ঢাকা ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি অন্যায়ভাবে নেওয়া যাবে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ও সভ্যতার প্রাথমিক ইউনিট হলো পরিবার। পরিবারে বাস করেন মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীসহ রক্তসম্পর্কীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয় আপনজন। এদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। রক্তসম্পর্কীয় আপনজনের মধ্যে ভাই-বোন হলো সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।

বোনের ভরণ-পোষণ ও সেবা-যত্ন : বাবার অপারগতা ও অবর্তমানে বোনের লালন-পালন, উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দেওয়া ভাইয়ের দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি মেয়ে আছে অথবা তিনজন বোন আছে কিংবা দুই বোন বা দুই মেয়ে আছে, অতঃপর সে তাদের শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করে, উত্তম পাত্র দেখে বিয়ে দেয় এবং তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহার করে। তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (তিরমিজি)

অন্য হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মেয়ে সন্তানদের জন্য কোনো ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয় (বিপদগ্রস্ত হয়), সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হতে আবরণ (প্রতিবন্ধক) হবে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

সম্মতি ছাড়া বিয়েতে বাধ্য করা নয় : স্বামীর অব্যাহত অত্যাচারে অতিষ্ঠ বোনকে অনেক ভাই ভরণ-পোষণের ভয়ে জোর করে স্বামীর বাড়ি পৌঁছে দেয়। কোনো কোনো পরিবারে মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত রাখে। অনেকে তালাকের পরও বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলামের সীমার মধ্যে হলে এসব বিষয়ে বোনের ওপর বলপ্রয়োগের অধিকার ভাইকে দেওয়া হয়নি। প্রায়ই দেখা যায়, তালাকপ্রাপ্তা বোনেরা ভাইয়ের সংসারে অবজ্ঞা ও নিগ্রহের শিকার হয়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘…(তালাক ও ইদ্দতের পর) পূর্বস্বামীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে তাদের বাধা দান কোরো না। এ উপদেশ তাকেই দেওয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩২)

তাই বোনের জন্য প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে

জাবের (রা.)-এর একটি ঘটনা খুবই স্মরণীয়। রাসুল (সা.) তাঁকে বলেছেন, ‘তুমি কুমারী নারী বিয়ে না করে তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করেছ কেন? তিনি জবাব দেন, আমার বাবা মারা গেছেন। আমার ছোট ছোট কয়েকজন বোন আছে, তাদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার জন্যই আমি বয়স্ক নারী বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৭; মুসলিম, হদিস : ৭১৫)

এতে বোঝা যায়, বোনের জন্য প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে।

বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করা যাবে না : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার অধিকার দিয়ে দাও…।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)

বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে ভাইয়েরা ছলেবলে-কৌশলে বোনদের প্রাপ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ-সম্পদ নেওয়াকে সমাজের চোখে ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখা হয়। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করে, অন্য বর্ণনামতে, যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকারী সম্পত্তি নিয়ে পলায়ন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ ও মেশকাত)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যাটরিনার হাতে ২০ বার থাপ্পড় খেয়েছিলেন ইমরান খান

বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি অন্যায়ভাবে নেওয়া যাবে না

আপডেট টাইম : ০২:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ও সভ্যতার প্রাথমিক ইউনিট হলো পরিবার। পরিবারে বাস করেন মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীসহ রক্তসম্পর্কীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয় আপনজন। এদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। রক্তসম্পর্কীয় আপনজনের মধ্যে ভাই-বোন হলো সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।

বোনের ভরণ-পোষণ ও সেবা-যত্ন : বাবার অপারগতা ও অবর্তমানে বোনের লালন-পালন, উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দেওয়া ভাইয়ের দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি মেয়ে আছে অথবা তিনজন বোন আছে কিংবা দুই বোন বা দুই মেয়ে আছে, অতঃপর সে তাদের শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করে, উত্তম পাত্র দেখে বিয়ে দেয় এবং তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহার করে। তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (তিরমিজি)

অন্য হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মেয়ে সন্তানদের জন্য কোনো ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয় (বিপদগ্রস্ত হয়), সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হতে আবরণ (প্রতিবন্ধক) হবে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

সম্মতি ছাড়া বিয়েতে বাধ্য করা নয় : স্বামীর অব্যাহত অত্যাচারে অতিষ্ঠ বোনকে অনেক ভাই ভরণ-পোষণের ভয়ে জোর করে স্বামীর বাড়ি পৌঁছে দেয়। কোনো কোনো পরিবারে মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত রাখে। অনেকে তালাকের পরও বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলামের সীমার মধ্যে হলে এসব বিষয়ে বোনের ওপর বলপ্রয়োগের অধিকার ভাইকে দেওয়া হয়নি। প্রায়ই দেখা যায়, তালাকপ্রাপ্তা বোনেরা ভাইয়ের সংসারে অবজ্ঞা ও নিগ্রহের শিকার হয়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘…(তালাক ও ইদ্দতের পর) পূর্বস্বামীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে তাদের বাধা দান কোরো না। এ উপদেশ তাকেই দেওয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩২)

তাই বোনের জন্য প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে

জাবের (রা.)-এর একটি ঘটনা খুবই স্মরণীয়। রাসুল (সা.) তাঁকে বলেছেন, ‘তুমি কুমারী নারী বিয়ে না করে তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করেছ কেন? তিনি জবাব দেন, আমার বাবা মারা গেছেন। আমার ছোট ছোট কয়েকজন বোন আছে, তাদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার জন্যই আমি বয়স্ক নারী বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৭; মুসলিম, হদিস : ৭১৫)

এতে বোঝা যায়, বোনের জন্য প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে।

বোনের উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করা যাবে না : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার অধিকার দিয়ে দাও…।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)

বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে ভাইয়েরা ছলেবলে-কৌশলে বোনদের প্রাপ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ-সম্পদ নেওয়াকে সমাজের চোখে ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখা হয়। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকার সম্পত্তি গ্রাস করে, অন্য বর্ণনামতে, যে ব্যক্তি কারো উত্তরাধিকারী সম্পত্তি নিয়ে পলায়ন করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ ও মেশকাত)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।