ঢাকা ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষি কাজ করে জীবন যুদ্ধে সফল নারী বগুড়ার সাফিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মে ২০১৫
  • ৫৮৩ বার

তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। বিদেশের মাটিতে স্বপ্ন বুনা হয় নি। নানা কারণেই অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়ে তার পরিবার। পরিবারের সদস্যরা টাকা পয়সা খরচ করে বিদেশ থেকে স্বামী আব্দুল লতিফকে ফিরিয়ে আনেন সাফিয়া বেগম। বিদেশ থেকে ফিরে আসার সাথে সাথে তাদের স্বচ্ছলতা হওয়ার স্বপ্নও ফিরে আসে। সংসারে তাদের জটিল সমীকরণ। অন্ধকার যখন চারপাশ থেকে ছেয়ে আসছে তখন তার মনে আবারো নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে দেয় কৃষিজমি। সে কৃষিজমিতে কাজ করে সংসারে ফিরে এনেছেন স্বচ্ছলতা। দেশের মাটিতে স্বপ্নবুনে সাফিয়া বেগম এখন জীবন যুদ্ধে সফল নারী।

জানা যায়, বগুড়া সদরের রাজাপুর গোবরধনপুর পূর্ব পাড়ার আব্দুল লতিফের স্ত্রী সাফিয়া বেগম। সংসারে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচের সাথে সংসার চলাতে হিমশিম খেয়ে ফেলেন সাফিয়া বেগম। তার স্বামী আব্দুল লতিফ বেশি আয়ের আশায় ২০০৮ সালের দিকে বিদেশ যান। কিন্তু, সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। অসুস্থ্য স্বামীকে টাকা পয়সা খরচ করে দেশে ফিরিয়ে আনেন। স্বামী ফিরে এলেও স্বচ্ছলতা আর ফিরে আসে না।

সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত। এর সাথে যোগ হয় স্বামীর অসুস্থ্যতা। উপায় না পেয়ে নিজেই পরিবারের সহযোগিতায় জমিতে কৃষি কাজের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন ফসলের সাথে সময়উপযোগী সবজি চাষ শুরু করেন। সবজি চাষে প্রথম বছর তেমন সফলতা নো পেলেও হাল ছাড়েন নি সাফিয়া বেগম।

কৃষি অফিস, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রাম ফর ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (পেস্ড) এর কাছ থেকে নারী কৃষক বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় আবারো কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। সাফিয়া বেগমের স্বামী আব্দুল লতিফ ও ছেলে সাফিউল আলিম বাহার তাকে সহযোগিতা করে। সাফিয়া বেগম ধান, পোটল, কচু শাক, শীতকালিন সবজি চাষ করেন। চলতি মৌসুমে সে প্রায় ১ বিঘা জমিতে পোটল চাষ করেছেন। পোটল ক্ষেত তৈরী করতে তার প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সাফিয়া বেগম আশা করছেন পোটল ক্ষেত থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার পোটল বিক্রি করবেন। সাফিয়া বেগম বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে কাঁচামালামাল বিক্রেতাদের কাছে পোটল বিক্রি করেন। কর্তমান বাজারে পাইকারি পোটল বিক্রি করেন ২০ টাকা কেজি এবং খুচরা বাজারে বিক্রি করেন ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি।

সাফিয়া বেগমের স্বামী আব্দুল লতিফ জানান, বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে পোটল বিক্রি করা হয়ে থাকে। ক্ষেত থেকে ২ দফা পোটল বিক্রি করা হয়েছে। পোটল ক্ষেতসহ সবজি চাষের বিষয়গুলো স্ত্রী সাফিযা বেগম করে থাকেন।

সাফিয়া বেগম জানান, কৃষি কাজের প্রেরনা পেয়েছে প্রোগ্রাম ফর ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (পেস্ড) এর অফিস কর্মকর্তদের কাছ থেকে। বাজারে কৃষি পন্য পরিবহন বিক্রি, কৃষিকাজ করা সবজি উৎপাদনের বিষয় শিখিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা পেয়ে কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হয়। তিনি পরিবারের সহযোগিতা আছে বলেই কাজ করতে পারছি।

তিনি জানান, বাজারে নারী কৃষকদের দের জন্য আলাদা স্থান করে দিলে ভাল হতো। আর যদি না করা হয় তবে বাজারে নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষি কাজ করে জীবন যুদ্ধে সফল নারী বগুড়ার সাফিয়া

আপডেট টাইম : ০৬:৪১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মে ২০১৫

তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। বিদেশের মাটিতে স্বপ্ন বুনা হয় নি। নানা কারণেই অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়ে তার পরিবার। পরিবারের সদস্যরা টাকা পয়সা খরচ করে বিদেশ থেকে স্বামী আব্দুল লতিফকে ফিরিয়ে আনেন সাফিয়া বেগম। বিদেশ থেকে ফিরে আসার সাথে সাথে তাদের স্বচ্ছলতা হওয়ার স্বপ্নও ফিরে আসে। সংসারে তাদের জটিল সমীকরণ। অন্ধকার যখন চারপাশ থেকে ছেয়ে আসছে তখন তার মনে আবারো নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে দেয় কৃষিজমি। সে কৃষিজমিতে কাজ করে সংসারে ফিরে এনেছেন স্বচ্ছলতা। দেশের মাটিতে স্বপ্নবুনে সাফিয়া বেগম এখন জীবন যুদ্ধে সফল নারী।

জানা যায়, বগুড়া সদরের রাজাপুর গোবরধনপুর পূর্ব পাড়ার আব্দুল লতিফের স্ত্রী সাফিয়া বেগম। সংসারে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচের সাথে সংসার চলাতে হিমশিম খেয়ে ফেলেন সাফিয়া বেগম। তার স্বামী আব্দুল লতিফ বেশি আয়ের আশায় ২০০৮ সালের দিকে বিদেশ যান। কিন্তু, সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। অসুস্থ্য স্বামীকে টাকা পয়সা খরচ করে দেশে ফিরিয়ে আনেন। স্বামী ফিরে এলেও স্বচ্ছলতা আর ফিরে আসে না।

সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত। এর সাথে যোগ হয় স্বামীর অসুস্থ্যতা। উপায় না পেয়ে নিজেই পরিবারের সহযোগিতায় জমিতে কৃষি কাজের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন ফসলের সাথে সময়উপযোগী সবজি চাষ শুরু করেন। সবজি চাষে প্রথম বছর তেমন সফলতা নো পেলেও হাল ছাড়েন নি সাফিয়া বেগম।

কৃষি অফিস, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রাম ফর ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (পেস্ড) এর কাছ থেকে নারী কৃষক বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় আবারো কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। সাফিয়া বেগমের স্বামী আব্দুল লতিফ ও ছেলে সাফিউল আলিম বাহার তাকে সহযোগিতা করে। সাফিয়া বেগম ধান, পোটল, কচু শাক, শীতকালিন সবজি চাষ করেন। চলতি মৌসুমে সে প্রায় ১ বিঘা জমিতে পোটল চাষ করেছেন। পোটল ক্ষেত তৈরী করতে তার প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সাফিয়া বেগম আশা করছেন পোটল ক্ষেত থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার পোটল বিক্রি করবেন। সাফিয়া বেগম বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে কাঁচামালামাল বিক্রেতাদের কাছে পোটল বিক্রি করেন। কর্তমান বাজারে পাইকারি পোটল বিক্রি করেন ২০ টাকা কেজি এবং খুচরা বাজারে বিক্রি করেন ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি।

সাফিয়া বেগমের স্বামী আব্দুল লতিফ জানান, বগুড়া শহরের কলোনী বাজারে পোটল বিক্রি করা হয়ে থাকে। ক্ষেত থেকে ২ দফা পোটল বিক্রি করা হয়েছে। পোটল ক্ষেতসহ সবজি চাষের বিষয়গুলো স্ত্রী সাফিযা বেগম করে থাকেন।

সাফিয়া বেগম জানান, কৃষি কাজের প্রেরনা পেয়েছে প্রোগ্রাম ফর ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (পেস্ড) এর অফিস কর্মকর্তদের কাছ থেকে। বাজারে কৃষি পন্য পরিবহন বিক্রি, কৃষিকাজ করা সবজি উৎপাদনের বিষয় শিখিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা পেয়ে কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হয়। তিনি পরিবারের সহযোগিতা আছে বলেই কাজ করতে পারছি।

তিনি জানান, বাজারে নারী কৃষকদের দের জন্য আলাদা স্থান করে দিলে ভাল হতো। আর যদি না করা হয় তবে বাজারে নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।