সময়টা খুব একটা ভালো কাটছিল না মোহাম্মদ আশরাফুলের। ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ হলে ভালো থাকার কথাও নয় অবশ্য! সেই আশরাফুলের জীবনে এখন সুখের আলো। অনিকা তাসলিমা অর্চিকে বিয়ে করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। নতুন জীবন সুখেই কাটছে নবদম্পতির।
গত ১১ ডিসেম্বর অর্চির সঙ্গে মালাবদল করেন আশরাফুল। বিয়ের পরই দুজনে হানিমুনে চলে যান মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়। বিয়ে-হানিমুন মিলিয়ে বছরের শেষ মাসটা ভালোই কেটেছে তাঁদের।
২০০১ সালে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ক্রিকেট-বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন আশরাফুল। ৬১ টেস্ট ও ১৭৭ ওয়ানডে খেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বাংলাদেশ দলে। তবে বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় ক্রিকেট থেকে দূরে বিষণ্ণতার সঙ্গে দিন কাটছিল তাঁর।
তবে বিয়ের পর আশরাফুলের জীবনে শুধুই আনন্দের জোয়ার। শনিবার এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘গত একটি মাস দারুণ সময় পার করেছি আমি। যেন একটা অন্য ভুবনে ছিলাম। এমন আনন্দ যেন সারা জীবন থাকে। সবার দোয়ায় আশা করছি নতুন জীবনটা সুখেরই হবে।’
আশরাফুলে স্ত্রী অর্চি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ছাত্রী। দুই ভাইবোনের মধ্যে অর্চি বড়। তাঁর বাবা একজন ব্যাবসায়ী। গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হলেও গত জুলাইয়ে আকদ্ হয়েছিল দুজনের।
আশরাফুল তাঁর ক্রিকেট ভক্তদের দারুণ একটি খবরও দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ করে আগামী আগস্টে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরছেন তিনি। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে তাঁকে। দুই বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার পর আশরাফুলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার অনুমতি দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আশরাফুল এখন আগস্ট মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি ক্রিকেটের বাইরে। তাই সময়টা ভালো কাটছিল না। যত আনন্দের মধ্যেই থাকি না কেন, ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামতে না পারা একজন ক্রিকেটারের জন্য খুবই কষ্টের। আগামী আগস্টে আমার সেই কষ্ট দূর হবে। আমি তারই অপেক্ষায় আছি।’
অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকলেও ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা আছে বলেই মনে করেন ৯টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক, ‘ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও নিজেকে সব সময় ফিট রাখার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি ক্রিকেটে ফেরার মতো আমার যথেষ্ট শারীরিক ফিটনেস আছে। মানসিক দৃঢ়তাও আছে।’
বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ২০১৩ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। পরে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের জুনে তাঁকে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও শাস্তির মেয়াদ শুরু হয়ে যায় ২০১৩ সাল থেকে।
পরে অবশ্য শাস্তি কমিয়েছে আইসিসি। ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে আশরাফুলকে। এই সময়ের মধ্যে তিনি আইসিসি ও বিসিবির শিক্ষা ও পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলে শেষ তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকবেন আশরাফুল। তবে তার দুই বছর আগে থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাবেন তিনি।
২০০১ সালে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আশরাফুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে শতকের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। ৬১ টেস্ট খেলে আশরাফুলের সংগ্রহ ২৭৩৭ রান। এর মধ্যে রয়েছে ছয়টি শতক ও আটটি অর্ধশতক। আর ১৭৭টি ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর রান ৩৪৬৮। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি শতক ও ২০টি অর্ধশতক।