ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক কি দায়ী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
  • ২০১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে নবী বলে দিন আপনাদের স্ত্রীদের ও আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের তাদের বস্ত্র (ওড়না) তাদের (মুখমন্ডল, গলা, বুকের) উপর দিয়ে টেনে রাখে। এটাই অধিক উপযোগী যাতে তাদের চেনা যায় (ঈমানদার নারীরূপে) ফলে উত্ত্যক্ত হবে না (কুনজরকারীদের থেকে)। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)। একই সূরার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে (শান্তভাবে), (বাহিরে) সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না, যেমন প্রদর্শন করতে পূর্বে অজ্ঞতার যুগে।

নারীর খোলামেলা পোশাক ও চলাফেরা যদি ধর্ষণের জন্য সহায়ক হয়, তাহলে আপাদমস্তক বোরকা পরা মেয়েটি কেন ধর্ষণের শিকার হয়? এ প্রশ্ন অনেকের। এর সরল উত্তর হলো, ধর্ষিতা কিংবা বোরকা পরিহিতা মেয়েটি নয়, বরং নরাধম ধর্ষকের উম্মাদনা এবং পশুত্ব জাগ্রত করতে ভূমিকা রেখেছে অনলাইন বা অফলাইনে প্রদর্শিত নারীদেহের খোলামেলা কিংবা যৌন আবেদনময় দৃশ্য।

যাদের ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলে গেছেন, যেই হাদীসের ভাবার্থ হলো, অনেক দূর থেকে জান্নাতের সুগন্ধি পাওয়া গেলেও এসব নারী জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। আর তারা জান্নাতে প্রবেশ তো করবেই না। যারা কাপড় পরিধান করে বটে, এরপরও ডিজাইন ফ্যাশন সুবাদে তারা বস্ত্রহীনই থেকে যায়, মানসিকভাবে তারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার নিয়তে নগ্ন থাকে, যৌনাবেদনময়ী নিজেরাও অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের কেশ বিন্যাস বা মাথাবন্ধনী উটের পিঠের মতো উঁচু ও হেলে পড়া। (মুসলিম)।

পিশাচ ধর্ষক সাধারণত: যৌন আবেদন ও উত্তেজনা সৃষ্টি করা মেয়েকে হাতের নাগালে না পেয়ে যাকে যখন নাগালে পায়- সে দুর্বলের ওপর হামলে পড়ে। এমনকি মানুষ না পেলে পশুর উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুতরাং ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতার পোশাক দায়ী নয়, দায়ী ধর্ষণের মনোবৃত্তি তৈরি করতে সহায়ক সংস্কৃতি; যেখানে নারীকে পণ্য ও কেবল ভোগ্য বস্তু হিসেবে দেখানো হয়। সেই সাথে ভোগবাদী দর্শনের প্রভাব, পুরুষের আত্মসংযমের ঘাটতি এবং যথাযথ শাস্তিমূলক আইন ও তার প্রয়োগের অভাব ইত্যাদিও ধর্ষণ বৃদ্ধির মৌলিক কারণ।

চুরি থেকে রক্ষা পেতে মানুষ তালার ব্যবস্থা করে। কেউ তালা মারার পরও চুরি হলে কি এ কথা বলা যাবে- তালা মেরে কি লাভ? তালাও তো রক্ষা করতে পারে না? পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অবাধ নারীদেহ প্রদর্শন- ধর্ষণের জন্য কোনো একটিই এককভাবে দায়ী নয়। পুরুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিক শিক্ষা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও নারীর সংযমী লাইফস্টাইল- উভয়মুখী প্রচেষ্টায়ই কেবল ধর্ষণ কমাতে পারে।

যারা মনে করছেন কেবল পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই ধর্ষণ বন্ধের জন্য যথেষ্ঠ, তারা কি পৃথিবিতে এমন কোনো সমাজ দেখাতে পারবেন যেখানে মেয়েদের খোলামেলা চলাফেরা সত্বেও পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, ফলে ধর্ষণ নাই বা নিয়ন্ত্রিত?

নারীর প্রতি পাশবিক সহিংসতার মৌলিক কারণ যদিও ভোগবাদী দর্শনের প্রভাব, আত্মসংযমের ঘাটতি ও নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং অশ্লীলতার ব্যপকতা, যৌন আবেদনময় প্রচারণা, যথাযথ আইনের অভাব ও তার প্রয়োগ না থাকা এবং বিচারের ফাঁক-ফোকর কিংবা বিচারহীনতা ইত্যাদি।

তথাপি সা¤প্রতিক সময়ে; বরং সব সময় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাবলীর কারণ ক্ষমতার দাপট। সুতরাং দলীয় দাপট ও গুন্ডামী কঠোরভাবে বন্ধ করা না গেলে এগুলো থামবে না। তবে মূল ও স্থায়ী সমাধানের জন্য ইসলামী লাইফস্টাইল, কালচার ও আইনেই ফিরে যেতে হবে। তার কোনো বিকল্প নাই।

ধর্ষকের পাশাপাশি তাদেরও বিচার করা উচিত যারা নারীকে পণ্য ও ভোগ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে। ইসলামী লাইফস্টাইল ও সংস্কৃতি চর্চা এবং ধর্ষণের বিচারে শরিয়া আইন কার্যকর করা হলো এ সমস্যার মূল ও স্থায়ী সমাধান। অন্যথায় ধর্ষণ বন্ধ করতে এক জায়গায় বাঁধ দিলে সাময়ীকের জন্য বন্ধ হলেও কিছু সময় পর অন্য জায়গা থেকে ঠিকই লিক করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক কি দায়ী

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে নবী বলে দিন আপনাদের স্ত্রীদের ও আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের তাদের বস্ত্র (ওড়না) তাদের (মুখমন্ডল, গলা, বুকের) উপর দিয়ে টেনে রাখে। এটাই অধিক উপযোগী যাতে তাদের চেনা যায় (ঈমানদার নারীরূপে) ফলে উত্ত্যক্ত হবে না (কুনজরকারীদের থেকে)। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)। একই সূরার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে (শান্তভাবে), (বাহিরে) সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না, যেমন প্রদর্শন করতে পূর্বে অজ্ঞতার যুগে।

নারীর খোলামেলা পোশাক ও চলাফেরা যদি ধর্ষণের জন্য সহায়ক হয়, তাহলে আপাদমস্তক বোরকা পরা মেয়েটি কেন ধর্ষণের শিকার হয়? এ প্রশ্ন অনেকের। এর সরল উত্তর হলো, ধর্ষিতা কিংবা বোরকা পরিহিতা মেয়েটি নয়, বরং নরাধম ধর্ষকের উম্মাদনা এবং পশুত্ব জাগ্রত করতে ভূমিকা রেখেছে অনলাইন বা অফলাইনে প্রদর্শিত নারীদেহের খোলামেলা কিংবা যৌন আবেদনময় দৃশ্য।

যাদের ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলে গেছেন, যেই হাদীসের ভাবার্থ হলো, অনেক দূর থেকে জান্নাতের সুগন্ধি পাওয়া গেলেও এসব নারী জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। আর তারা জান্নাতে প্রবেশ তো করবেই না। যারা কাপড় পরিধান করে বটে, এরপরও ডিজাইন ফ্যাশন সুবাদে তারা বস্ত্রহীনই থেকে যায়, মানসিকভাবে তারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার নিয়তে নগ্ন থাকে, যৌনাবেদনময়ী নিজেরাও অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের কেশ বিন্যাস বা মাথাবন্ধনী উটের পিঠের মতো উঁচু ও হেলে পড়া। (মুসলিম)।

পিশাচ ধর্ষক সাধারণত: যৌন আবেদন ও উত্তেজনা সৃষ্টি করা মেয়েকে হাতের নাগালে না পেয়ে যাকে যখন নাগালে পায়- সে দুর্বলের ওপর হামলে পড়ে। এমনকি মানুষ না পেলে পশুর উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুতরাং ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতার পোশাক দায়ী নয়, দায়ী ধর্ষণের মনোবৃত্তি তৈরি করতে সহায়ক সংস্কৃতি; যেখানে নারীকে পণ্য ও কেবল ভোগ্য বস্তু হিসেবে দেখানো হয়। সেই সাথে ভোগবাদী দর্শনের প্রভাব, পুরুষের আত্মসংযমের ঘাটতি এবং যথাযথ শাস্তিমূলক আইন ও তার প্রয়োগের অভাব ইত্যাদিও ধর্ষণ বৃদ্ধির মৌলিক কারণ।

চুরি থেকে রক্ষা পেতে মানুষ তালার ব্যবস্থা করে। কেউ তালা মারার পরও চুরি হলে কি এ কথা বলা যাবে- তালা মেরে কি লাভ? তালাও তো রক্ষা করতে পারে না? পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অবাধ নারীদেহ প্রদর্শন- ধর্ষণের জন্য কোনো একটিই এককভাবে দায়ী নয়। পুরুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিক শিক্ষা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও নারীর সংযমী লাইফস্টাইল- উভয়মুখী প্রচেষ্টায়ই কেবল ধর্ষণ কমাতে পারে।

যারা মনে করছেন কেবল পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই ধর্ষণ বন্ধের জন্য যথেষ্ঠ, তারা কি পৃথিবিতে এমন কোনো সমাজ দেখাতে পারবেন যেখানে মেয়েদের খোলামেলা চলাফেরা সত্বেও পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, ফলে ধর্ষণ নাই বা নিয়ন্ত্রিত?

নারীর প্রতি পাশবিক সহিংসতার মৌলিক কারণ যদিও ভোগবাদী দর্শনের প্রভাব, আত্মসংযমের ঘাটতি ও নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং অশ্লীলতার ব্যপকতা, যৌন আবেদনময় প্রচারণা, যথাযথ আইনের অভাব ও তার প্রয়োগ না থাকা এবং বিচারের ফাঁক-ফোকর কিংবা বিচারহীনতা ইত্যাদি।

তথাপি সা¤প্রতিক সময়ে; বরং সব সময় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাবলীর কারণ ক্ষমতার দাপট। সুতরাং দলীয় দাপট ও গুন্ডামী কঠোরভাবে বন্ধ করা না গেলে এগুলো থামবে না। তবে মূল ও স্থায়ী সমাধানের জন্য ইসলামী লাইফস্টাইল, কালচার ও আইনেই ফিরে যেতে হবে। তার কোনো বিকল্প নাই।

ধর্ষকের পাশাপাশি তাদেরও বিচার করা উচিত যারা নারীকে পণ্য ও ভোগ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে। ইসলামী লাইফস্টাইল ও সংস্কৃতি চর্চা এবং ধর্ষণের বিচারে শরিয়া আইন কার্যকর করা হলো এ সমস্যার মূল ও স্থায়ী সমাধান। অন্যথায় ধর্ষণ বন্ধ করতে এক জায়গায় বাঁধ দিলে সাময়ীকের জন্য বন্ধ হলেও কিছু সময় পর অন্য জায়গা থেকে ঠিকই লিক করবে।