ত্রিশাল পৌর নির্বাচন: আসছে নতুন প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছ-ই ফ্যাক্টর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৌরসভার নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই তৎপর হয়ে উঠেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পৌরসভার মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিল পদে প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই জনসংযোগ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর ঘোষণায় হিসাব-নিকাশ পাল্টাতে শুরু করেছে ত্রিশাল পৌর নির্বাচনের। গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা দু’দলের প্রার্থীদের কেউ-ই এবারের মনোনয়নই চাচ্ছেন না। আসতে পারে নতুন মুখ। প্রার্থীদের থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারের মাঝে একটাই আলোচনা বর্তমান মেয়র আনিছই ফ্যাক্টর।

১৯৯৮ সালে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা থেকে ২০১২ সালে ত্রিশাল পৌরসভাকে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করেন দুবার নির্বাচিত বর্তমান মেয়র আনিছ। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর টানা দুইবার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া নেতা আব্দুর রশীদ চেয়ারম্যান। তার মৃত্যুর পর মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ। এর মধ্যে একবার দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করলেও পরের বার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন তিনি।

ত্রিশাল পৌরসভা সৃষ্টিলগ্ন থেকে আঞ্চলিকতায় ত্রিশাল ও রামপুর এ দুভাগে বিভক্ত। শুরু থেকেই দলীয় চিন্তার চেয়ে আঞ্চলিকতায় প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ভোটাররা। বর্তমান ত্রিশাল পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ১৪টি ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ত্রিশাল এলাকায় ৮টি কেন্দ্রে মোট ভোটার প্রায় ১৬ হাজার আর রামপুর অংশে ৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার প্রায় ১২ হাজার। চার হাজার আঞ্চলিক ভোটে এগিয়ে ত্রিশাল অংশের প্রার্থীরা। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সকলেই রামপুর অংশে হওয়ায় আভ্যন্তরীন কোন্দল আর বর্তমান মেয়রের ভোট ব্যাংকের কাছে জয়ী হবার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন দু’পাড়ের ভোটাররা। পৌরসভা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনবারই মেয়র পদে বিজয়ী হতে পারেনি রামপুর অংশের প্রার্থীরা। ত্রিশাল অংশে হেভিওয়েট একাধিক প্রার্থী থাকলেও রামপুর অংশ থেকে ভোট নিয়েই বিজয়ী হন ত্রিশাল অংশের প্রার্থীরা। গত নির্বাচনে রামপুর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জুয়েল সরকার স্থানীয় প্রভাবে ও নিজেদের ভোটারদের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অধিকাংশই বিদ্রোহী প্রার্থী আনিছের পক্ষে অবস্থান করায় শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জুয়েল সরকারের নেতৃত্বে যখন রামপুর আঞ্চলিক ঐক্য হয়নি, আর কখনো এই ঐক্য নিয়ে এখানে মেয়র নির্বাচিত হওয়া অসম্ভব। তাছাড়া বর্তমান মেয়র ব্যাপক উন্নয়ন কাজ আর রামপুর অংশকে উন্নয়নে প্রধান্য দেওয়ায় এই অংশের ভোটাররা তাকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যান। তবে এবার জুয়েল সরকার মনোনয়ন চাইবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

দলীয় প্রধানের ঘোষণার পরও হাল ছাড়েননি বর্তমান মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান। দলীয় মনোনয়ন পেতে হায়কমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যান্য প্রার্থীরা। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ সরকার দলীয় মনোনয়ন পেতে হায়কমান্ডে লবিং থেকে শুরু করে চষে বেরাচ্ছেন পৌরসভার এক ওয়ার্ডে থেকে অন্য ওয়ার্ডে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বেশ কয়েকদিন ধরে। বিশেষ করে দলীয় প্রধানের কঠোর ঘোষণার থেকে এ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রতাশার ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছেন অনেক বেশি। এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান সাংসদ হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদ। বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে তিনি মনোনয়ন চাওয়ার পাশাপাশি ত্রিশাল পৌরসভার নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে আসতে হাসানের বিকল্প কেউ নেই বলে জানিয়েছেন তার সমর্থনের একাধিক নেতা।

বর্তমান মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ বলেন, গত দশ বছরের ত্রিশাল পৌরসভায় রেকর্ড সংখ্যক দেড় শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ত্রিশাল পৌর শহরের কোন রাস্তায় হাঁটু সমান কাদা ছাড়া কোনো রাস্তা ছিল না। বর্তমানে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের এমন কোনো অলিগলি খোজে পাওয়া যাবে না যেখানে আরসিসি রাস্তা নেই। গতবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জনগণ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপেই সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নবী নেওয়াজ সরকার বলেন, আমি দলীয় সমর্থন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো। রামপুর ত্রিশালে বিভেদ দুর করে নিজের বুক বিছিয়ে দিয়ে নদী ভরাট করে এক পাল্লায় নিয়ে এস নৌকাকে বিজয়ী করব।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, বর্তমান মেয়রের নিজস্ব বলয়ে পৌরসভা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। তার একছত্র আধিপত্য আর স্বেচ্ছাচারিতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পৌরসভার উন্নয়ন। নাগরিক সেবা থেকে শুরু সব দিক থেকে পিছিয়ে পরা পৌরসভাকে এগিয়ে নিতে ও দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছি। দলীয় প্রতীক পেলে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নেত্রীকে উপহার দেয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা না গেলেও দুজন প্রার্থী নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবায়েত হোসেন শামীম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আমিনুল ইসলাম খোকন। গতদুবার বিএনপির সমর্থন নেয়া প্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমিন এবার নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন না বলে জানিয়েছেন তার একাধিক ঘনিষ্টসুত্র। এ ব্যাপারে তার সাথে একাধিক যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ত্রিশাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেন, পৌর বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আমিনুল ইসলাম খোকন ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানায়নি। নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের পরই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর