হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক সময়ের টগবগে যুবক জয়নাল আবেদীন আজ বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছেন। ১৯৬৩ সালে তিনি দিনাজপুর ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়ার পাশাপশি শিক্ষকতা করতেন। থাকতেন সদর উপজেলার দক্ষিণ ঠাকুরগাঁও ও বকসের হাট এলাকায়।
বকসের হাট, বড়গাঁও মাদরাসা, কাচারী বাজার, ফাঁড়াবাড়ী, কদম রসুল, আখানগর, দক্ষিণ বোচাপুকুর স্কুলে শিক্ষকতা করতেন জয়নাল আবেদীন। পরে পাকিস্তান আমলে ফাঁড়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ওইসময় বিদ্যালয়ের টাকা-পয়সা না থাকার পরও বিনাবেতনে শিক্ষকতা করেন। স্কুলের কাজে টাকা ধার করে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে যেতেন।
সর্বশেষ সদর উপজেলার খড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সেক্রেটারি হিসেবে রাজশাহী ডিজি বরাবরে দরখাস্ত করেন। স্কুলে পাঠদানের অনুমতি গ্রহণসহ বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ করেন। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অজ্ঞাত কারণে অমানবিকভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করে। এ ঘটনায় তিনি আদালতের আশ্রয় নেন।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমাকে অবৈধভাবে সাসপেন্ড করা হলে আমি ডিসি কোর্টে মামলা করি। ওই কেসে আমার সঙ্গে পারেনি ওরা। পরে মহকুমা শিক্ষা অফিসার এসে ডিসমিস করে এবং প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য করে আরও কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়। আমাকেও সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে আমি যোগদান করিনি।’
মামলা চালাতে চালাতে সহায় সম্বলহীন এই মানুষ গড়ার কারিগর আজ নিঃস্ব। মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন রোগে তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। পরনে ময়লা কাপড়। থাকার ঘর, চিকিৎসা করার মতো টাকা-পয়সা কোনোটাই তার নেই। চিরকুমার এই অসহায় মানুষটিকে শেষ বয়সে দেখারও কেউ নেই। সারাদিন পরে থাকেন সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন বকসের হাটে। সেখানে ময়লা আবর্জনায় শুয়ে দিন কাটান।
এ ব্যাপরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পরিত্যক্ত ঘরে জয়নাল আবেদীন নামে একজন শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিষযটি গণমাধ্যমের সহায়তায় জানতে পেরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ নিই। ওই ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা প্রদানসহ প্রধানমন্ত্রীর আবাস প্রকল্পের আওতায় তাকে একটি ঘর প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সর্বোপরি চাকরি হারানোর বিষয়েও সহযোগিতা চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।