ঢাকা ১১:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক রাজনীতি, জলবায়ু ও সামাজিক সমস্যা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৪৬৫ বার

এম. ছানাউল্লাহ্

এ মহাবিশ্বে প্রত্যেক মুহূর্তেই পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তন শুধু মহা বিশ্বেরই নয় বাইরের গ্রহেও হচ্ছে। এ পরিবর্তনের জন্য প্রধানত মানুষই দায়ী। মহাবিশ্বে শিল্প, প্রকৃতি ও সভ্যতাকে মানুষই নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের ফলে বৈষয়িক ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে প্রাণী সম্পদকে মুক্তভাবে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছে। এ হেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কারণসহ সমাজে অবস্থানরতদের কার কি ভূমিকা রয়েছে এবং প্রতিকারের উপায় সমূহ খোঁজার এখনই সময়। মানুষের দ্বারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রাথমিক কারণ পুঁজিবাদের উত্থান থেকে, যার ব্যাখ্যাদান করেন-মার্ক-এ্যাঞ্জেল্স্।

জীবাশ্ম জ্বালানীর মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, যার জন্য দায়ী মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন। দেখা গেছে কোপেনহেগেন, ডারবান, কানুন ও দোহার বৈঠকের কথা; যার আদৌ কোন ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। চিহ্নিত সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের সঙ্গে নূতন করে যোগ হয়েছে ব্রাজিল, ভারত, চীন ও মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশ। পৃথিবীতে সর্বদা তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। প্রায় ২০০ এর মত দেশের প্রতিনিধিরা শুধু বৈঠক করে চলেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। একটি সমাজ মানুষ উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন প্রক্রিয়াই গড়ে তুলেছে। সমাজবদ্ধ মানুষ একটা ধাপে বিভক্ত হয়ে নিপীড়ন, শোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ঘটায়। বৃহৎ শ্রেণীর মানুষগুলো দখলদারিত্ব, মাতব্বরি, ভোগ এবং অতিরিক্ত সম্পদের মালিকানা নিজেদের মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার জন্য সাধারণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করছে। ফলশ্রুতিতে মানুষ হয়ে পড়ে মানুষের প্রধানতম শত্র“ এবং মানুষের প্রতি মানুষের হৃদ্যতা ক্রমাগতভাবে কমতে শুরু করছে।

মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যত হৈ চৈ তার প্রধানতম উপাদান-কার্বন নির্গমন। কার্বন সৃষ্টির মূল রহস্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানী যথা- প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তৈল। বর্তমান পূঁজিবাদী সমাজ পরিবেশ হত্যায় অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। মুনাফার লোভে পূঁজিবাদীদের ধ্বংসাতœক কর্ম থেকে সরানো যাবে না। সূতরাং সমূহ বিপদসংকুল পরিবেশ সম্যক সমাধানের স্বার্থে মানুষের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকল্পে পূঁজিবাদীদের স্থলে এমন এক সামাজিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা দরকার, যাঁরা ব্যক্তিগত মুনাফা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান পুঁজি অর্জনের স্থলে মানুষের প্রয়োজন মিটানো ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবেন। পূঁজিবাদীদের সঙ্গে কোন প্রকার আপোস করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সম্ভব নহে। কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত আলোচনার কমতি নেই। আর সমঝোতা নয় সাম্রাজ্যবাদ ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রাম গড়ে তোলার মধ্যে যথাযথ কর্মসূচি বাস্তবায়ন আজকের দিনের রাজনীতিবিধ, সমাজ হিতৈষী ও সর্বস্তরের সচেতন মহলের অঙ্গীকার।

অতীব দুঃখের বিষয় আজও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকট সমস্যার বিষয়টি পূঁজিবাদীরাই অস্তিত্ব্জনিত সমস্যা তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ১নং সূচীতে অর্ন্তভূক্ত হওয়া দরকার এবং প্রগতিশীল রাজনীতির কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের এ ব্যাপারে উদাসীনতা পরিত্যাগ করা দরকার।
২০১৫ সালে ধরিত্রী রক্ষার সপ্তাহ ব্যাপী ঐতিহাসিক চুক্তি হল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ২৮ শে নভেম্বর শনিবার রাতে ২০০ দেশের প্রতিনিধিদেও সমন্বয়ে তুমুল বিতর্কেও পর বিশ্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে। ২০২০ সাল হতে উন্নত দেশ সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে সহায়তা হিসাবে প্রতি বছর দশ হাজার কোটি ডলার দেবে এবং চুক্তির কিছু অংশ আছে আইনগত বাধ্যতামূলক। আর কিছু অংশ বাস্তবায়নকারী দেশ সমূহের নিজস্ব আগ্রহের উপর নির্ভর করবে।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনসহ বেশী মাত্রায় কার্বন নিঃসরনকারী দেশ সমূহে এই চুক্তিতে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চুক্তি হয়েছে তা উন্নত বিশ্বকে অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে। আমরা আশা করি উন্নত বিশ্ব তাদের প্রতিশ্র“তি মোতাবেক কোন ছল-চাতুরির আশ্রয় নেবে না। বিশ্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে সব ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আমলে নিবে। ধরিত্রী বাঁচানোর অঙ্গীকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব ভয়াবহ রূপ হবে তা আমরা কোন ভাবেই কামনা করি না।
এবার আসি সামাজিক সমস্যার বিষয়, মানুষ সামাজিক জীব সে একা বসবাস করতে পারে না। তার দরকার সহযোগী পরিবার পরিজন। সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে “সবাইকে নিয়ে যে বসবাস” তাকেই সাধারনত সমাজ বলে। সমাজে প্রাণীজগত, গাছপালাও অর্ন্তভূক্ত। আদিকাল থেকে একে অন্যের সহযোগীতা ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। যাই হউক আজ যুগের যথেষ্ঠ উন্নয়ন সার্বিক ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমি সমাজের মানুষ নিয়ে নীরব সমীক্ষা পরিচালনা করতে গিয়ে বর্তমান সমাজে আংশিক যুব শ্রেণীর বিশেষ অধপতন তাদের মধ্যে না আছে মানবতা না আছে নম্রতা ও ভদ্রতা, আছে শুধু উদাসিন্যতা, হীনমন্যতা, পরের ধনসম্পত্তির গ্রাস, অকাল পক্ষতা এরা অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এতে যারা প্রকৃত সামজ কর্মী তাদের মনে একটি ভয় ও লজ্জা কাজ করে যদি তাঁরা কোন সময় তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মান সম্মান নষ্ট হয়। অথচ তারাই সমাজের সাদোর মনের মানুষ তারা সদা সমাজের মানুষের কাছে থেকে তাদের ভাল মন্দ্ অনুভব করে ও সাধ্যমত প্রতিকারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। দেখা গেছে সমাজের একাংশ মানুষ তাদের মধ্যে রয়েছে উচ্চ শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত কিন্তু তাদের নাম ধারী শিক্ষার বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হয় যার সংক্ষিপ্ত ফলাফল নিম্নে প্রদত্ত হল-
ক) নিরীহ মানুষ (৬৫%) ঃ এ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে কৃষক, শ্রমিক ও আপাময় মেহনতি মানুষ। তারা সাধারনতঃ অল্প ও অর্ধ শিক্ষিত, তারা নিম্ন ও মধ্য আয়ের হয়। সাধারনত তারা কোন বিলাসিতা পছন্দ করে না। শুধুমাত্র সাধারনভাবে দিন যাবন করতে পারলেই সন্তষ্টি থাকে। তারা সচরাচর নীরব থাকতে ভালবাসে। জাতীয় কোন চিন্তা-চেতনায় তারা তেমন একটা খেয়াল রাখে না।
খ) হঠকারী (৩০%) ঃ উচ্চ ও মধ্যম শ্রেণীর শিক্ষিত। তারা সাধারনতঃ অধিক লাভের আশায় নিজের স্বার্থ রক্ষার তাগিতে প্রভাব শালী ধাপটে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্র ছায়ায় ফায়দা লুটার তাগিতে ব্যস্ত থাকে। তাদের দ্বারা সমাজে মাঝে মাঝে অস্থিরতা সহ যে কোন অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটতে বেগ পায় না। এ শ্রেণীর লোকজন দেশের সর্বোচ্চ শ্রেণীর ধাপটে রাজনীতিবিধদের ছত্র ছায়ায় সুকৌশলে সর্বোচ্চ ফায়দা লুটায় ন্যাস্ত থাকে।
গ) আদর্শ মানুষ (০৫%) ঃ তাঁরা সুশিক্ষিত ও অধিক সংযমী। তাঁরা সাধারনত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে সদা নিয়োজিত রাখে। তাঁরা অন্যায়কে মানতে পারে না। দেখা যায় সমাজে অবস্থানরত হঠকারী (৩০%) দের প্রভাবে হঠাৎ নিমজ্জিত থাকে এবং সময় মত পূনঃ দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকেই প্রকৃত দেশ প্রেমিক হিসাবে গন্য করা হয়।
সংশোধনের পথে যুব সমাজের নিজস্ব মন ও ঐকান্তিক আগ্রহ থাকা প্রয়োজণ। ঠিক তেমনি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন প্রবীন সমাজের। সমাজে নানামূখী অবনতির অন্যতম মৌলিক বিষয় হল, যুবক ও প্রবীনদের মাঝে মতভেদ। এই মতভেদের কারনেই উভয়কে এক টেবিলে বসতে দেখা যায় না। প্রবীনরা যুব সমাজের অন্যায় দেখেও যেন সংশোধনের ব্যাপারে নৈরাশ্য প্রকাশ করে। যার ফলে প্রবীনের মাঝে যুব সমাজের প্রতি বিরাগ ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয় এবং যুবক চাহে ভালো হোক অথবা মন্দ তার প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ ও করে না। একজন যুবকের অসদাচরন দেখে সমগ্র যুব-সমাজের উপর একই কু-ধারনা রেখে থাকে। ফলে প্রত্যেক যুবক ও তরুনের প্রতি তার মন ভেঙ্গে যায়। যার কারনে সমাজে অ-নৈতিকতা ছড়িয়ে পড়ে। যুবক ও প্রবীন একে অপরকে কু-দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। আর এই মহা প্রলয় তখন গোটা সমাজকে গিলে ফেলে। কিন্তু এই প্রলয় হ’তে পরিত্রান পেতে যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত চেষ্টা রাখা উচিত, এতে উক্ত দূরত্ব সহজে দূরীভূত হয়। যুব সমাজ ও জ্যৈষ্ঠরা সম্মিলিত চেষ্টায় গঠিত সমাজ একটি দেহের ন্যায় যার কোন এক অঙ্গ বিকল হলে সারা দেহ বিকল হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে আমরা আতœ সমালোচনা করতে শিখব। সারা দিনের কৃত কাজের উপর নিজ আতœার হিসাব নেবো। ভালো কাজ করে থাকলে নিজেকে গর্বিত মনে করবো এবং মন্দ কাজ করে থাকলে লজ্জিত ও অনুতাপ করবো। এবং ভবিষ্যতে যেন একই ধরনের ত্র“টি না হয় তার জন্য সদাজাগ্রত থাকবো। পরম করুণাময়ের নিকট সকলের প্রার্থনা “এ ধরনীর বুকে জীবের মঙ্গল হউক।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বৈশ্বিক রাজনীতি, জলবায়ু ও সামাজিক সমস্যা

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৬

এম. ছানাউল্লাহ্

এ মহাবিশ্বে প্রত্যেক মুহূর্তেই পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তন শুধু মহা বিশ্বেরই নয় বাইরের গ্রহেও হচ্ছে। এ পরিবর্তনের জন্য প্রধানত মানুষই দায়ী। মহাবিশ্বে শিল্প, প্রকৃতি ও সভ্যতাকে মানুষই নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের ফলে বৈষয়িক ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে প্রাণী সম্পদকে মুক্তভাবে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছে। এ হেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কারণসহ সমাজে অবস্থানরতদের কার কি ভূমিকা রয়েছে এবং প্রতিকারের উপায় সমূহ খোঁজার এখনই সময়। মানুষের দ্বারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রাথমিক কারণ পুঁজিবাদের উত্থান থেকে, যার ব্যাখ্যাদান করেন-মার্ক-এ্যাঞ্জেল্স্।

জীবাশ্ম জ্বালানীর মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, যার জন্য দায়ী মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন। দেখা গেছে কোপেনহেগেন, ডারবান, কানুন ও দোহার বৈঠকের কথা; যার আদৌ কোন ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। চিহ্নিত সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের সঙ্গে নূতন করে যোগ হয়েছে ব্রাজিল, ভারত, চীন ও মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশ। পৃথিবীতে সর্বদা তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। প্রায় ২০০ এর মত দেশের প্রতিনিধিরা শুধু বৈঠক করে চলেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। একটি সমাজ মানুষ উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন প্রক্রিয়াই গড়ে তুলেছে। সমাজবদ্ধ মানুষ একটা ধাপে বিভক্ত হয়ে নিপীড়ন, শোষণ ইত্যাদির মাধ্যমে রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ঘটায়। বৃহৎ শ্রেণীর মানুষগুলো দখলদারিত্ব, মাতব্বরি, ভোগ এবং অতিরিক্ত সম্পদের মালিকানা নিজেদের মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার জন্য সাধারণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করছে। ফলশ্রুতিতে মানুষ হয়ে পড়ে মানুষের প্রধানতম শত্র“ এবং মানুষের প্রতি মানুষের হৃদ্যতা ক্রমাগতভাবে কমতে শুরু করছে।

মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যত হৈ চৈ তার প্রধানতম উপাদান-কার্বন নির্গমন। কার্বন সৃষ্টির মূল রহস্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানী যথা- প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তৈল। বর্তমান পূঁজিবাদী সমাজ পরিবেশ হত্যায় অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। মুনাফার লোভে পূঁজিবাদীদের ধ্বংসাতœক কর্ম থেকে সরানো যাবে না। সূতরাং সমূহ বিপদসংকুল পরিবেশ সম্যক সমাধানের স্বার্থে মানুষের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকল্পে পূঁজিবাদীদের স্থলে এমন এক সামাজিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা দরকার, যাঁরা ব্যক্তিগত মুনাফা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান পুঁজি অর্জনের স্থলে মানুষের প্রয়োজন মিটানো ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবেন। পূঁজিবাদীদের সঙ্গে কোন প্রকার আপোস করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সম্ভব নহে। কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত আলোচনার কমতি নেই। আর সমঝোতা নয় সাম্রাজ্যবাদ ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রাম গড়ে তোলার মধ্যে যথাযথ কর্মসূচি বাস্তবায়ন আজকের দিনের রাজনীতিবিধ, সমাজ হিতৈষী ও সর্বস্তরের সচেতন মহলের অঙ্গীকার।

অতীব দুঃখের বিষয় আজও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকট সমস্যার বিষয়টি পূঁজিবাদীরাই অস্তিত্ব্জনিত সমস্যা তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ১নং সূচীতে অর্ন্তভূক্ত হওয়া দরকার এবং প্রগতিশীল রাজনীতির কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের এ ব্যাপারে উদাসীনতা পরিত্যাগ করা দরকার।
২০১৫ সালে ধরিত্রী রক্ষার সপ্তাহ ব্যাপী ঐতিহাসিক চুক্তি হল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ২৮ শে নভেম্বর শনিবার রাতে ২০০ দেশের প্রতিনিধিদেও সমন্বয়ে তুমুল বিতর্কেও পর বিশ্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে। ২০২০ সাল হতে উন্নত দেশ সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে সহায়তা হিসাবে প্রতি বছর দশ হাজার কোটি ডলার দেবে এবং চুক্তির কিছু অংশ আছে আইনগত বাধ্যতামূলক। আর কিছু অংশ বাস্তবায়নকারী দেশ সমূহের নিজস্ব আগ্রহের উপর নির্ভর করবে।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনসহ বেশী মাত্রায় কার্বন নিঃসরনকারী দেশ সমূহে এই চুক্তিতে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চুক্তি হয়েছে তা উন্নত বিশ্বকে অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে। আমরা আশা করি উন্নত বিশ্ব তাদের প্রতিশ্র“তি মোতাবেক কোন ছল-চাতুরির আশ্রয় নেবে না। বিশ্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে সব ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আমলে নিবে। ধরিত্রী বাঁচানোর অঙ্গীকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব ভয়াবহ রূপ হবে তা আমরা কোন ভাবেই কামনা করি না।
এবার আসি সামাজিক সমস্যার বিষয়, মানুষ সামাজিক জীব সে একা বসবাস করতে পারে না। তার দরকার সহযোগী পরিবার পরিজন। সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে “সবাইকে নিয়ে যে বসবাস” তাকেই সাধারনত সমাজ বলে। সমাজে প্রাণীজগত, গাছপালাও অর্ন্তভূক্ত। আদিকাল থেকে একে অন্যের সহযোগীতা ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। যাই হউক আজ যুগের যথেষ্ঠ উন্নয়ন সার্বিক ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমি সমাজের মানুষ নিয়ে নীরব সমীক্ষা পরিচালনা করতে গিয়ে বর্তমান সমাজে আংশিক যুব শ্রেণীর বিশেষ অধপতন তাদের মধ্যে না আছে মানবতা না আছে নম্রতা ও ভদ্রতা, আছে শুধু উদাসিন্যতা, হীনমন্যতা, পরের ধনসম্পত্তির গ্রাস, অকাল পক্ষতা এরা অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এতে যারা প্রকৃত সামজ কর্মী তাদের মনে একটি ভয় ও লজ্জা কাজ করে যদি তাঁরা কোন সময় তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মান সম্মান নষ্ট হয়। অথচ তারাই সমাজের সাদোর মনের মানুষ তারা সদা সমাজের মানুষের কাছে থেকে তাদের ভাল মন্দ্ অনুভব করে ও সাধ্যমত প্রতিকারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। দেখা গেছে সমাজের একাংশ মানুষ তাদের মধ্যে রয়েছে উচ্চ শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত কিন্তু তাদের নাম ধারী শিক্ষার বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হয় যার সংক্ষিপ্ত ফলাফল নিম্নে প্রদত্ত হল-
ক) নিরীহ মানুষ (৬৫%) ঃ এ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে কৃষক, শ্রমিক ও আপাময় মেহনতি মানুষ। তারা সাধারনতঃ অল্প ও অর্ধ শিক্ষিত, তারা নিম্ন ও মধ্য আয়ের হয়। সাধারনত তারা কোন বিলাসিতা পছন্দ করে না। শুধুমাত্র সাধারনভাবে দিন যাবন করতে পারলেই সন্তষ্টি থাকে। তারা সচরাচর নীরব থাকতে ভালবাসে। জাতীয় কোন চিন্তা-চেতনায় তারা তেমন একটা খেয়াল রাখে না।
খ) হঠকারী (৩০%) ঃ উচ্চ ও মধ্যম শ্রেণীর শিক্ষিত। তারা সাধারনতঃ অধিক লাভের আশায় নিজের স্বার্থ রক্ষার তাগিতে প্রভাব শালী ধাপটে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্র ছায়ায় ফায়দা লুটার তাগিতে ব্যস্ত থাকে। তাদের দ্বারা সমাজে মাঝে মাঝে অস্থিরতা সহ যে কোন অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটতে বেগ পায় না। এ শ্রেণীর লোকজন দেশের সর্বোচ্চ শ্রেণীর ধাপটে রাজনীতিবিধদের ছত্র ছায়ায় সুকৌশলে সর্বোচ্চ ফায়দা লুটায় ন্যাস্ত থাকে।
গ) আদর্শ মানুষ (০৫%) ঃ তাঁরা সুশিক্ষিত ও অধিক সংযমী। তাঁরা সাধারনত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে সদা নিয়োজিত রাখে। তাঁরা অন্যায়কে মানতে পারে না। দেখা যায় সমাজে অবস্থানরত হঠকারী (৩০%) দের প্রভাবে হঠাৎ নিমজ্জিত থাকে এবং সময় মত পূনঃ দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকেই প্রকৃত দেশ প্রেমিক হিসাবে গন্য করা হয়।
সংশোধনের পথে যুব সমাজের নিজস্ব মন ও ঐকান্তিক আগ্রহ থাকা প্রয়োজণ। ঠিক তেমনি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন প্রবীন সমাজের। সমাজে নানামূখী অবনতির অন্যতম মৌলিক বিষয় হল, যুবক ও প্রবীনদের মাঝে মতভেদ। এই মতভেদের কারনেই উভয়কে এক টেবিলে বসতে দেখা যায় না। প্রবীনরা যুব সমাজের অন্যায় দেখেও যেন সংশোধনের ব্যাপারে নৈরাশ্য প্রকাশ করে। যার ফলে প্রবীনের মাঝে যুব সমাজের প্রতি বিরাগ ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয় এবং যুবক চাহে ভালো হোক অথবা মন্দ তার প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ ও করে না। একজন যুবকের অসদাচরন দেখে সমগ্র যুব-সমাজের উপর একই কু-ধারনা রেখে থাকে। ফলে প্রত্যেক যুবক ও তরুনের প্রতি তার মন ভেঙ্গে যায়। যার কারনে সমাজে অ-নৈতিকতা ছড়িয়ে পড়ে। যুবক ও প্রবীন একে অপরকে কু-দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। আর এই মহা প্রলয় তখন গোটা সমাজকে গিলে ফেলে। কিন্তু এই প্রলয় হ’তে পরিত্রান পেতে যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত চেষ্টা রাখা উচিত, এতে উক্ত দূরত্ব সহজে দূরীভূত হয়। যুব সমাজ ও জ্যৈষ্ঠরা সম্মিলিত চেষ্টায় গঠিত সমাজ একটি দেহের ন্যায় যার কোন এক অঙ্গ বিকল হলে সারা দেহ বিকল হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে আমরা আতœ সমালোচনা করতে শিখব। সারা দিনের কৃত কাজের উপর নিজ আতœার হিসাব নেবো। ভালো কাজ করে থাকলে নিজেকে গর্বিত মনে করবো এবং মন্দ কাজ করে থাকলে লজ্জিত ও অনুতাপ করবো। এবং ভবিষ্যতে যেন একই ধরনের ত্র“টি না হয় তার জন্য সদাজাগ্রত থাকবো। পরম করুণাময়ের নিকট সকলের প্রার্থনা “এ ধরনীর বুকে জীবের মঙ্গল হউক।”