নিপাহ ভাইরাস: বাংলাদেশকে মার্কিন গবেষকদের সতর্কতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পুরো বিশ্বই এক গভীর সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে ভাইরাসটির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এমন অবস্থার মধ্যে এবার বাংলাদেশকে আরো একটি দুঃসংবাদ দিলেন মার্কিন গবেষকরা।

তারা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত ও এশিয়া অঞ্চলে ‘নিপাহ ভাইরাস’ আরো একটি মহামারির কারণ হতে পারে। এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সংক্রামক। যেকোনো সময় যেকোনো অঞ্চলের জনবসতির ভেতর ব্যাপক আকারে এটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এটি নিয়ে গবেষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএএনএস) এবং প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেক্সশাস ডিজিজেসের পরিচালক এবং বিখ্যাত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি।

তারা দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। এতে বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির এমন স্ট্রেইন পেয়েছেন, যা এই বিপদের কারণ হতে পারে। গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হয়। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অনুমোদন দেয়া হয় এবং জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে গত ২ নভেম্বর।

প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেছেন, ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সংক্রমণের সহজ স্ট্রেইন তৈরি হয়ে যাচ্ছে। নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর দেখা দেয় এবং প্রাণঘাতী এই রোগটির এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দক্ষিণ ভারতের কেরালায় ২০১৮ সালে ১৮ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনই মৃত্যুবরণ করেন। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ।

২০০১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। গত ১৮ বছরে ৩০৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তারা নানা ধরনের স্নায়ুগত জটিলতায় ভুগছেন।

এই রোগের লক্ষণ জ্বর, মাথা ধরা, পেশির যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব ও ফুসফুসের সংক্রমণ। সাধারণত শীতকালে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাদুড়ের প্রস্রাবের মাধ্যমে ভাইরাসটি খেজুরের রসে মেশে এবং সেখান থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে বলে এতদিন ধারণা ছিল। তবে এখন বিজ্ঞানীরা ভিন্ন কথা বলছেন।

তাদের সাম্প্রতিক এই গবেষণায় বলা হয়েছে, যে সব অঞ্চলে খেজুর গাছ নেই সেখানেও রোগটি দেখা গেছে। এমনকি এমনও রোগী পাওয়া গেছে, যারা কখনই খেজুরের রস পান করেননি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর