হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের মির্জাপুর ইউনিয়নের যতরপুর ও শহশ্রী এলাকায় কচুরিপানার জন্য প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে তিন বছর ধরে বোরো ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। হাওরের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভাঙা থাকায় গোপলা নদী দিয়ে কচুরিপানা এখানে এসে জমে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, যতরপুর গ্রামসংলগ্ন এলাকায় জমে আছে কচুরিপানা। তিন বছর ধরে কচুরিপানা জমে থাকার কারণে জায়গাটি প্রায় জঙ্গল হয়ে গেছে। অন্যদিকে শহশ্রী গ্রামের গোপলা নদীর পশ্চিম পাশের বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় সেখান দিয়ে পানি ঢুকেছে। ফলে হাওরের পাশাপাশি নিচু খেতগুলোতে কচুরিপানা জমে গেছে। যতরপুর গ্রামের কৃষক মসুদ মিয়া বলেন, ‘হাইল হাওরের এই জায়গাটায় আমরা বোরো ধান চাষ করি। এই বোরো ধানই আমাদের রোজগারের পথ। তিন বছর ধরে আমরা ধান চাষ করতে পারছি না।
বারবার অনেক জায়গায় আবেদন করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। ধান চাষ না করায় আমাদের ঘরে খাবার নেই। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’ সরজমিনে দেখা যায়, হাইল হাওরের যতরপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৮ শত বিঘা জমিতে জমে আছে কচুরিপানা। কচুরিপানাগুলো প্রায় তিন বছর ধরে জমে থাকায় এই বিশাল আয়তনের জায়গাটি কৃষির অনুপযুক্ত হয়ে পরিত্যক্ত ভূমিতে রূপ নিচ্ছে।
যতরপুর গ্রামের কৃষক মসুদ মিয়া জানান, কচুরিপানার কারণে বিগত তিন বছর ধরে পতিত প্রায় ৪শ’ বিঘা জমি। একই গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, এখনই কচুরিপানাগুলো সরিয়ে না দিলে এ বছরও ওই জমি পতিত থাকবে। তিনি জানান, এই গ্রামটি এমনিতেই দারিদ্র্যপীড়িত। এ বছরও ক্ষেত করতে না পারলে এতে কৃষকরা পথে বসবেন। তাই সরকারি খরচে এখনই কচুরিপানা নদীতে নামিয়ে দিতে হবে। স্থানীয় মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহিত পাল বলেন, হাওরের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভাঙা থাকার কারণে গোপলা নদী দিয়ে কচুরিপানা এখানে এসে জমে। গোফলা নদীর পশ্চিম পাশের বাঁধগুলো ঠিক করা হয় না দুই-তিন বছর ধরে। এই কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, গত তিন বছর ধরে উপার্জনের একমাত্র উপায় বোরো ধান চাষ না করার কারণে গ্রামের কৃষকরা অনেকেই ধার-দেনা করে দিন যাপন করছেন। গোপলার দুই পাড়ে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণ কৃষকদের একার পক্ষে সম্ভব না। এখানে সরকারের সহায়তা একান্ত জরুরি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, তিনি জায়গাটি দেখেছেন। সেখানকার মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস বোরো ধান। যে পরিমাণ কচুরিপানা জমা হয়েছে, তা কৃষকরা সরাতে পারবেন না। এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবেন। যাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কচুরিপানা সরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
মৌলভীবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, এলাকা থেকে গোপলা নদী খনন প্রকল্প নিতে পারলে একই সঙ্গে খনন এবং বাঁধ মেরামত দুটোই হবে। এ ক্ষেত্রে এলাকা থেকে বাঁধ মেরামত এবং নদী খননের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর কাছ থেকে আবেদন করতে হবে।