পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না অধিকাংশ হ্যাচারি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিতে মাদার (মা বাগদা চিংড়ি) সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প। সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি আহরণকারী জাহাজ থেকে গত ১৫ দিন ধরে কক্সবাজারভিত্তিক গড়ে ওঠা হ্যাচারিগুলোতে মাদার সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় মাদার না পেয়ে পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাচারি।

এদিকে কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাচারিতে বাগদা চিংড়ি পোনার উৎপাদন না হওয়ায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের এলাকায় পোনা সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পোনার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এতে মৌসুমের শুরুতেই পোনা সংকটের কারণে চাষিরা তাদের ঘেরে পোনা ছাড়তে পারছেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পারলে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষিদের। ব্যাংক লোন নিয়ে যারা চিংড়ি চাষ করেন তারা পড়েছেন বিপাকে।

সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘের মালিক খায়রুল মোজাফ্ফর মন্টু বলেন, বাজারে পোনা সরবরাহ কম হলে দাম বেড়ে যায়। গত বছর ১ হাজার টাকায় পোনা কিনতে হয়েছিল। এমনিতে মড়কের কারণে আমরা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত, এরপর সেব নিজেদের স্বার্থে এভাবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব।

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কালাম বাবলা বলেন, ‘বাজারে পোনার সংকট হলে দাম বেড়ে যায়। ফলে চাষিদের ঘেরে পোনা ছাড়তে হিমশিম খেতে হয়। এতে চিংড়ির উত্পাদনও কমে যাবে। একই সঙ্গে কমে যাবে রপ্তানি।’ তিনি বাজারে মানসম্মত পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাদার সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাতক্ষীরাস্থ দিপা সি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীন বন্ধু মিত্র বলেন, ‘দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ আসে চিংড়ি রপ্তানি থেকে। পোনা সংকটের কারণে চিংড়ির উৎপাদন কম হলে রপ্তানিও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপর। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব)-এর একজন সদস্য জানান, গত ১৫ দিন ধরে হ্যাচারিতে মাদার সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। যে কারণে অধিকাংশ হ্যাচারি পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না।

মাদার সাপ্লাইকারী জাহাজ ব্যবসায়ী, মাদার বহনকারী কার্গো অ্যাসোসিয়েশন ও ফিড ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেব-এর কয়েক জনের যোগসাজশে পুরো ব্যবসাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তারা কোটা করে প্রতিটি মাদারে কমিশন নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হ্যাচারিতে মাদার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যে কারণে কক্সবাজার ভিত্তিক ৫৬টি হ্যাচারির মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২৩টি। তিনি আরো বলেন, এভাবে ১৫ দিন মাদার বন্ধ থাকার কারণে চাষিরা আগামী এক মাস পোনা পাবে না। ফলে বাজারে পোনা সরবরাহ না হলে ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক রাজকুমার বিশ্বাস জানান, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর আয়তনের জমিতে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৪০ চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রতি মৌসুমে এসব ঘেরে মোট পোনার চাহিদা রয়েছে ৩৫১ কোটি। সেব যদি কোটার মাধ্যমে বাজারে পোনা সরবারহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তাহলে এই অঞ্চলে পোনা সংকটের সৃষ্টি হবে। ফলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাছের উৎপাদনও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো চিংড়ি শিল্পের ওপর।

‘শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব)-এর মহাসচিব নজিবুল ইসলাম গত ১৫ দিন ধরে মাদার (মা বাগদা চিংড়ি) সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হ্যাচারিগুলোতে মাদার ফুলফিল হয়ে গেছে। এখন স্টকিং করার জায়গা নেই। যে কারণে জাহাজগুলো মাদার আহরণ না করে সাদা মাছ আহরণে চলে গেছে। এছাড়া তারা মাদারের দামও একটু বাড়ানোর কথা বলেছে। আমরা বলেছি, তারা এলে এ ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর