ইউপিতেও চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপির প্রার্থীরা

পৌরসভা নির্বাচনের মতো আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ভোটের ময়দানে টিকে থাকাই বিএনপির প্রার্থীদের বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনদের দাপটে বহু জায়গায় বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। কোথাও কোথাও প্রার্থী অপহরণ ও মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের দাপট ও প্রশাসনিক নানা হয়রানি মোকাবিলা করে কিভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাবেন তা নিয়ে শঙ্কিত বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকরা। পৌরসভা নির্বাচনের মতো ভোট কারচুপির শঙ্কাও রয়েছে বিএনপির মধ্যে। তারপরও যে কোনো মূল্যে দলটির নেতাকর্মীরা পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও শেষ পর্যন্ত ভোটের ময়দানের লড়াইয়ে থাকতে চান। বেশ কয়েক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মানবকণ্ঠকে এমন কথা জানিয়েছেন।
মজিবর রহমান জুয়েল রাজশাহীর বাগা থানার ৫নং মনিরামপুর ইউনিয়ন থেকে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে লড়তে চান। রিজভী আহমেদকে নিয়ে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের জন্য দোয়া নিয়েছেন। জুয়েল মানবকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে সুষ্ঠুভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো সম্ভব হবে না। কাউখালী উপজেলার ১নং সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলাম খানও মানবকণ্ঠে একই অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। নিরপেক্ষ ভোট হবে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি ভোটের ময়দানে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকার কথাও জানান তিনি।
আগামী ২২ মার্চ দেশের ৭৩৯টি ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা ও বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ১২ ফেব্র“য়ারি থেকে মনোনয়ন জমা শুরু হয়ে ২২ ফেব্র“য়ারি শেষ হয়েছে। ২৩ ও ২৪ ফেব্র“য়ারি যাচাই-বাছাই শেষে এখন প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে প্রচারে নামছেন। বিএনপি দাবি করেছে, ক্ষমতাসীনদের বাধা, হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে দেশের ৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রই জমা দিতে পারেননি। তারপরও কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে মানবকণ্ঠকে দলটির একজন নীতিনির্ধারক জানান, এটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। এই নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে সরকার বদল হবে না। কারচুপি হবে জেনেও আমরা কৌশলগত কারণে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দলীয় সরকারের অধীনে যে স্থানীয় পর্যায়ের একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয় না তা ইতিমধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি। পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তা পরিষ্কার হয়েছে। ফলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবির যৌক্তিকতা আরো স্পষ্ট হয়েছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব উপলব্ধি করছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যহারের অভিযোগ করে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ক্ষমতার দাপটে ইউনিয়নগুলোও দখল করে ক্ষমতাসীনরা বাকশাল কায়েম করার চূড়ান্ত মহড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। ইউপি নির্বাচনও একচেটিয়া দখলে নিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করাচ্ছে। বাকশালী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য কেড়ে নেয়া হচ্ছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র। তারা ইউপি নির্বাচন করছে গণতন্ত্রকে বলশালী, মুখ্য কিংবা প্রণিধানযোগ্য করার জন্য নয়, বরং একদলীয় শাসন চিরজীবী করতেই এই নির্বাচন। বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানির কথা উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন ২২ ফেব্র“য়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করে রিসিভ কপি চাইলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাকে জানান, রিসিভ করা আমার কাজ নয়। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরের দিন প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়া হয়, তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একই উপজেলার কুশল, বর্নি, পাটগাতি ও গোপালপুর ইউনিয়নেও বিএনপির প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

মানবকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর