ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে ৯ নির্দেশনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারি-বেসরকারি দফতরগুলোতে সেবা নিতে হলে নাকে-মুখে মাস্ক পরিধান করতে হবে। মাস্ক ছাড়া ব্যক্তিদের কোনো ধরনের সার্ভিস দেয়া হবে না। পাশাপাশি যে কোনো পথে (বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর) বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী প্রতিটি ব্যক্তির শরীর কঠোরভাবে স্ক্রিনিং করতে হবে। কঠোরভাবে যাচাই করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির করোনা নেগেটিভ সনদ। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনও নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-নন-কোভিড রোগীর ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় সরকার এ নির্দেশনা জারি করে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সরকারি দফতরে মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসগুলোতেও মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে ধরে নিয়ে চারদিকে ‘ম্যাসিভ ইন্সট্রাকশন’ দেয়া হয়েছে। এক নম্বর হল- নো মাস্ক নো সার্ভিস। সব জায়গায়, সব প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, শপিংমল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মিলনে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আমরা এটা কম্পালসরি করে দিয়েছি।’ সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাইরে ‘মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না’ এ রকম পোস্টার টানাতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি নিয়মিত মনিটর করা হবে বলেও জানান বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, যা চলে টানা ৬৬ দিন। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছে পাঁচ হাজার ৭৮০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৯৭ হাজার ৫০৭; যদিও তিন লাখের বেশি মানুষ করোনামুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও শীতে আবার বাড়তে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্ক করেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সিদ্ধান্ত হয়। ওইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো।

বৈঠক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনীহার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও আইইডিসিআরের পরিচালকসহ অধিকাংশ সচিব মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, করোনা টেস্ট বাড়ানো ও দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ওই সময় তথ্য সচিব কামরুন নাহার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূর সরকারি দফতরগুলোতে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি চালুর বিষয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাস্ক পরিধান, হাত জীবাণুমুক্তকরণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো, গর্ভবতী মা ও শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে নো মাস্ক, নো সার্ভিসের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এরপর সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি দফতরগুলোতে সেবা পেতে হলে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ পদ্ধতি চালু করা হবে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূর শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব দফতর ও সংস্থাকে বলে দিয়েছি যেন তাদের মাঠপর্যায়ের সব অফিসের সামনে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ ব্যানার টানায়। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তা দৃশ্যমান হবে বলে আমরা আশা করছি।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, মসজিদের মুসল্লিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি নামাজের আগে ও পরে মসজিদের মাইকে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ বিষয়ে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। স্লোগানটি সব উন্মুক্ত স্থানে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পোস্টার ও ডিজিটাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) আনিস মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ের সব অফিসকে নির্দেশ দিয়েছি। অধিকতর সচেতনতার মসজিদগুলোর সামনে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ স্লোগান সংবলিত ব্যানার টানানোর জন্য বলেছি।

এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যও প্রতিটি মসজিদের মাইকে আহ্বান জানাতে বলা হয়েছে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যেন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্ক্রিনিং করা হয়। তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ যাচাই করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক। শনিবার তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সেব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যাতে কোভিড-নন-কোভিড সব ধরনের রোগীর ভর্তির সুযোগ পায়। সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা পেয়েছেন বলে একাধিক জেলার ডিসি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সব বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। একাধিক জেলার ডিসিও এ ধরনের নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া শীতবাহিত অন্যান্য রোগের বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ব্যবস্থা করা এবং করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা এবং ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে ৯ নির্দেশনা

আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারি-বেসরকারি দফতরগুলোতে সেবা নিতে হলে নাকে-মুখে মাস্ক পরিধান করতে হবে। মাস্ক ছাড়া ব্যক্তিদের কোনো ধরনের সার্ভিস দেয়া হবে না। পাশাপাশি যে কোনো পথে (বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর) বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী প্রতিটি ব্যক্তির শরীর কঠোরভাবে স্ক্রিনিং করতে হবে। কঠোরভাবে যাচাই করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির করোনা নেগেটিভ সনদ। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনও নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-নন-কোভিড রোগীর ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় সরকার এ নির্দেশনা জারি করে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সরকারি দফতরে মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসগুলোতেও মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে ধরে নিয়ে চারদিকে ‘ম্যাসিভ ইন্সট্রাকশন’ দেয়া হয়েছে। এক নম্বর হল- নো মাস্ক নো সার্ভিস। সব জায়গায়, সব প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, শপিংমল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মিলনে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আমরা এটা কম্পালসরি করে দিয়েছি।’ সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাইরে ‘মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না’ এ রকম পোস্টার টানাতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি নিয়মিত মনিটর করা হবে বলেও জানান বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, যা চলে টানা ৬৬ দিন। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছে পাঁচ হাজার ৭৮০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৯৭ হাজার ৫০৭; যদিও তিন লাখের বেশি মানুষ করোনামুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও শীতে আবার বাড়তে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্ক করেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সিদ্ধান্ত হয়। ওইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো।

বৈঠক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনীহার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও আইইডিসিআরের পরিচালকসহ অধিকাংশ সচিব মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, করোনা টেস্ট বাড়ানো ও দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ওই সময় তথ্য সচিব কামরুন নাহার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূর সরকারি দফতরগুলোতে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি চালুর বিষয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাস্ক পরিধান, হাত জীবাণুমুক্তকরণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো, গর্ভবতী মা ও শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে নো মাস্ক, নো সার্ভিসের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এরপর সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি দফতরগুলোতে সেবা পেতে হলে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ পদ্ধতি চালু করা হবে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূর শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব দফতর ও সংস্থাকে বলে দিয়েছি যেন তাদের মাঠপর্যায়ের সব অফিসের সামনে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ ব্যানার টানায়। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তা দৃশ্যমান হবে বলে আমরা আশা করছি।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, মসজিদের মুসল্লিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি নামাজের আগে ও পরে মসজিদের মাইকে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ বিষয়ে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। স্লোগানটি সব উন্মুক্ত স্থানে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পোস্টার ও ডিজিটাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) আনিস মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ের সব অফিসকে নির্দেশ দিয়েছি। অধিকতর সচেতনতার মসজিদগুলোর সামনে ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ স্লোগান সংবলিত ব্যানার টানানোর জন্য বলেছি।

এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যও প্রতিটি মসজিদের মাইকে আহ্বান জানাতে বলা হয়েছে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যেন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্ক্রিনিং করা হয়। তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ যাচাই করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক। শনিবার তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সেব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যাতে কোভিড-নন-কোভিড সব ধরনের রোগীর ভর্তির সুযোগ পায়। সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা পেয়েছেন বলে একাধিক জেলার ডিসি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সব বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। একাধিক জেলার ডিসিও এ ধরনের নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া শীতবাহিত অন্যান্য রোগের বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ব্যবস্থা করা এবং করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা এবং ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।