ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিয়মিত রক্তস্রাব কেন হয়, কী করবেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব নারীর শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বৃদ্ধা বাদে প্রাপ্তবয়স্ক সব নারীই ঋতুস্রাব সমস্যায় ভোগেন। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সন্তান ধরনেও বাধা আসতে পারে।

শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে৷ এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সমাধান মিলবে।

অনিয়মিত রক্তস্রাব কী

প্রতি চন্দ্র মাস পর পর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। মাসিক চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর যাদের এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয় না অথবা দুই মাস আবার কখনও চার মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। আবার অনেক সময় পিরিয়ড হলেও তার পর মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে।

আসুন জেনে নিই নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয়?

১. জরায়ুতে মায়োমা বা টিউমার থাকার কারণে মেয়েদের পিরিয়ডের সময় খুব বেশি ব্লিডিং ও ব্যথা হয়ে থাকে৷ তা ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে টিউমারের সংখ্যা একাধিকও হতে পারে, যা খুব দ্রুত বড় হয়ে যেতে পারে৷ এই অবস্থায় অপারেশন করা জরুরি, বিশেষ করে যারা মা হতে চান৷
২. ডিম্বাশয় বা ওভারিতে ‘সিস্ট’ হওয়ার কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে৷ সিস্ট হয়ে থাকে নানা আকারের। এগুলোর ভেতরে রক্ত ও পানির মতো পদার্থ থাকে।
৩. যোনির আশপাশের নরম ত্বকে এবং জরায়ুর প্রবেশপথেও ছোট ছোট শক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে৷ এটি সাধারণত মেয়েদের হরমোন এস্ট্রোজেন বা ইস্ট্রোজেনের কারণেই হয়ে থাকে৷ এ ক্ষেত্রেও ফুসকুড়ি অপারেশন করে বের করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ৷

৪. জন্মনিয়ন্ত্রক পিল পিরিয়ডের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মাসিক চক্রকে হালকা করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।

৫. গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, থাইরয়েড সমস্যা হলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

৬. হঠাৎ অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে। স্বল্পসময়ের মধ্যে ওজন বাড়লে তা শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে যৌন হরমোনও অন্তর্ভুক্ত। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।

যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে

অনিয়মিত রক্তস্রাবের কারণে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া ও মাতৃত্বের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এ নারীরা অনেক সময় ইচ্ছে করলেও গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাদের বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত মাসিক অবস্থায় সন্তান আসা কঠিন। কেননা অনিয়মিত মাসিক মানে তার ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ফুটছে না। তাই সন্তান নিতে হলে ওষুধ দিয়ে মাসিক নিয়মিত করতে হবে।

চিকিৎসা কী

রোগের কারণ নির্ণয় করার পর সঠিক চিকিৎসা নিলে আবার নিয়মিত মাসিক শুরু হবে। যদি ডিম্বাশয়, জরায়ু বা পিটুইটারি গ্রন্থিতে গঠনগত কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পরবর্তী সময়ে মা হওয়ার ক্ষেত্রেও এটি কোনো বাধা নয়।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি), খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অনিয়মিত রক্তস্রাব কেন হয়, কী করবেন

আপডেট টাইম : ০৪:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব নারীর শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বৃদ্ধা বাদে প্রাপ্তবয়স্ক সব নারীই ঋতুস্রাব সমস্যায় ভোগেন। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সন্তান ধরনেও বাধা আসতে পারে।

শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে৷ এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সমাধান মিলবে।

অনিয়মিত রক্তস্রাব কী

প্রতি চন্দ্র মাস পর পর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। মাসিক চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর যাদের এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয় না অথবা দুই মাস আবার কখনও চার মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। আবার অনেক সময় পিরিয়ড হলেও তার পর মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে।

আসুন জেনে নিই নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয়?

১. জরায়ুতে মায়োমা বা টিউমার থাকার কারণে মেয়েদের পিরিয়ডের সময় খুব বেশি ব্লিডিং ও ব্যথা হয়ে থাকে৷ তা ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে টিউমারের সংখ্যা একাধিকও হতে পারে, যা খুব দ্রুত বড় হয়ে যেতে পারে৷ এই অবস্থায় অপারেশন করা জরুরি, বিশেষ করে যারা মা হতে চান৷
২. ডিম্বাশয় বা ওভারিতে ‘সিস্ট’ হওয়ার কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে৷ সিস্ট হয়ে থাকে নানা আকারের। এগুলোর ভেতরে রক্ত ও পানির মতো পদার্থ থাকে।
৩. যোনির আশপাশের নরম ত্বকে এবং জরায়ুর প্রবেশপথেও ছোট ছোট শক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে৷ এটি সাধারণত মেয়েদের হরমোন এস্ট্রোজেন বা ইস্ট্রোজেনের কারণেই হয়ে থাকে৷ এ ক্ষেত্রেও ফুসকুড়ি অপারেশন করে বের করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ৷

৪. জন্মনিয়ন্ত্রক পিল পিরিয়ডের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মাসিক চক্রকে হালকা করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।

৫. গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, থাইরয়েড সমস্যা হলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

৬. হঠাৎ অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে। স্বল্পসময়ের মধ্যে ওজন বাড়লে তা শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে যৌন হরমোনও অন্তর্ভুক্ত। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।

যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে

অনিয়মিত রক্তস্রাবের কারণে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া ও মাতৃত্বের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এ নারীরা অনেক সময় ইচ্ছে করলেও গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাদের বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত মাসিক অবস্থায় সন্তান আসা কঠিন। কেননা অনিয়মিত মাসিক মানে তার ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ফুটছে না। তাই সন্তান নিতে হলে ওষুধ দিয়ে মাসিক নিয়মিত করতে হবে।

চিকিৎসা কী

রোগের কারণ নির্ণয় করার পর সঠিক চিকিৎসা নিলে আবার নিয়মিত মাসিক শুরু হবে। যদি ডিম্বাশয়, জরায়ু বা পিটুইটারি গ্রন্থিতে গঠনগত কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পরবর্তী সময়ে মা হওয়ার ক্ষেত্রেও এটি কোনো বাধা নয়।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি), খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ।