ভ্রাম্যমান আদালতে হামলার পর দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ

বিজয় দাস নেত্রকোনাঃ বুধবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে আহত করেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বেরী নদীতে অবধৈভাবে বালু উত্তোলনকারী শ্রমিকরা। তারপর থেকে এ নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ পরিচালিত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় আদালতের নির্দেশে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পঞ্চাশটি অবৈধ ড্রেজার মেশিন। তারই সাথে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা অবধি বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্য দেয়া হয় নির্দেশ।

তিনি জানান, দুপুরে ঘাটে গেলে প্রথমে বালু উত্তোলন বন্ধ করে কথা বলতে বলা হয়। এতেই চরমভাবে তারা ক্ষেপে যান এমনকি কিছু বুঝার আগেই বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়ে মারতে থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত টিমের সদস্যদের লক্ষ্য করে। এসময় পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হন ছয়জন।

বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) নদীর ১ নম্বর বালু ঘাটে হামলার শিকার হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত টিমের সদস্যরা। দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ নূর এ আলম জানিয়েছেন, ওই ঘাটটির ইজারাদার সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী।

তিনি জানান, হামলায় উপ-পরিদর্ক (এসআই) মো. রুকন উদ্দিন, পুলিশ সদস্য খলিলুর রহমান, রুবেল মিয়া, দুর্গাপুর ভূমি অফিস কর্মচারী নজরুল ইসলাম, এরশাদুল ইসলামসহ ঘাটের শ্রমিক রফিক ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আহতদেরকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

এক নম্বর বালু মহাল ব্যতিত অন্যান্য ইজারাদাররা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতেই শুধু হামলা নয়, এই এক নম্বর ঘাট থেকে বালু মহালের সীমানা নিয়েও চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে সৃষ্টি করেছিলো জটিলতা। পরে এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের থেকে জেলা প্রশাসন বরাবর করা হয়েছিলো অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিলো সংবাদ। যদিও সংবাদ মাধ্যম থেকেই জানা যায়, এ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন অভিযুক্তরা।

এতো গেলো বালু মহাল বা ইজারাদারদের কথা। এবার আসা যাক যেখান থেকে করা হয় বালু উত্তোলন সেই উপজেলা বা এলাকার মানুষরা কেমন আছেন? চব্বিশ ঘন্টার ড্রেজার চালানোর শব্দ আর ছুটে চলা ছোট বড় অসংখ্য পিকআপ ভ্যান, ট্রাক আর ট্রলি কেমন রেখেছে তাদের? এমন প্রশ্নে ছোট-বড় সকলেই কেবল দীর্ঘশ্বাসই ফেললেন শুধু। খানিক নীরবতার পর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্বোমেশ্বরীর বালু-পাথর বা কয়লা উত্তোলন আর পরিবহন কারো কারো জন্য সৌভাগ্যের চাবিকাঠি হলেও গোটা উপজেলাবাসীর জন্য দুরারোগ্য এক ব্যধি।

বলতে গেলে কেউ-ই করছেন না নিয়মনীতির তোয়াক্কা। যে যার ইচ্ছেমতো চালাচ্ছেন এ ব্যবসা। এতে করে অতিষ্ঠ জনজীবন। ধ্বংসের মুখে পরিবেশ প্রকৃতি। আর বেপরোয়া যানগুলোর চালকের হাতে স্টিয়ারিং থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাচ্ছে অসহায় মানুষ। সংশ্লিষ্টদের স্বার্থের কাছে মূল্যহীন মনুষ্যজীবন। গুটি কয়েক অপ্রতিরোধ্য বালু ব্যবসায়ীদের কাছে দীর্ঘদিন জিম্মি গোটা উপজেলাবাসী। নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা পরিচালনার দাবিতে মাঠে নামলে সেখোনেও ব্যবসায়ীসহ তাদের পোষ্য লোকেরা দাবি জানানো স্কুল ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ওপর চালান হামলা!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর