ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজী সেলিমের ছেলের নিয়ন্ত্রণে চলতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর অপরাধ জগত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • ২৩২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলিশান বাড়ি। যেন এক রাজপ্রাসাদ। এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের অপরাধ জগত। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো পুরান ঢাকা। চলতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী। আর এজন্য গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী এক ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক।

র‌্যাবের অভিযানে বেড়িয়ে এসেছে এসব তথ্য। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় চকবাজারের ‘দাদা বাড়ি’ নামের সেই ভবনে শুরু হয় র‌্যাবের অভিযান। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অভিযানের সময় হাজী সেলিম বাসায় ছিলেন না।

অভিযানে মেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, মদের বোতল, বিয়ার, বিপুল পরিমাণ ওয়াকিটকি, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও হ্যান্ডকাফ।

এ ছাড়া বেডরুম থেকে উদ্ধার করা হয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। একটি গুলিসহ পিস্তল, আরেকটি বন্দুক। এগুলোর লাইসেন্স নেই। উদ্ধার করা হয় শক্তিশালী অবৈধ ড্রোন, যেটা আমদানি করতে সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি লাগে।

অপরদিকে ইরফান সেলিমের দেহরক্ষী জাহিদের কাছে ৪০০ পিস ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র পাওয়া যায়।

ইরফান ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দ্বিতীয় ছেলে। এছাড়া তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আর নোয়াখালীর এক এমপির জামাতা।

অভিযান শেষে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ইরফান সেলিমের বাসা থেকে পাঁচ-ছয় লিটার বিদেশি মদ, ১০ বোতল বিদেশি বিয়ার, ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ওয়াকিটকির মাধ্যমে এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন ইরফান সেলিম। এর মাধ্যমে তিনি এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি করতেন। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন। এসব ওয়াকিটকি মূলত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ওই বাড়ির পাশে ইরফান সেলিমের একটি টর্চার সেলের সন্ধান মেলে। সেখানে তার প্রতিপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নির্যাতন করা হতো। তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। সেখানে মেলে হাতকড়া।

এদিকে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখা ও ব্যবহারের দায়ে ইরফান সেলিমকে ছয় মাস এবং মদ পান করার জন্য আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মোট এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার দেহরক্ষী জাহিদকেও একই দণ্ড দেওয়া হয়। এই দণ্ডের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করবে র‌্যাব।

এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে বেধড়ক মারধর করেন হাজী সেলিমের ছেলে। এসময় ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়। মামলার মূল আসামি হলেন ইরফান।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর সেই গাড়ি থেকে কয়েক ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করে। এতে তার দাঁত ভেঙে যায়। এসময় তার স্ত্রী বাঁচাতে এলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। গাড়িটি ছিল হাজী সেলিমের। তবে ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাজী সেলিমের ছেলের নিয়ন্ত্রণে চলতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর অপরাধ জগত

আপডেট টাইম : ১০:১৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলিশান বাড়ি। যেন এক রাজপ্রাসাদ। এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের অপরাধ জগত। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো পুরান ঢাকা। চলতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী। আর এজন্য গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী এক ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক।

র‌্যাবের অভিযানে বেড়িয়ে এসেছে এসব তথ্য। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় চকবাজারের ‘দাদা বাড়ি’ নামের সেই ভবনে শুরু হয় র‌্যাবের অভিযান। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অভিযানের সময় হাজী সেলিম বাসায় ছিলেন না।

অভিযানে মেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, মদের বোতল, বিয়ার, বিপুল পরিমাণ ওয়াকিটকি, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও হ্যান্ডকাফ।

এ ছাড়া বেডরুম থেকে উদ্ধার করা হয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। একটি গুলিসহ পিস্তল, আরেকটি বন্দুক। এগুলোর লাইসেন্স নেই। উদ্ধার করা হয় শক্তিশালী অবৈধ ড্রোন, যেটা আমদানি করতে সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি লাগে।

অপরদিকে ইরফান সেলিমের দেহরক্ষী জাহিদের কাছে ৪০০ পিস ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র পাওয়া যায়।

ইরফান ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দ্বিতীয় ছেলে। এছাড়া তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আর নোয়াখালীর এক এমপির জামাতা।

অভিযান শেষে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ইরফান সেলিমের বাসা থেকে পাঁচ-ছয় লিটার বিদেশি মদ, ১০ বোতল বিদেশি বিয়ার, ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ওয়াকিটকির মাধ্যমে এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন ইরফান সেলিম। এর মাধ্যমে তিনি এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি করতেন। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন। এসব ওয়াকিটকি মূলত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ওই বাড়ির পাশে ইরফান সেলিমের একটি টর্চার সেলের সন্ধান মেলে। সেখানে তার প্রতিপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নির্যাতন করা হতো। তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। সেখানে মেলে হাতকড়া।

এদিকে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখা ও ব্যবহারের দায়ে ইরফান সেলিমকে ছয় মাস এবং মদ পান করার জন্য আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মোট এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার দেহরক্ষী জাহিদকেও একই দণ্ড দেওয়া হয়। এই দণ্ডের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করবে র‌্যাব।

এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে বেধড়ক মারধর করেন হাজী সেলিমের ছেলে। এসময় ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়। মামলার মূল আসামি হলেন ইরফান।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর সেই গাড়ি থেকে কয়েক ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করে। এতে তার দাঁত ভেঙে যায়। এসময় তার স্ত্রী বাঁচাতে এলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। গাড়িটি ছিল হাজী সেলিমের। তবে ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন।