পরিবর্তে তুমি টিপসহি দিয়েছ কি স্বেচ্ছায়?

আমি বিশ্বাস করি, তোমার চিরবিদায়ের প্রাক্কালে তুমি নিজের ইচ্ছায় এমন মিথ্যা কাগজে টিপসই দাওনি।

লোভী কিছু নেতার এতোই দরকার ছিলো তোমার অজ্ঞান হাতের আঙুলের ছাপ?

এতো নিষ্ঠুর কীভাবে হলো ওরা?

তোমার প্রিয় বন্ধু শরীফ সাদীর গলায় চালানোর জন্য ওরা তোমার অর্ধমৃত হাতে তুলে দিলো একখানা ছুরি?

ষড়যন্ত্রের কথা তোমার জানা নেই, তুমি টের পাওনি।

মৃত্যুর আগ-মুহূর্তে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করলো?

এর নাম কি রাজনীতি?

আমাকে বাদ দেওয়ার এ নিষ্ঠুর ব্যর্থচেষ্টায় ওরা তোমাকে ব্যবহার না করলেও পারতো।

বন্ধুটি আমার চলে গেল।

হাবিবুর রহমান খান গোলাপ।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আমার কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক।

বেলা-অবেলার সাথী, খেলার সাথী, তুমি আমার বাল্য-সাথী।

স্কুল-জীবণের মধুময় স্মৃতি।

তুমি ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসা আমার দুর্বিনীত তারুণ্যের সাথী।

তুমি আমার দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে উদ্দাম ছুটেচলা হৃদ-সখা।

তুমি আমার স্রোতস্বিনী নরসুন্দার স্বচ্ছ জলধারায় ভাসিয়ে দেওয়া দুরন্ত কৈশোর।

তুমি আমার ঘুড়ি ওড়ানো আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ।

গোলাপ, তুমি আমার বসন্ত বাতাসের সপ্তরঙা সুবাসিত যৌবন।

ফ্যাশনে-ভূষণে তুমি ছিলে অগ্রগামী।

আমাদের যৌবনের মধুময় দিনগুলো কেবল রিনিঝিনি কংকনের মিষ্টি শব্দে কাটেনি।

ততদিনে তুমি-আমি মিশে গেছি মুজিব প্রেমে।

ছুটে গেছি ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরে বাঙালির রক্তক্ষরণ প্রতিশোধের ঝাঁঝালো মিছিলে।

রাজনৈতিক অমানিশার আঁধারে “এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি” শ্লোগানে তুমি এসে হয়েছ উচ্চকিত আমার কণ্ঠ-সাথী।

অতঃপর উপজেলা কমিটিতে আমার পছন্দে আমারই হাতে লেখা হয়ে গেছে তোমার নাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে।

একটা কঠিন দুঃসময়ের দুস্তর পারাপারের মোরা যাত্রি একই তরণীর।

সদর উপজেলার সবচে’ বিরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের একটি গ্রাম সগড়া থেকে নির্ভীক তুমি এসেছো জয় বাংলার প্রদীপ্ত মশাল হাতে।

আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে নিষ্কলুষ ভালোবাসতে।

আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনদিন চিড় ধরেনি।

তোমার অসুস্থতায় দেখতে গিয়েছি মাঝে মাঝে।

সেই তুমি একসময় অন্ধ হয়ে গেলে।

খবর নিয়েছি মুকুল, কবির ও নানাজনের কাছে।

আন্তরিকতার বিন্দু পরিমাণ ঘাটতি ছিলো না।

তোমার আমার মাঝে শত্রুতা দূরে থাক, কোনদিন একটুখানি অভিমানও হয়নি।

বন্ধুর জন্য খোদার কাছে জান্নাতের দাবি। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আমি চিৎকার দিয়ে বলবো, গোলাপ খান আমার প্রিয়তম বন্ধু।

গোলাপ আমার নিষ্পাপ সাথী-সহযোদ্ধা। গোলাপ তুমি ওপারে ভালো থেকো।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঝরে গেলো গোলাপ

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

শরীফ সাদীঃ 

বন্ধু, তুমি সুবাসিত গোলাপ।

মিষ্টি-মধুর হাস্য-রসের গোলাপ।

তুমি অসময়ে চলে গেলে প্রত্যাশিত ঠিকানায়,জান্নাতে।

চিরতরে চলে যাওয়ার আগে তোমাকে নিয়ে এ কেমন নির্মম রাজনৈতিক খেলা খেলেছে কতিপয় তষ্কর নেতা?

কি পাষাণ ওরা, তোমাকে মৃত্যু শয্যায় রেখে তোমার হাতের ছাপ নিলো।

তোমার অচেতন মন কি বন্ধুর অযৌক্তিক দণ্ডাদেশে সম্মতিসূচক সাক্ষর করতে রাজি ছিলো?

বন্ধুর অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষরের পরিবর্তে তুমি টিপসহি দিয়েছ কি স্বেচ্ছায়?

আমি বিশ্বাস করি, তোমার চিরবিদায়ের প্রাক্কালে তুমি নিজের ইচ্ছায় এমন মিথ্যা কাগজে টিপসই দাওনি।

লোভী কিছু নেতার এতোই দরকার ছিলো তোমার অজ্ঞান হাতের আঙুলের ছাপ?

এতো নিষ্ঠুর কীভাবে হলো ওরা?

তোমার প্রিয় বন্ধু শরীফ সাদীর গলায় চালানোর জন্য ওরা তোমার অর্ধমৃত হাতে তুলে দিলো একখানা ছুরি?

ষড়যন্ত্রের কথা তোমার জানা নেই, তুমি টের পাওনি।

মৃত্যুর আগ-মুহূর্তে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করলো?

এর নাম কি রাজনীতি?

আমাকে বাদ দেওয়ার এ নিষ্ঠুর ব্যর্থচেষ্টায় ওরা তোমাকে ব্যবহার না করলেও পারতো।

বন্ধুটি আমার চলে গেল।

হাবিবুর রহমান খান গোলাপ।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আমার কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক।

বেলা-অবেলার সাথী, খেলার সাথী, তুমি আমার বাল্য-সাথী।

স্কুল-জীবণের মধুময় স্মৃতি।

তুমি ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসা আমার দুর্বিনীত তারুণ্যের সাথী।

তুমি আমার দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে উদ্দাম ছুটেচলা হৃদ-সখা।

তুমি আমার স্রোতস্বিনী নরসুন্দার স্বচ্ছ জলধারায় ভাসিয়ে দেওয়া দুরন্ত কৈশোর।

তুমি আমার ঘুড়ি ওড়ানো আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ।

গোলাপ, তুমি আমার বসন্ত বাতাসের সপ্তরঙা সুবাসিত যৌবন।

ফ্যাশনে-ভূষণে তুমি ছিলে অগ্রগামী।

আমাদের যৌবনের মধুময় দিনগুলো কেবল রিনিঝিনি কংকনের মিষ্টি শব্দে কাটেনি।

ততদিনে তুমি-আমি মিশে গেছি মুজিব প্রেমে।

ছুটে গেছি ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরে বাঙালির রক্তক্ষরণ প্রতিশোধের ঝাঁঝালো মিছিলে।

রাজনৈতিক অমানিশার আঁধারে “এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি” শ্লোগানে তুমি এসে হয়েছ উচ্চকিত আমার কণ্ঠ-সাথী।

অতঃপর উপজেলা কমিটিতে আমার পছন্দে আমারই হাতে লেখা হয়ে গেছে তোমার নাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে।

একটা কঠিন দুঃসময়ের দুস্তর পারাপারের মোরা যাত্রি একই তরণীর।

সদর উপজেলার সবচে’ বিরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের একটি গ্রাম সগড়া থেকে নির্ভীক তুমি এসেছো জয় বাংলার প্রদীপ্ত মশাল হাতে।

আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে নিষ্কলুষ ভালোবাসতে।

আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনদিন চিড় ধরেনি।

তোমার অসুস্থতায় দেখতে গিয়েছি মাঝে মাঝে।

সেই তুমি একসময় অন্ধ হয়ে গেলে।

খবর নিয়েছি মুকুল, কবির ও নানাজনের কাছে।

আন্তরিকতার বিন্দু পরিমাণ ঘাটতি ছিলো না।

তোমার আমার মাঝে শত্রুতা দূরে থাক, কোনদিন একটুখানি অভিমানও হয়নি।

বন্ধুর জন্য খোদার কাছে জান্নাতের দাবি। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে আমি চিৎকার দিয়ে বলবো, গোলাপ খান আমার প্রিয়তম বন্ধু।

গোলাপ আমার নিষ্পাপ সাথী-সহযোদ্ধা। গোলাপ তুমি ওপারে ভালো থেকো।