উপমহাদেশে কৃষি শিক্ষার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সপ্তম সমাবর্তন ২৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সপ্তাহব্যাপী আলোকসজ্জা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন বলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আকবর জানান। এদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি চার কোটি হাওর এবং চরবাসির জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাকৃবিতে প্রতিষ্ঠিত ‘হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর প্রফেসর ড. এ.কে. এম জাকির হোসেন জানান।
উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে ক্যাম্পাস জুড়ে। পুরো ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অলঙ্কিৃত করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সপ্তম সমাবর্তনে জুলাই-ডিসেম্বর ২০১০ সন থেকে জানুয়ারি-জুন ২০১৪ পর্যন্ত ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৪৯০৯ জনকে সনদপত্র দেয়া হবে।। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত-১৯১৯ জন (ভেটেরিনারি অনুষদ-১৫৪, কৃষি অনুষদ-৭৪৩, পশুপালন অনুষদ-২২৫, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ-২০৭, কৃষি প্রকৌশল অনুষদ-১৫০, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-৯২, মাৎসবিজ্ঞান-৩৪৮)। মাস্টার্স ডিগ্রীপ্রাপ্ত- ২৮৫১ জন এবং পিএইচ.ডি. ডিগ্রিপ্রাপ্ত – ১৩৯। এঁদের মধ্যে ১৭ জন পিএইচ.ডি. ২৫২জন মাস্টার্স এবং ৬১১জন স্নাতকসহ সর্বমোট ৮৮০ জন ডিগ্রিপ্রাপ্ত কৃষিবিদ সমাবর্তনে অংশগ্রণকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
এ বছর সমাবর্তন বক্তা হিসাবে থাকবেন প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিককের উপাচার্য প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এছাড়াও আরও উপস্থিত থাকবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান প্রমুখ। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্রাজুয়েটরা আগামী ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিউট অব এগ্রিবিজনেস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ ভবন থেকে তাদের গাউন সংগ্রহ করবেন।
বহুল প্রতীক্ষিত এ সমাবর্তনকে ঘিরে উৎসবের হাওয়া বইছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সদস্যদের মাঝে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত সকলের মনেই আনন্দ।
সমাবর্তনকে সামনে রেখে নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের আকর্ষণীয় স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ ভবন, রাস্তাঘাটসহ পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে লেগেছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া।
অন্যদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট, সমাবেশস্থল ছাড়াও আশপাশের চারপাশে তৈরি করা হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। দেশের কৃষি উন্নয়নে ঈপ্সিত গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে সার্বিক নেতৃত্বদানে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ তৈরি করা আমাদের অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামীর দিনগুলোতে এদেশের কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েটগন অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ.কে.এম জাকির হোসেন বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান নির্বিঘœ করতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, পাশাপাশি বহিরাগতদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমাবর্তন নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। এ ছাড়াও সমাবর্তনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রেলওয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করছি, ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পারব এ সমাবর্তন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১১ সালের ৮ মার্চ বাকৃবিতে ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সে সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এযাবত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫,৫২৩ জন স্নাতক, ১৬,০৭৮জন এম.এসসি/এম.এস. এবং ৫৩৭ জন পিএইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এযাবৎ ৬টি সমাবর্তনের মাধ্যমে উত্তীর্ন গ্রাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের জনক নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী ড. নরম্যান ই. বোরলগকে সম্মানসূচক ডি.এসসি. (অনারিস কজা) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা মোট ৬,০৭৫ জন, তারমধ্য্যে স্নাতক পর্যায়ে ৪,৪৩৪ জন, এম.এস. পর্যায়ে ১,২০৯ জন এবং পিএইচ.ডি পর্যায়ে ৪৩২ জন । অধ্যয়নরত ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫৮৬ জন ও ২৪৮৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৯ জন বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৫৬২, এঁদের মধ্যে ২৭০ জন অধ্যাপক, ১০৭ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৩৯ ও ৪৬ জন যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক। প্রায় সকল শিক্ষকই উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যার মধ্যে ৩৬৩ জন পিএইচ.ডি. ডিগ্রিধারী।