ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনা ও রেহানা : অ-রূপকথার দুই বোন-২

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৯৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই দুটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে এজন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে এই দুই বোনের ভূমিকা অনন্য। শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রত্যক্ষ। রেহানার ভূমিকা নেপথ্যের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর লন্ডনেই প্রথম বাংলাদেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনা আশির দশকের শুরুতেই দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করেন এবং বিদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন নববিবাহিত; স্বামী-সংসার দেখার পাশাপাশি অভিবাসী বাঙালিদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকেও লক্ষ রাখতেন। তবে নিজে রাজনীতিতে সামনে আসতেন না।

এই সময় আমি একটি ব্যাপার লক্ষ করেছি। রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিক খুব চুপিচুপি দুই সংগ্রাম পরিষদের সভাতেই বসতেন। কোনো কথা বলতেন না। আমার বুঝতে বাকি থাকেনি, শেখ রেহানার নির্দেশেই শফিক সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সভাতেই যান। অর্থাৎ এই দল ভাগাভাগিতে রেহানার সম্মতি নেই। তিনি চান দুই গ্রুপ মিলেমিশে কাজ করুক।

প্রথমদিকে ব্রিটেনে এবং ইউরোপে আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন ড. মোহাম্মদ সেলিম। চার শহীদ জাতীয় নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বড় ছেলে। সেলিম সপরিবারে লন্ডনেই বসবাস করতেন। তিনি এখন প্রয়াত। তারপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন শফিক সিদ্দিক। অবশ্য নেপথ্যে আসল নায়িকা রেহানা। রাজনীতিতে শেখ রেহানার কতটা আগ্রহ তা আমি আরও বুঝতে পারি, লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময়। এই নাটকের রিহার্সালে নিজে এসে উপস্থিত হতেন। নাটক মঞ্চায়নে অর্থ সাহায্য করেছেন। নাটক থেকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের সময়েও সাহায্য জুগিয়েছেন।

শেখ রেহানা নেপথ্যে থাকলেও রাজনীতিতে কতটা ‘ডিসাইসিব’ ছিলেন, তার প্রমাণ পাই বাংলাদেশে এক-এগারোর সময়। শেখ হাসিনাকে বন্দি করে সাবজেলে নেয়ার পর শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পক্ষ থেকে ‘শেখ হাসিনার মুক্তি চাই’ শীর্ষক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি লন্ডনে। যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের নেতারা তাতে সহযোগিতা দিতে রাজি হননি। তারা জানালেন, ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে যেন কোনো আন্দোলন করা না হয়। তাহলে শেখ হাসিনার মুক্তিলাভ আরও বিলম্বিত হবে।

এই ব্যাপারে যুক্তরাজ্য যুবলীগের নেতারা আমাকে জানান, শেখ রেহানার নির্দেশ শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন করার। তিনি মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া হাসিনাকে কারামুক্ত করা যাবে না। তাদের কথা যে সত্য- তার প্রমাণ পাই, শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি করি; তাতে শেখ রেহানা তার ছোট মেয়ে রূপন্তি সিদ্দিককে পাঠান এবং তখনকার কিশোরী রূপন্তি সভায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন।

শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে লন্ডনে যে আন্দোলন হয় তার নেপথ্যে নায়িকা ছিলেন শেখ রেহানা। তার নির্দেশে যুবলীগের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগেরও কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেখ রেহানার রাজনৈতিক সাহস ও দূরদর্শিতা দেখে আমার মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের ঐক্য ও সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখার জন্য রেহানাই উপযুক্ত নেত্রী বলে বিবেচিত হবেন। এজন্যই শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন একদিন তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম- হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি; দুটো পদের দায়িত্বভার বহন করা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তুমি শেখ রেহানাকে দলের নির্বাহী সভানেত্রী করে নাও। শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমি রাজি। আপনি রেহানাকে রাজি করান। আমি এই মুহূর্তে দলের নির্বাহী সভাপতির পদে তাকে বসাতে তৈরি আছি। আমি তাকে বলেছিলাম। সে বলে, আমি তাহলে এই মুহূর্তে লন্ডনে ফিরে যাব।’

আমিও একবার রেহানাকে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। রেহানা হেসে বলেছেন, ‘আমি তো আপনাকে সব সাহায্য দিচ্ছি। তাহলে সামনে গিয়ে মুখ দেখাতে হবে কেন? রেহানার কথাটি সত্য। তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ইত্যাদি সব সংগঠনের উপদেষ্টা ও অভিভাবক। কিন্তু কোনো পদ গ্রহণে একেবারেই অনাগ্রহী।

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আমরা জিয়াউর রহমানের ভাড়াটে গুণ্ডাদের হামলা উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেন মসজিদ ও কনওয়ে হলে পালন করি। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের সময় শেখ রেহানা অনুরোধ জানালেন, তিনি মিচামে একটি হলের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা যেন সেখানেই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা করি। মিচামে রেহানার বাসা। সুতরাং বাড়ির কাছের অনুষ্ঠানে তার যোগদান সহজ হবে। তিনি আরও জানালেন, এই সভায় অক্সফোর্ড থেকে ড. কামাল হোসেন তার তিন বন্ধুসহ আসবেন।

ড. কামাল হোসেনকে আমরা এই সময় এড়িয়ে চলতাম। বিশেষ করে আমি তার সুবিধাবাদী নীতি ও বর্ণচোরা স্বভাবের জন্য প্রচণ্ডভাবে তাকে অপছন্দ করতে শুরু করি। তিনি যেভাবে নানা অসিলায় আমাদের আন্দোলন হতে দূরে থাকতেন, জেলহত্যার আগে ব্রিটিশ নেতাদের কাছে তাকে টেনে নেয়া যায়নি। এই হত্যা প্রতিরোধের জন্য শেখ রেহানাকে দিল্লি থেকে লন্ডনে আনার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লেখা চিঠিতে সই দিতে রাজি হননি। সর্বোপরি, জেল হত্যার পর চার জাতীয় নেতার জন্য আমরা লন্ডনে যে শোকসভা করেছিলাম, তাতে এসে তার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য আমার মনে তার সম্পর্কে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন শেখ রেহানা যে তার সঙ্গে অক্সফোর্ডে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন, তাকে ‘বিগ আঙ্কেল’ ডেকে তার কাছে রাজনৈতিক পরামর্শ চাইতে শুরু করেছেন, তা আমরা জানতাম না।

পরে জেনেছি, শেখ রেহানা স্বামী শফিক সিদ্দিককে ড. কামালের কাছে নিয়মিত পাঠান। আমি ব্যাপারটা জেনে বিস্মিত হলেও শেখ রেহানার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনে কামাল হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত, পিতৃবন্ধু এক রাজনৈতিক নেতাকে দু’বোনই হারাতে চান না। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ড. কামাল ও তার তিন বন্ধুকে আনার ব্যবস্থা করে রেহানা ভালো কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে চারজন (ড. কামাল, ড. মোশাররফ হোসেন, রেহমান সোবহান ও ড. নূরুল ইসলাম) অক্সফোর্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, তাদের আমি নাম দিয়েছিলাম ‘গ্যাঙ অব মোর’। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন গওহর রিজভী। তাকে আমি ড. কামাল হোসেনের প্রতিচ্ছায়া হিসেবে দেখেছি।

যা হোক, মিচামের কমিউনিটি হলে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা শুরু হল। কিন্তু ড. কামাল হোসেন নেই। রেহানার মুখ শুকনো। আমাকে বললেন, কামাল আঙ্কেল তো আসেননি। আমি মনে মনে হেসেছি; কোনো কথা বলিনি। সভার এককোণে দেখলাম, ড. মোশাররফ হোসেন টুপি মাথায় চুপচাপ বসে আছেন। জিজ্ঞেস করলাম, মোশাররফ ভাই, আপনাদের বন্ধু ড. কামাল হোসেন কই? মোশাররফ হোসেন থতমত খেয়ে বললেন, ‘ও তো আসতে প্রস্তুত হয়েছিল; হঠাৎ নিউইয়র্ক থেকে এক জরুরি সভার চিঠি পেয়ে চলে গেছে। ওর হয়ে আমি তো এসেছি।’ বললাম, মোশাররফ ভাই, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর সভার চেয়ে তার কাছে নিউইয়র্কের সভা বেশি জরুরি হয়ে গেল? মোশাররফ হোসেন আমার কথার জবাব দেননি। আমার ধারণা, ড. কামাল হোসেন ও পরবর্তীকালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে বিশ্বাস করার ফল দু’বোন হাতে হাতে পেয়েছেন। তবে এই ব্যাপারে তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন আমিই করেছিলাম। আজ তার চারপাশে লোকলস্করের অভাব নেই। সেদিন তার সঙ্গে আমরা চার-পাঁচ জন ছাড়া কেউ ছিলেন না। প্রথম সংবাদ সম্মেলনটির ব্যবস্থা করেছিলাম লন্ডনের বেকার স্ট্রিটের কাছে ‘লাইট অব ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে। এর মালিক ছিলেন আমাদের বন্ধু। তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশিত খাবারের দাম নেননি।

শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে এখন দেশি-বিদেশি সংবাদিকদের দারুণ ভিড়। কিন্ত সেদিন আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও লন্ডনের ডেইলি মিরর এবং ডেইলি মর্নিং স্টার ছাড়া আর কোনো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে আসেননি। আর এসেছিলেন বিবিসি রেডিও’র বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান। তিনি অবশ্য এসেছিলেন নানা অবান্তর প্রশ্ন করে শেখ হাসিনাকে বিব্রত করার জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনা বিব্রত হননি। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন।

সেই আশির দশকের গোড়ার আরেকটি ঘটনার কথা বলি। বাংলাদেশে স্বৈরাচার নিপাতের যে আন্দোলন লন্ডনে তখন চলছিল, তাতে সমর্থন জানিয়ে সুইডেনে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করে সুইডেনেও এই আন্দোলন গড়ে তোলেন। সুইডেনের তৎকালীন সরকার ছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে। আবদুর রাজ্জাক সুইডিস এমপি’দের সহযোগিতায় এই আন্দোলনের সমর্থনে স্টকহোমে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি তখন ঢাকায়।

এ সময় একদিন সকালে শফিক সিদ্দিক আমার বাসায় এসে হাজির। বললেন, হাসিনা আপা তো স্টকহোম সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তাই তিনি সম্মেলনে তার বাণী পাঠাবেন। আপনাকে এই বাণীটি লিখে দিতে হবে। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুরও ডিকটেনশন অনুযায়ী তার কয়েকটি ভাষণ লিখেছি। এখন তার কন্যার বাণী লিখব।

আমি এই বাণীর এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমার পিতাকে হত্যা করে।’ এই বাণীটি দেখে দেয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনকে দেয়া হলে তিনি সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের কথা কেটে সেখানে যোগ করে দেন- ‘সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত একদল বিপথগামী সামরিক অফিসারের দ্বারা’- এই কথা কয়টি। স্টকহোম সম্মেলনে এই বাণী পঠিত হয়। ড. কামাল হোসেন পরে তার বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এই বাণী তিনি লিখে দিয়েছিলেন।

নিজের ঢাক পেটানোর জন্য নয়; হাসিনা ও রেহানার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্যই অতীত ইতিহাসের কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম। ১৯৮১ সালে লন্ডনের ইয়র্ক হলে শেখ হাসিনাকে দেয়া প্রথম সংবর্ধনা সভায় ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা প্রয়াত পিটার মোর সর্বপ্রথম শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের ভাবি প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। সে কথা সত্য হয়েছে। শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নন, সারা দক্ষিণ এশিয়ার একজন সেরা পলিটিক্যাল স্টেটসম্যান’ হিসেবে পরিচিত। তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির আজ অন্ত নেই। তিনি একটানা তিন দফা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থ দফাতেও তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আশা করা যায়। অন্যদিকে শেখ রেহানাও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তার এক কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে টিউলিপ নিশ্চিতভাবে মন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনারও জননেত্রী হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে ছোট বোন শেখ রেহানার অবদান কম নয়।

আমার গর্ব, আমি এই ইতিহাসের একজন গর্বিত সাক্ষী। এই ইতিহাস সবটা লিখতে গেলে একটা মহাভারত হবে। তাই তার অংশ মাত্র লিখে কলম এখানেই থামালাম। আমি এই দুই বোনের দীর্ঘ আয়ু এবং আরও সমৃদ্ধি কামনা করি। (সমাপ্ত)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাসিনা ও রেহানা : অ-রূপকথার দুই বোন-২

আপডেট টাইম : ১০:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই দুটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে এজন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে এই দুই বোনের ভূমিকা অনন্য। শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রত্যক্ষ। রেহানার ভূমিকা নেপথ্যের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর লন্ডনেই প্রথম বাংলাদেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনা আশির দশকের শুরুতেই দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করেন এবং বিদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন নববিবাহিত; স্বামী-সংসার দেখার পাশাপাশি অভিবাসী বাঙালিদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকেও লক্ষ রাখতেন। তবে নিজে রাজনীতিতে সামনে আসতেন না।

এই সময় আমি একটি ব্যাপার লক্ষ করেছি। রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিক খুব চুপিচুপি দুই সংগ্রাম পরিষদের সভাতেই বসতেন। কোনো কথা বলতেন না। আমার বুঝতে বাকি থাকেনি, শেখ রেহানার নির্দেশেই শফিক সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সভাতেই যান। অর্থাৎ এই দল ভাগাভাগিতে রেহানার সম্মতি নেই। তিনি চান দুই গ্রুপ মিলেমিশে কাজ করুক।

প্রথমদিকে ব্রিটেনে এবং ইউরোপে আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন ড. মোহাম্মদ সেলিম। চার শহীদ জাতীয় নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বড় ছেলে। সেলিম সপরিবারে লন্ডনেই বসবাস করতেন। তিনি এখন প্রয়াত। তারপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন শফিক সিদ্দিক। অবশ্য নেপথ্যে আসল নায়িকা রেহানা। রাজনীতিতে শেখ রেহানার কতটা আগ্রহ তা আমি আরও বুঝতে পারি, লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময়। এই নাটকের রিহার্সালে নিজে এসে উপস্থিত হতেন। নাটক মঞ্চায়নে অর্থ সাহায্য করেছেন। নাটক থেকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের সময়েও সাহায্য জুগিয়েছেন।

শেখ রেহানা নেপথ্যে থাকলেও রাজনীতিতে কতটা ‘ডিসাইসিব’ ছিলেন, তার প্রমাণ পাই বাংলাদেশে এক-এগারোর সময়। শেখ হাসিনাকে বন্দি করে সাবজেলে নেয়ার পর শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পক্ষ থেকে ‘শেখ হাসিনার মুক্তি চাই’ শীর্ষক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি লন্ডনে। যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের নেতারা তাতে সহযোগিতা দিতে রাজি হননি। তারা জানালেন, ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে যেন কোনো আন্দোলন করা না হয়। তাহলে শেখ হাসিনার মুক্তিলাভ আরও বিলম্বিত হবে।

এই ব্যাপারে যুক্তরাজ্য যুবলীগের নেতারা আমাকে জানান, শেখ রেহানার নির্দেশ শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন করার। তিনি মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া হাসিনাকে কারামুক্ত করা যাবে না। তাদের কথা যে সত্য- তার প্রমাণ পাই, শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি করি; তাতে শেখ রেহানা তার ছোট মেয়ে রূপন্তি সিদ্দিককে পাঠান এবং তখনকার কিশোরী রূপন্তি সভায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন।

শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে লন্ডনে যে আন্দোলন হয় তার নেপথ্যে নায়িকা ছিলেন শেখ রেহানা। তার নির্দেশে যুবলীগের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগেরও কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেখ রেহানার রাজনৈতিক সাহস ও দূরদর্শিতা দেখে আমার মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের ঐক্য ও সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখার জন্য রেহানাই উপযুক্ত নেত্রী বলে বিবেচিত হবেন। এজন্যই শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন একদিন তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম- হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি; দুটো পদের দায়িত্বভার বহন করা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তুমি শেখ রেহানাকে দলের নির্বাহী সভানেত্রী করে নাও। শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমি রাজি। আপনি রেহানাকে রাজি করান। আমি এই মুহূর্তে দলের নির্বাহী সভাপতির পদে তাকে বসাতে তৈরি আছি। আমি তাকে বলেছিলাম। সে বলে, আমি তাহলে এই মুহূর্তে লন্ডনে ফিরে যাব।’

আমিও একবার রেহানাকে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। রেহানা হেসে বলেছেন, ‘আমি তো আপনাকে সব সাহায্য দিচ্ছি। তাহলে সামনে গিয়ে মুখ দেখাতে হবে কেন? রেহানার কথাটি সত্য। তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ইত্যাদি সব সংগঠনের উপদেষ্টা ও অভিভাবক। কিন্তু কোনো পদ গ্রহণে একেবারেই অনাগ্রহী।

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আমরা জিয়াউর রহমানের ভাড়াটে গুণ্ডাদের হামলা উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেন মসজিদ ও কনওয়ে হলে পালন করি। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের সময় শেখ রেহানা অনুরোধ জানালেন, তিনি মিচামে একটি হলের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা যেন সেখানেই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা করি। মিচামে রেহানার বাসা। সুতরাং বাড়ির কাছের অনুষ্ঠানে তার যোগদান সহজ হবে। তিনি আরও জানালেন, এই সভায় অক্সফোর্ড থেকে ড. কামাল হোসেন তার তিন বন্ধুসহ আসবেন।

ড. কামাল হোসেনকে আমরা এই সময় এড়িয়ে চলতাম। বিশেষ করে আমি তার সুবিধাবাদী নীতি ও বর্ণচোরা স্বভাবের জন্য প্রচণ্ডভাবে তাকে অপছন্দ করতে শুরু করি। তিনি যেভাবে নানা অসিলায় আমাদের আন্দোলন হতে দূরে থাকতেন, জেলহত্যার আগে ব্রিটিশ নেতাদের কাছে তাকে টেনে নেয়া যায়নি। এই হত্যা প্রতিরোধের জন্য শেখ রেহানাকে দিল্লি থেকে লন্ডনে আনার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লেখা চিঠিতে সই দিতে রাজি হননি। সর্বোপরি, জেল হত্যার পর চার জাতীয় নেতার জন্য আমরা লন্ডনে যে শোকসভা করেছিলাম, তাতে এসে তার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য আমার মনে তার সম্পর্কে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন শেখ রেহানা যে তার সঙ্গে অক্সফোর্ডে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন, তাকে ‘বিগ আঙ্কেল’ ডেকে তার কাছে রাজনৈতিক পরামর্শ চাইতে শুরু করেছেন, তা আমরা জানতাম না।

পরে জেনেছি, শেখ রেহানা স্বামী শফিক সিদ্দিককে ড. কামালের কাছে নিয়মিত পাঠান। আমি ব্যাপারটা জেনে বিস্মিত হলেও শেখ রেহানার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনে কামাল হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত, পিতৃবন্ধু এক রাজনৈতিক নেতাকে দু’বোনই হারাতে চান না। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ড. কামাল ও তার তিন বন্ধুকে আনার ব্যবস্থা করে রেহানা ভালো কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে চারজন (ড. কামাল, ড. মোশাররফ হোসেন, রেহমান সোবহান ও ড. নূরুল ইসলাম) অক্সফোর্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, তাদের আমি নাম দিয়েছিলাম ‘গ্যাঙ অব মোর’। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন গওহর রিজভী। তাকে আমি ড. কামাল হোসেনের প্রতিচ্ছায়া হিসেবে দেখেছি।

যা হোক, মিচামের কমিউনিটি হলে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা শুরু হল। কিন্তু ড. কামাল হোসেন নেই। রেহানার মুখ শুকনো। আমাকে বললেন, কামাল আঙ্কেল তো আসেননি। আমি মনে মনে হেসেছি; কোনো কথা বলিনি। সভার এককোণে দেখলাম, ড. মোশাররফ হোসেন টুপি মাথায় চুপচাপ বসে আছেন। জিজ্ঞেস করলাম, মোশাররফ ভাই, আপনাদের বন্ধু ড. কামাল হোসেন কই? মোশাররফ হোসেন থতমত খেয়ে বললেন, ‘ও তো আসতে প্রস্তুত হয়েছিল; হঠাৎ নিউইয়র্ক থেকে এক জরুরি সভার চিঠি পেয়ে চলে গেছে। ওর হয়ে আমি তো এসেছি।’ বললাম, মোশাররফ ভাই, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর সভার চেয়ে তার কাছে নিউইয়র্কের সভা বেশি জরুরি হয়ে গেল? মোশাররফ হোসেন আমার কথার জবাব দেননি। আমার ধারণা, ড. কামাল হোসেন ও পরবর্তীকালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে বিশ্বাস করার ফল দু’বোন হাতে হাতে পেয়েছেন। তবে এই ব্যাপারে তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন আমিই করেছিলাম। আজ তার চারপাশে লোকলস্করের অভাব নেই। সেদিন তার সঙ্গে আমরা চার-পাঁচ জন ছাড়া কেউ ছিলেন না। প্রথম সংবাদ সম্মেলনটির ব্যবস্থা করেছিলাম লন্ডনের বেকার স্ট্রিটের কাছে ‘লাইট অব ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে। এর মালিক ছিলেন আমাদের বন্ধু। তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশিত খাবারের দাম নেননি।

শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে এখন দেশি-বিদেশি সংবাদিকদের দারুণ ভিড়। কিন্ত সেদিন আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও লন্ডনের ডেইলি মিরর এবং ডেইলি মর্নিং স্টার ছাড়া আর কোনো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে আসেননি। আর এসেছিলেন বিবিসি রেডিও’র বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান। তিনি অবশ্য এসেছিলেন নানা অবান্তর প্রশ্ন করে শেখ হাসিনাকে বিব্রত করার জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনা বিব্রত হননি। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন।

সেই আশির দশকের গোড়ার আরেকটি ঘটনার কথা বলি। বাংলাদেশে স্বৈরাচার নিপাতের যে আন্দোলন লন্ডনে তখন চলছিল, তাতে সমর্থন জানিয়ে সুইডেনে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করে সুইডেনেও এই আন্দোলন গড়ে তোলেন। সুইডেনের তৎকালীন সরকার ছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে। আবদুর রাজ্জাক সুইডিস এমপি’দের সহযোগিতায় এই আন্দোলনের সমর্থনে স্টকহোমে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি তখন ঢাকায়।

এ সময় একদিন সকালে শফিক সিদ্দিক আমার বাসায় এসে হাজির। বললেন, হাসিনা আপা তো স্টকহোম সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তাই তিনি সম্মেলনে তার বাণী পাঠাবেন। আপনাকে এই বাণীটি লিখে দিতে হবে। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুরও ডিকটেনশন অনুযায়ী তার কয়েকটি ভাষণ লিখেছি। এখন তার কন্যার বাণী লিখব।

আমি এই বাণীর এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমার পিতাকে হত্যা করে।’ এই বাণীটি দেখে দেয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনকে দেয়া হলে তিনি সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের কথা কেটে সেখানে যোগ করে দেন- ‘সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত একদল বিপথগামী সামরিক অফিসারের দ্বারা’- এই কথা কয়টি। স্টকহোম সম্মেলনে এই বাণী পঠিত হয়। ড. কামাল হোসেন পরে তার বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এই বাণী তিনি লিখে দিয়েছিলেন।

নিজের ঢাক পেটানোর জন্য নয়; হাসিনা ও রেহানার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্যই অতীত ইতিহাসের কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম। ১৯৮১ সালে লন্ডনের ইয়র্ক হলে শেখ হাসিনাকে দেয়া প্রথম সংবর্ধনা সভায় ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা প্রয়াত পিটার মোর সর্বপ্রথম শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের ভাবি প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। সে কথা সত্য হয়েছে। শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নন, সারা দক্ষিণ এশিয়ার একজন সেরা পলিটিক্যাল স্টেটসম্যান’ হিসেবে পরিচিত। তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির আজ অন্ত নেই। তিনি একটানা তিন দফা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থ দফাতেও তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আশা করা যায়। অন্যদিকে শেখ রেহানাও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তার এক কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে টিউলিপ নিশ্চিতভাবে মন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনারও জননেত্রী হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে ছোট বোন শেখ রেহানার অবদান কম নয়।

আমার গর্ব, আমি এই ইতিহাসের একজন গর্বিত সাক্ষী। এই ইতিহাস সবটা লিখতে গেলে একটা মহাভারত হবে। তাই তার অংশ মাত্র লিখে কলম এখানেই থামালাম। আমি এই দুই বোনের দীর্ঘ আয়ু এবং আরও সমৃদ্ধি কামনা করি। (সমাপ্ত)