ঢাকা ১১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুখ্যাত ৪ অপরাধী পরিবারের ভয়ঙ্কর কাহিনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৫:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১
  • ১৪৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিবার মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। অথচ পরিবারেই যদি অপরাধীর আনাগোনা থাকে, তাহলে বাকিরা তো পথভ্রষ্ট হবেনই! বিশ্বে তেমনই কিছু পরিবার আছে, যার সদস্যরা অপরাধ করেই আনন্দ পেয়ে থাকেন। একের পর এক খুন, ডাকাতি করে তারা বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিতও বটে!

এমনই চার কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার পরিবারের কথা জানতে পারবেন এ প্রতিবেদনে। এসব পরিবারের মধ্যে এক মা খুন করেন নিজ সন্তানকে। অন্যদিকে এক বাবা নিজের মেয়েকে ২৪ বছর বন্দি করে রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন। আবার কোনো পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

৬ সন্তানের মা ছিলেন থেরেসা নোর। সব সময় তার সন্তানদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। কখনো শারীরিকভাবে আবার কখনো মৌখিক কিংবা মানসিকভাবে সন্তানদের অপদস্থ করতেন। দাম্পত্য জীবন টেকেনি তার চারবারেও। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছে বিবাহবিচ্ছেদ।

চতুর্থ বিবাহবিচ্ছেদের পর থেরেসা আরও রাগী ও জেদি হয়ে ওঠেন। তিনি সব সময়েই নেশাগ্রস্ত থাকতেন। প্রচুর মদপান করতেন। এতে তার ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং তিনি স্বভাবে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার সব রাগ ও জেদ ছিল সন্তানদের ওপর।

jagonews24

এ কারণে তিনি ৬ সন্তানকে ঘর থেকে বাইরে যেতে দিতেন না। তাদের বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো সম্পর্কও ছিল না। এমনকি ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারতেন না তারা। বহু বছর ধরে থেরেসা তার সন্তানদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন।

এরপর মায়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুসান বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। থেরেসা পুলিশদের সাহায্যে সুসানকে বাড়িতে ফেরত আনেন। সুসান মানসিকভাবে অসুস্থ বলায় তার কথায় পুলিশও পাত্তা দেয়নি তখন। বাড়ি ফিরে আসার পর সুসান আরও নির্যাতিত হতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের বন্দুকের ২২-ক্যালিবার গুলিতে মৃত্যু হয় সুসানের। থেরেসা নোরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ম্যানসন ফ্যামিলি (সাইকোপ্যাথ পরিবার)
চার্লস ম্যানসন সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং জনপ্রিয় সিরিয়াল কিলার। একজন সংগীতজ্ঞ থেকে অপরাধী বনে যান তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চার্লস একের পর এক খুন করেছেন।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই ম্যানসনের জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কেটেছে। তার প্রাথমিক অপরাধগুলোর মধ্যে ছিল—গাড়ি চুরি, জালিয়াতিসহ ক্রেডিট কার্ড ছিনতাই। তিনি পতিতাদের দালাল হিসেবেও কাজ করেছেন।

১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি ‘দ্য ফ্যামিলি’ নামক একটি অপরাধচক্রের দলনেতা হন। তার পরিচালনায় বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। যার মধ্যে রয়েছেন চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কির সাড়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ অভিনেত্রী শ্যারন টেইট।

jagonews24

এসব হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য ম্যানসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার করকোরান স্টেট কারাগারে আজীবন কারাভোগ করেন তিনি। ১৯ নভেম্বর ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ ছিল কোলন ক্যান্সার।

পডকোপায়েভ ফ্যামিলি (সিরিয়াল কিলারদের পরিবার)
রাশিয়ান এ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। স্বামী-স্ত্রী এবং দুই কন্যা। তাদের বলা হতো ‘গ্যাংস অব অ্যামাজন’। এ পরিবার নারী এবং শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যা করেছে। এ ছাড়াও অসংখ্য ডাকাতি করেছে।

হত্যার আগে বহু ভুক্তভোগীর ওপর নির্যাতন চালাতেন তারা। তবে এ পরিবারের কন্যা ভিক্টোরিয়া দুর্ভাগ্যজনকভাবে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার সময় ধরা পড়েন। এরপর পুরো পরিবার গ্রেফতার হয়।

জোসেফ ফ্রিটজল (ধর্ষণ করেন মেয়েকে)
২০০৮ সালে ফ্রিটজল মামলাটি বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ে। যখন এলিজাবেথ ফ্রিটজল অস্ট্রিয়ার স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তার বাবা জোসেফ ফ্রিটজল ২৪ বছর ধরে বাড়ির বেজমেন্টের গুপ্ত এক ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন। ২৪ বছর ধরে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন নিজের বাবা।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, নিজ বাবার দ্বারা যৌন নির্যাতনের কারণে ৭ সন্তানকেও জন্ম দিয়েছিলেন এলিজাবেথ। এসব সন্তানের মধ্যে চার জনকে বাবা কৌশলে তার স্ত্রীর কাছে রেখে দেন। এক সন্তান অবশ্য শ্বাসকষ্টের কারণে কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায়। বাকি তিন শিশু এলিজাবেথের কাছেই ছিল।

যখন বড় মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে; তখন জোসেফ ফ্রিটজল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলিজাবেথকে অনুমতি দেন। এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি এলিজাবেথ। বিগত ২৪ বছর তিনি একটি ঘরে জীবন কাটিয়েছেন। অবশেষে মুক্তি পান তিনি। জোসেফ ফ্রিটজলকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কুখ্যাত ৪ অপরাধী পরিবারের ভয়ঙ্কর কাহিনি

আপডেট টাইম : ০৪:১৫:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিবার মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। অথচ পরিবারেই যদি অপরাধীর আনাগোনা থাকে, তাহলে বাকিরা তো পথভ্রষ্ট হবেনই! বিশ্বে তেমনই কিছু পরিবার আছে, যার সদস্যরা অপরাধ করেই আনন্দ পেয়ে থাকেন। একের পর এক খুন, ডাকাতি করে তারা বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিতও বটে!

এমনই চার কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার পরিবারের কথা জানতে পারবেন এ প্রতিবেদনে। এসব পরিবারের মধ্যে এক মা খুন করেন নিজ সন্তানকে। অন্যদিকে এক বাবা নিজের মেয়েকে ২৪ বছর বন্দি করে রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন। আবার কোনো পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

৬ সন্তানের মা ছিলেন থেরেসা নোর। সব সময় তার সন্তানদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। কখনো শারীরিকভাবে আবার কখনো মৌখিক কিংবা মানসিকভাবে সন্তানদের অপদস্থ করতেন। দাম্পত্য জীবন টেকেনি তার চারবারেও। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছে বিবাহবিচ্ছেদ।

চতুর্থ বিবাহবিচ্ছেদের পর থেরেসা আরও রাগী ও জেদি হয়ে ওঠেন। তিনি সব সময়েই নেশাগ্রস্ত থাকতেন। প্রচুর মদপান করতেন। এতে তার ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং তিনি স্বভাবে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার সব রাগ ও জেদ ছিল সন্তানদের ওপর।

jagonews24

এ কারণে তিনি ৬ সন্তানকে ঘর থেকে বাইরে যেতে দিতেন না। তাদের বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো সম্পর্কও ছিল না। এমনকি ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারতেন না তারা। বহু বছর ধরে থেরেসা তার সন্তানদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন।

এরপর মায়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুসান বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। থেরেসা পুলিশদের সাহায্যে সুসানকে বাড়িতে ফেরত আনেন। সুসান মানসিকভাবে অসুস্থ বলায় তার কথায় পুলিশও পাত্তা দেয়নি তখন। বাড়ি ফিরে আসার পর সুসান আরও নির্যাতিত হতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের বন্দুকের ২২-ক্যালিবার গুলিতে মৃত্যু হয় সুসানের। থেরেসা নোরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ম্যানসন ফ্যামিলি (সাইকোপ্যাথ পরিবার)
চার্লস ম্যানসন সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং জনপ্রিয় সিরিয়াল কিলার। একজন সংগীতজ্ঞ থেকে অপরাধী বনে যান তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চার্লস একের পর এক খুন করেছেন।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই ম্যানসনের জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কেটেছে। তার প্রাথমিক অপরাধগুলোর মধ্যে ছিল—গাড়ি চুরি, জালিয়াতিসহ ক্রেডিট কার্ড ছিনতাই। তিনি পতিতাদের দালাল হিসেবেও কাজ করেছেন।

১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি ‘দ্য ফ্যামিলি’ নামক একটি অপরাধচক্রের দলনেতা হন। তার পরিচালনায় বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। যার মধ্যে রয়েছেন চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কির সাড়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ অভিনেত্রী শ্যারন টেইট।

jagonews24

এসব হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য ম্যানসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার করকোরান স্টেট কারাগারে আজীবন কারাভোগ করেন তিনি। ১৯ নভেম্বর ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ ছিল কোলন ক্যান্সার।

পডকোপায়েভ ফ্যামিলি (সিরিয়াল কিলারদের পরিবার)
রাশিয়ান এ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। স্বামী-স্ত্রী এবং দুই কন্যা। তাদের বলা হতো ‘গ্যাংস অব অ্যামাজন’। এ পরিবার নারী এবং শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যা করেছে। এ ছাড়াও অসংখ্য ডাকাতি করেছে।

হত্যার আগে বহু ভুক্তভোগীর ওপর নির্যাতন চালাতেন তারা। তবে এ পরিবারের কন্যা ভিক্টোরিয়া দুর্ভাগ্যজনকভাবে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার সময় ধরা পড়েন। এরপর পুরো পরিবার গ্রেফতার হয়।

জোসেফ ফ্রিটজল (ধর্ষণ করেন মেয়েকে)
২০০৮ সালে ফ্রিটজল মামলাটি বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ে। যখন এলিজাবেথ ফ্রিটজল অস্ট্রিয়ার স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তার বাবা জোসেফ ফ্রিটজল ২৪ বছর ধরে বাড়ির বেজমেন্টের গুপ্ত এক ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন। ২৪ বছর ধরে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন নিজের বাবা।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, নিজ বাবার দ্বারা যৌন নির্যাতনের কারণে ৭ সন্তানকেও জন্ম দিয়েছিলেন এলিজাবেথ। এসব সন্তানের মধ্যে চার জনকে বাবা কৌশলে তার স্ত্রীর কাছে রেখে দেন। এক সন্তান অবশ্য শ্বাসকষ্টের কারণে কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায়। বাকি তিন শিশু এলিজাবেথের কাছেই ছিল।

যখন বড় মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে; তখন জোসেফ ফ্রিটজল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলিজাবেথকে অনুমতি দেন। এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি এলিজাবেথ। বিগত ২৪ বছর তিনি একটি ঘরে জীবন কাটিয়েছেন। অবশেষে মুক্তি পান তিনি। জোসেফ ফ্রিটজলকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন।