খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্বের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক নিইনি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মারুফ কামাল খানকে। এ নিয়ে প্রথম দিকে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি এ সাংবাদিক। পরে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

বুধবার নিজের ফেসবুকে মারুফ কামাল খান জানান, তিনি খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক কিংবা সম্মানী নেননি। তাকে এই পদে নিয়োগের সময় কোনো নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়নি। বিএনপির কোনো পদেও তিনি নেই।

দীর্ঘদিন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করে অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার পর মারুফ কামাল খানের স্ট্যাটাসে অভিমান ও আবেগ ছুঁয়ে গেছে। এই স্ট্যাটাসের নিচে অনেকে মন্তব্যও করেছেন। মারুফ কামালের সুহৃদরা তার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। এই পোস্টের নিচে ১৬০০ লাইক পড়েছে। ২০৩ জন মন্তব্য করেছেন।  ৮৩ জন এটি শেয়ার করেছেন।

মারুফ কামালের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—

‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে বিএনপির তরফ থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ব্যাপারে আমি নিরুৎসাহিত করেছিলাম। তবু অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবেগের আতিশয্যে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছুটা কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন। মানুষ পাথর নয়; তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে, আবেগাক্রান্ত হয়। সময়ে এটা থিতিয়ে যাবে আশা করি।

এই দায়িত্ব পালনে কোনো মায়না নেননি জানিয়ে মারুফ কামাল খান লেখেন— আমি সবার ভালোবাসায় অভিভূত। আলাদা করে সবার মন্তব্যের জবাব দিতে না পারায় দুঃখিত। খুব অস্বাভাবিক একসময়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব গ্রহণ ও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের গল্প সুযোগ পেলে আগামীতে কখনও বলব। তবে একটা কথা বলে রাখি— এটা কোনো চাকরি নয়, দলীয় পদও নয়, স্রেফ ম্যাডামের ইচ্ছাধীন একটা রাজনৈতিক সিলেকশন ছিল। আমাকে কেউ কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি, শর্তও নির্ধারণ করে দেয়নি। সব ছিল মুখে মুখে, বিশ্বাস আর আস্থার ভিত্তিতে। আমি এই দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে কখনও কোনো পারিশ্রমিক, মায়না বা সম্মানী নিইনি।

পূর্বসূরিদের এই দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন সামান্য লেখক-সাংবাদিক। আমার আগে আহমেদ নজির, আনোয়ার জাহিদ ও রিয়াজউদ্দীন আহমদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একইভাবে এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাদের কারও পরিচিতি ছিল সচিব, আবার কারও পরিচিতি উপদেষ্টা হিসেবে ছিল। এই দায়িত্বের বাইরে তাদের কেউ দলীয় পদে ছিলেন, কেউ ছিলেন না। আমাকে প্রেস সচিব পদের বাইরে দলীয় পদ নেওয়ার কথা বললেও আমি তা নিইনি।  আমার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বুঝেই আমি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যেই নিজেকে সীমিত রেখেছি।

অর্পিত দায়িত্ব পালন নিয়ে নিজের ঢোল পেটাতে চান না মন্তব্যে করে মারুফ কামাল খান বলেন, খালেদা জিয়ার মিডিয়া কাভারেজ দেখভাল এবং তার বক্তব্য-বিবৃতি ও লিখিত ইন্টারভিউর জবাবের মুসাবিদা করার ব্যাপারে আমার ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব পালনে আমার সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন অন্যরা করছেন, করবেন। এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা অনুচিত হবে। আমি নিজের ঢোল নিজেই পেটানোকে খুব অরুচিকর প্র্যাকটিস বলে মনে করি। ১/১১-sএর সময় আমি বিবেকের তাড়নায় ও আদর্শবোধের তাগিদ থেকে যেটুকু করেছি, সে ব্যাপারেও নিজের কৃতিত্ব জাহির করাটাকে আমি অনুচিত মনে করি। তবে সময় সুযোগ হলে সেই সময়কার অপ্রকাশিত অনেক ঘটনাবলি কখনও লিখে জানাব।

বিএনপির দেওয়া চিঠির বিষয়ে তিনি লেখেন— আমাকে দেওয়া বিএনপির চিঠির টেকনিক্যাল ও পদ্ধতিগত দিক এবং এতে চয়ন করা শব্দ ও বাক্য নিয়েও আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমি একটি ক্লোজড চ্যাপ্টারকে ডিসেকশন না করাই উচিত বলে মনে করি। আমি এর পুনর্বিবেচনাও চাই না এবং ব্যক্তির মূল্যায়নের চেয়ে দল-রাজনীতির সাফল্যকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি।

এতদিন প্রেস সচিব পদে রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মারুফ কামাল খান লেখেন— আমি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করি, কোথাও কেউ অপরিহার্য নয়। এক দায়িত্বে কেউ অনন্তকাল থাকেও না। আমি প্রত্যাশা করি— এই পরিবর্তন রাজনীতি ও দলের জন্য কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও কল্যাণ বয়ে আনবে। কারও প্রতি কোনো ব্যাপারেই আমার কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। আমার মতো একটা সামান্য মানুষের প্রতি অপরিসীম আস্থা রেখে আমাকে অপ্রাপ্য সম্মানে ভূষিত করায় আমি খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ। আমি দায়িত্ব পালনকালে যাদের আন্তরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি, দলের সর্বস্তরের সেসব নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী এবং চেয়ারপারসন অফিসের নিবেদিত প্রতিটি কর্মীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই, ক্ষমতাসীনদের দ্বারা চরমভাবে আক্রান্ত হওয়ার দিনগুলোতেও আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা ও আমার সহকর্মীরা মস্ত ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করে আমাকে পরম ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। তাদের ভূমিকার কথা আমার পক্ষে আমৃত্যু ভোলা সম্ভব নয়।

অব্যাহতির বিষয়ে তিনি লেখেন— আমি আবারও বলি, অব্যাহতির ব্যাপারটিকে আমি দারুণ পজিটিভলি নিয়েছি। আমার মন একরত্তিও খারাপ হয়নি।  আমি মনে করি অনেক সময় আশীর্বাদ আসে অভিশাপের মুখোশ পরে। আমার কাছে এটি পুরোই আশীর্বাদ বলেই মনে হচ্ছে। মানবিক দায়বোধ থেকে অনেক সময় অনেক দায়িত্ব নিজে থেকে ছাড়া যায় না। সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অব্যাহতি মিললে সে তো এক পরম স্বস্তির মুক্তি। আমি সেভাবেই দেখছি। এ এক অনুপম স্বাধীনতা।

খালেদা জিয়া রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় উল্লেখ করে তার সদ্য অব্যাহতি পাওয়া প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান লেখেন— আমি যার জন্য কাজ করতাম, তিনিই বেড়াজালে পড়ে বাধ্যতামূলকভাবে আজ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। কাজেই আমার এমনিতেই কাজ ছিল না। এ অবস্থায় আদর্শগত বিশ্বাস থেকে যা করা দরকার ও সম্ভব, সে লেখালেখিটুকু তো করছিই। বাড়তি যে ‘প্রেস সচিব’ স্টিকারটি আমার গায়ে সেঁটে ছিল, বর্তমান অবস্থায় আমার স্বাধীনতা হরণ ছাড়া সেটির আর তেমন কোনো কার্যকারিতাই ছিল না। স্বাধীনতাপ্রিয় একজন মানুষ হিসেবে এটি খুব স্বস্তিকর ছিল না আমার জন্য। তা ছাড়া এটি হয়ে উঠেছিল কোনো কোনো মহলের চরম ঈর্ষা ও বিদ্বেষের উৎস। এ পরিস্থিতি থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দেওয়ায় আমি সত্যিই আনন্দিত।

মামলায় জর্জরিত জানিয়ে তিনি বলেন, মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের নানান জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দায়ের করা অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আমি জর্জরিত। আর্থিক দৈন্য আমার বরাবরই ছিল, সেটিকে কখনও গ্রাহ্য করিনি, আজও করি না। তবে শাসকের ক্রোধে আমার পারিবারিক জীবন ছত্রখান হয়ে গেছে। এই সংকট অতিক্রমের লড়াইটা এখন আমাকে একলাই চালাতে হবে, হারজিত অনিশ্চিত। আমি শুধু আপনাদের কাছে দোয়া চাই। কখনও মাথা না নুইয়ে যেভাবে জীবনভর আদর্শিক সংগ্রাম চালিয়েছি, জীবনের বাকি দিনগুলোতে ব্যক্তিগত লড়াইটাও যেন সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারি।

এর আগে অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার পর ৬ এপ্রিল এক স্ট্যাটাসে মারুফ কামাল খান লেখেন— নিউজে জেনেছিলাম। এখন সরাসরি চিঠিখানা পেয়েছি। সিদ্ধান্তের কারণও খুব সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনের একটি অধ্যায়ের অবসানলগ্নে অনেক ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সবার সঙ্গে শেয়ার করলাম কেবলই নিশ্চিতকরণের জন্য। আগেই নিউজ শেয়ার করায় অনেক মন্তব্য পেয়েছি। আমি খুব কৃতজ্ঞ একজন সামান্য মানুষ হিসেবে। এ বিষয়ে এখানে কেউ আর কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেই আমি আনন্দিত হব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর