হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাঙ গ্রামটি দেশের সর্বদক্ষিণে। গ্রামের ওপারে সুন্দরবন আর অথৈ বঙ্গোপসাগর। উপকূলের সবশেষ এই গ্রামেই বসবাস হাবিবুর রহমানের। শিশুকাল থেকেই দারিদ্র্য ছায়ার মতো অনুসরণ করায় লেখাপড়া আর হয়ে ওঠেনি। বাব চাচা ও বড় ভাইদের সাথে বাদায় (সুন্দরবন) যেয়ে হিংস্র প্রাণী মোকাবেলা করে বন কাটা, মধু আহরণসহ নানা বিষয়ও রপ্ত করে হাবিবুর।
সাহস আর কৌশল জানা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ এপ্রিল সকালে সামন্য অসাবধানতায় প্রাণ দিতে হয় তাকে। বাঘের আক্রমণে নিহত হন হাবিবুর রহমান (৩২)। হবিবুর মীরগাঙ গ্রামের আজিজ মোল্যার ছেলে।
হাবিবুর বাঘের আক্রমণে নিহত হওয়ার পর চরম দুর্দশা নেমে এসেছে তার পরিবারে। স্বামীকে হরিয়ে হাবিবুরের স্ত্রী হাজেরা খাতুন শুধু বিধবা নয়। সে এখন বাঘবিধবা। তার স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে সে এখন অভিশপ্ত, অপয়া নারী!
হাজেরা জানান, স্বামী-শ্বাশুড়িসহ দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার। শ্বশুর অন্য ছেলের সংসারে থাকে। স্বামী হাবিবুরকে বাঘে খাওয়ার পর গত তিন দিনে চুলায় হাঁড়ি চড়েনি। আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া সহায়তায় দিন পার করছেন। চারজনের পরিবার নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন। কি খাবেন তা ভাবতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘স্বামীকে বাঘে খেলে সমাজে স্ত্রীদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমার স্বামীকে তো বাঘে খেয়েছে, এখন আমরা খাব কী?’
হাবিুবুরের পিতা আজিজ মোল্যা জানান, দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে তিনি বন বিভাগ থেকে পাস গ্রহণ করে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান। গত ১৪ এপ্রিল সকালে তিনি নৌকায় অবস্থান করছিলেন। বড় ছেলের সাথে ছোট ছেলে হাবিবুর মৌচাক খুঁজতে গহীন বনের ভেতরে প্রবেশ করে। সকাল ১০টার দিকে হাবিবুর মধুর চাক দেখে তার বড় ভাইকে ডাক দেয়। এ সময় হঠাৎ একটি বাঘ হাবিবুরের ওপর হামলে পড়ে টেনেহিঁচড়ে বনের ভেতরে নিয়ে যায়। মিনিট দুয়েক পর বড় ভাই ঘটনাস্থলে এসে ছোট ভাই হাবিবুরকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে। এ সময় এক শ গজ দূরে একটি বাঘ ছোটভাইকে খুবলে খাচ্ছে দেখতে পায়ে ডাক চিৎকার করে লাঠি নিয়ে বাঘের ওপর পাল্টা আক্রমণ করে হাবিবুরকে উদ্ধার করে নৌকায় নিয়ে আসে।
হাবিবুরের মা বলেন, তার ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ১০ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়। বাকি দুই ছেলের মধ্যে মেজো ছেলে হাবিবুরের সংসারে তিনি থাকেন। হাবিবুরকে হারিয়ে পরিবারটি একেবারেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বড় ছেলে তার পিতাকে নিয়ে অন্য জায়গায় থাকে। পাঁচজনের সংসারে হাবিবুরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হাবিবুরের দেড় বছরের একটি ও ছয় বছরের একটি মেয়ে আছে। হাবিবুরের মেয়ে দুটির দায়িত্ব কে নেবে? কিভাবে মানুষ হবে তারা? এমন উত্তর না পাওয়া অনেক প্রশ্ন তাঁর।
এলাকাবাসীর নিকট জানা যায়, অভাব-অনাটনের কারণে পরিবারটি বনের ওপরই নির্ভরশীল। মানুষ তাদের বনজীবী হিসেবেও চিনে থাকে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সঞ্চয় বলতে তাদের কিছু থাকে না। তারা আরো বলেন, একজন পরিশ্রমী ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি ছিল হাবিবুরের।