খালেদাও তারেক মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব, কি হবে আব্বাসের কপালে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিখোঁজ বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর গুমের নেপথ্যে ‘দলের নেতারা জড়িত রয়েছেন, প্রকাশ্য সভায় এমন বক্তব্য দেয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ওপর নাখোশ তার দল। বিশেষ করে মির্জা আব্বাসের মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এমন ভুল করতে পারেন বলে মনে করেন না দলের কর্ণধার তারেক রহমান। আব্বাসের বক্তব্যকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তবে এখনো মির্জা আব্বাসের পক্ষেই আছেন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিএনপিরই নির্ভরযোগ্য সূত্র। তারেক রহমান এখনই মির্জা আব্বাসকে দল থেকে বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্ত নিলেও খালেদা জিয়া এর বিরোধিতা করছেন। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে।
এজন্য বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে মির্জা আব্বাসের কাছে।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তারেক রহমানসহ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মির্জা আব্বাস ইলিয়াসকে নিয়ে এমন বেফাঁস মন্তব্য করায়, তারেক রহমান তার উপর প্রচণ্ড রেগে আছেন। তারেক রহমানের নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে এমন ইঙ্গিত দেয়ারই চেষ্টা করা হয়েছে। এমনিতেই আব্বাস খালেদাপন্থী হওয়াতে পূর্বেই দলের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে চাপে ছিলেন। বেফাঁস মন্তব্য করে নিজের বিপদ নিজেই ডেকেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের মতে, ইলিয়াস আলীর বিষয়টি স্পর্শকাতর। আব্বাস যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন সেই নেতা তারেক রহমানের খুবই ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত অনুগতপরায়ণ সৈনিক। ইলিয়াস আলীর গুমের বিষয়টির সাথে তারেকপন্থীদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে একটি গোপন তথ্য মির্জা আব্বাস ফাঁস করে দেয়ার অভিপ্রয়াস চালিয়েছেন। এতে রাজনীতির ময়দানে দলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জন্যই মির্জা আব্বাসকে দল থেকে বহিষ্কার করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত আসলেও আসতে পারে।
এদিকে মির্জা আব্বাসের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, দেখুন আমি করোনা আক্রান্ত ছিলাম। মাত্র কয়েকদিন হলো করোনামুক্ত হয়েছি। দলীয় কার্যক্রমে এখনও তেমন একটা সক্রিয় হতে পারিনি। তবে এতটুকু জানি ওইদিনের ভার্চুয়াল সভার পর মির্জা আব্বাসকে দলের পক্ষ থেকে তিনটি ড্রাফট দেয়া হয় যা সংবাদ সম্মেলনে তার উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু মির্জা আব্বাস সংবাদ সম্মেলনে সেই তিনটি ড্রাফটের থেকে কোনো বক্তব্য দেননি। এরপর লন্ডন থেকে দলের হাইকমান্ড তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বিএনপি’র একটি পক্ষ মনে করছেন, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন ৯ বছর হয়েছে। এই সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে দেশে ও বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে উঠেছিল কিন্তু দল সেটিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। বরং বিএনপি তাদের কূটচালে ফেঁসে যাচ্ছে।
ইলিয়াস আলী সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, এসব বিষয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। গণমাধ্যম আমার বক্তব্যকে সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। তবে আমি যা বলেছি তা বুঝে শুনেই বলেছি। দলকে বাঁচাতে আমি সত্য কথা বলেছি। এখন দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনী-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস আলী গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাশগুলো রয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন। ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনও আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে না পারি, দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।’
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর