হেফাজতের নেতারা গ্রেপ্তার-রিমান্ডের বেড়াজালে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাধীনতার ৫০ বছর সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশে আসা নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। এছাড়া হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর এক এক করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

গ্রেপ্তারের পর হেফাজতের ওইসব নেতাদের বেশ কয়েকবার রিমান্ডেও নেয় পুলিশ। এখন পর্যন্ত সারা দেশে হেফাজতের ৫শ’রও বেশি এবং ১৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের দীর্ঘদিন পর আবারো দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় এসেছে হেফাজত। গত মাসে নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন শুরু করে হেফাজত। যার নেতৃত্বে ছিলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।

পরে গত ২৬ মার্চ রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সহিংসতার ঘটনায় মামুনুল হকসহ ১৭ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো দুই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে গত ৫ এপ্রিল পল্টন থানায় মামলা করা হয়।

এরপর থেকেই সহিংসতাকারী হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৭ এপ্রিল সকালে নেত্রকোনার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ‘শিশুবক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে। পরে রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেখিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় র‌্যাব।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আহমেদ শফিকে হত্যার প্ররোচনা মামলায় সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবের প্রতিবাদ ও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ১৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা যায়, হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তারের তালিকায় ৩৫ শীর্ষ নেতা নাম রয়েছে।

তালিকায় হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৩৫ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি সবাই নজরদারিতে আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হেফাজতের আমিরের বিষয়ে শিগগির কোনো সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের যেসব নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা এখনো সক্রিয় রয়েছেন; মামুনুল হক এ তালিকায় ২ নম্বরে ছিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেছেন, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে। দলটির আরো ৩৫ নেতা তাদের ‘ওয়াচ লিস্ট’–এ রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এর মধ্যে রোববার (১১ এপ্রিল) মধ্যরাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে র‍্যাবের সঙ্গে যৌথ অভিযানে আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২০১৩ সালের রাজধানীর মতিঝিল থানায় নাশকতার মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ওইদিন মধ্যরাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে র‍্যাবের সঙ্গে যৌথ অভিযানে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাত্রবাড়ী থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মুফতি শরিফউল্লাহকে একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

১৪ এপ্রিল (বুধবার) রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে ডিবির একটি টিম সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন রাত ১০টা ৫০ মিনিটে হাতিরপুলের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলামকে। তাদের দুজনকেই ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘেরাও এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর-সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন ও মতিঝিল থানায় হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়।

ওইদিন সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। মুফতি শরীফউল্লাহ হেফাজতের মহানগর কমিটিরও সাংগঠনিক সম্পাদক। রাজধানী পল্টন থানার নাশকতার মামলায় চার দিনের রিমান্ড দিয়েছিলেন আদালত। রোববার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসুফিয়ান মো. নোমানের আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়ারী) আজাহারুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শরীফউল্লাহকে ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় (নং ২০) তিনি এজাহারনামীয় আসামি।

১৬ এপ্রিল বিকেলে লালবাগের বাসা থেকে হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমেদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মাওলানা জুবায়ের হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নাশকতা ও সম্প্রতি সহিংস ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। তিনি মামলারও আসামি। আসামি হিসেবে তাকে শুক্রবার বিকেলে লালবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৭ এপ্রিল শনিবার রাজধানীর বারিধারা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিন মামলায় জুনায়েদ আল হাবীবের ১০ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন।

ওইদিন দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মাওলানা জালাল উদ্দিনকে ডিবির একটি টিম গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সহিংসতার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

জালাল উদ্দিনকে পৃথক দুই মামলায় তিনদিন করে মোট ৬ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাব্বির ইয়াছির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন।

১৮ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নাশকতার পৃথক দুই মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। সোমবার (২৬ এপ্রিল) রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। এর আগেও মোহাম্মদপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পাকিস্তানি একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় সাতদিনের রিমান্ড শেষে মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এ তথ্য পেয়েছে বলে জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ নেয়ামতুল্লাহ মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি। তিনি প্রায় ১৪/১৫ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর মামুনুল হক তার বোনকে বিয়ে দেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি তাজের সঙ্গে এই নেয়ামতুল্লাহর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নেয়ামতুল্লাহ ওই হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। কিন্তু মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল হওয়ায় তার জামাতাকে প্রভাব খাটিয়ে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। নেয়াতমুল্লাহ ও মামুনুল হক একসঙ্গে ২০০৫ সালে ৪০/৪৫ দিনের বেশি পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে একটি ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মতবাদের মানুষকে একত্রিত করেন। বিদেশ থেকে আসা টাকা সেই সংগঠনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতে ব্যবহার করেন।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বাসাবোর বাসা থেকে হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা কোরবান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করে গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় মাওলানা কাসেমীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব মামলায় কোরবান আলীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের দুই নেতাকে একই দিনে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। একজন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব খোরশেদ আলম কাশেমী ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরফাত হোসাইন। কাশেমীকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এবং শরাফত হোসাইনকে রাজধানীর ভাটারা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কাশেমী ও শরাফতের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী জোনাল টিম কাশেমীকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এবং গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ ভাটারা থেকে শরাফত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।

২২ এপ্রিল ভোরে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের গ্রামের বাড়ি থেকে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় হেফাজত নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকে আটক করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালত এ আদেশ দেন।

ওইদিন বিকালে রাজধানীর আরমানিটোলা থেকে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র সমাজের সেক্রেটারি মাওলানা এহেতাসুমুল হক সাখী বিন জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাওলানা এহেতাসামের বিরুদ্ধে হেফাজতের সাম্প্রতিক তাণ্ডবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ছিলো বলে পুলিশ জানায়। এহেতাসুমুল হক সাখী এসব মামলায় জাকিরের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আহমদ আবদুল কাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালত এ আদেশ দেন।

তিনি ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নির্বাচিত হন। পল্টনের বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ও ২০১৩ সালের তাণ্ডবের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে হেফাজতের শীর্ষ ১৯ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনসহ তিন জনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহ এ আদেশ দেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি হলেন হেফাজত নেতা মাওলানা জোবায়ের ও সদস্য সানাউল্লাহ।

প্রসঙ্গ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনে নামে সম্প্রতি। বিক্ষোভের নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সহিংসতা চালান। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এরমধ্যে ২৩টি মামলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬টি মামলা তদন্ত করছে। বাকি মামলাগুলো তদন্ত করছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট।

২৬ থেকে ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসাসহ আশেপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষককে নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। এসময় তিনি এবং তার সিনিয়র শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেফাজতের কর্মী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৬টি মামলায় মোট ৩৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে রোববার রাতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন একটি আহবায়ক কমিটি গঠনের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এই আহবায়ক কমিটির প্রধান হয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী নিজেই।

সংগঠনটির এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত একাধিক নেতা বলেছেন, নানামুখী সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে শুধু অরাজনৈতিক এবং বয়স্ক নেতাদের দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। তবে হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে আকস্মিকভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে সংগঠনের ভিতরেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ বিষয়ে, হেফাজতের নতুন আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছিল।

তিনি আরো বলেন, সরকারের সে রকম কোন চাপ নেই। সরকার আমাদের কোন শর্ত দেয়নি। এটা সমঝোতার কোন অংশ নয় বা সরকারের চাপে নয়। পরিস্থিতির কারণে এটা হেফাজতের কারণে জরুরি মনে করেছেন আমাদের আমীর।

এর আগে আদালতকে হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক জানিয়েছেন, পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার কথা রাখতে গিয়ে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলেন । মামুনুল বলেন, ২৬ মার্চ আমি বাংলাবাজার জুমা মসজিদে পুলিশ প্রটেকশনে নামাজ পড়িয়েছি। নামাজ শেষে জানতে পারি বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা এক হয়েছেন। এরপর একজন ডিআইজির অনুরোধে আমি তখনই বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাই, সেখানে আমাকে বক্তব্য রাখতে বলা হয়। তারপর ওইখানে আমি বক্তব্য রাখি। আমি তো কোনও অন্যায় করিনি। ভবিষ্যতে পুলিশ কোনও অনুরোধ করলে আমরা তো কোথাও যেতে পারবো না।

গ্রেপ্তারকৃত সবাই হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা।

বাংলাদেশ জার্নাল

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর