ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে আদর্শ স্বামী-স্ত্রী, আজ রাষ্ট্রপতির ৫৬তম বিবাহ বার্ষিকী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা মিঠামইনের প্রত্যন্ত গ্রাম কামালপুর থেকে উঠে আসা একজন আবদুল হামিদের সাফল্যের ক্ষেত্রেও আড়াল থেকে তাকে সুন্দরের অভিযাত্রায় এগিয়ে নিয়েছেন, তেমনি একজন অসম্ভব মমতাময়ী প্রেরণাদাত্রী নারী বেগম রাশিদা হামিদ।

আজকের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ৫৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ রাশিদা খানমের প্রেরণা ও সহযোগিতাই এই জননেতাকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে আবদুল হামিদও অকপটে স্বীকার করেন।

করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের মৃত আবদুল হালিম খানের চার ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে রাশিদা সবার বড়। বাড়ির পাশের মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে এসভি সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন।

এ সময় পরিচয় হয় কামালপুরের সেই সম্ভাবনাময় তরুণ গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন জিএস মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। তারপর বিয়ে। এইচএসসি পাস করার আগেই আবদুল হামিদের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।

তবে তাদের বিয়েটা এত সহজ ছিল না। রাজনীতি করা বোহেমিয়ান ছেলের সঙ্গে কিছুতেই বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তার মামা-খালারা। কিন্তু আবদুল হামিদ আর রাশিদার মন যে সবার অন্তরালে বাঁধা পড়ে গেছে একে অন্যের প্রেমের বন্ধনে। এ বন্ধন ছিন্ন করার ক্ষমতা কারোর নেই। তাদের অকৃত্রিম প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য রাশিদার পরিবার থেকে অনেক চেষ্টা ছিল বটে, কিন্তু তরুণী রাশিদার প্রেমের প্রগাঢ়তার কাছে পরিবারের সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তাই একসময় উভয় পরিবারের সম্মতির মধ্য দিয়ে এই প্রেমিকযুগলের অবিচ্ছিন্ন প্রেম সামাজিকভাবে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।

প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে তারা হয়ে ওঠেন আদর্শ স্বামী-স্ত্রী। রাশিদার মাতামহ সেই সময়কার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য মাওলানা সাইদুর রহমানের হস্তক্ষেপে ও মধ্যস্থতায় ১৯৬৪ সালে ৪ অক্টোবর এই প্রেমিকযুগল বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সময়ের হিসেবে আজ তাদের ৫৬তম বিয়েবার্ষিকী।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন রাশিদা হামিদ। বর্তমানে রাশিদা হামিদ বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আবদুল হালিম খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। প্রতি বছর এ ফাউন্ডেশন কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুদান প্রদান করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তার পরিবারের সদস্যরা এটি পরিচালনা করে থাকেন।

রাশিদা হামিদ বলেন, এসএসসি পাস করার পর বিয়ে! মামা বিয়ের বিষয়ে মত বদলে ফেলতে পারেন। এজন্য তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী রাজনীতি করেন। কিশোরগঞ্জে একটি ছোট বাসায় থাকতাম। গ্রামের বাড়ি থেকে ছোট ছোট অনেক দেবর আর ভাগ্নে বাসায় থেকে লেখাপড়া করে। তাদের কেউ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, কেউবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সারাদিন বাসায় লোকজন লেগেই থাকত। তাদের চা-নাশতা দেওয়া, পরিবারের লোকজনের জন্য রান্না, খাওয়ানো সব আমাকে সামলাতে হতো।

‘বিয়ের পর হঠাৎ করে এমন অবস্থায় পড়লাম, কোনো অবসর ছিল না। নিজের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ ছিল না। টানাপোড়েনের সংসার। দিনেদিনে সংসার বড় হতে থাকে। ছন্দপতন ঘটে নিজের লেখাপড়ায়। তারপরও হতোদ্যম না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। গভীর রাতে একটু একটু করে পড়ি। এভাবে এইচএসসি পাস করি। স্বামী আর বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তার সুযোগ পাইনি। তবে আমার স্বামী মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি অতিশয় সহজিয়া ও সৎ রাজনীতিক। এজন্য একদিন সে ভালো করবে—এমন বিশ্বাস ছিল আমার।’ এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন দেশের টানা দুবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা হামিদ।

তিনি আরও বলেন, তিনি এখনও সেই আগের মতোই আছেন। সংসার জীবন শুরু করেছিলাম এক কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তখন রাত দেড়টা-দুটার আগে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই ঘুমিয়ে গেলে বই নিয়ে পড়তে বসতাম। এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখনও রাত ২টার আগে ঘুমাতে পারি না।

তিনি হাসতে হাসতে বলেন, আবদুল হামিদকে কতটা ভালোবাসি তা কেবল আমিই জানি। ওকে কলেজ জীবন থেকেই ভালোবাসি, কারণ সে মানুষকে ভালোবাসে। কারও ক্ষতি করে না। তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এখনও বঙ্গভবনে লুঙ্গি পরে এলাকার কোন সাধারণ মানুষ এলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে পড়েন। এ কারণেই এ মানুষটিকে এতবেশি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।

মাকে নিয়ে গর্বিত তিন ছেলে এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, রাসেল আহমেদ তুহিন ও রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং একমাত্র মেয়ে স্বর্ণা হামিদ। তারা জানান, প্রচণ্ড অভাব-অনটনের মধ্যেও কোনোকিছু অপূর্ণ রাখেননি তাদের প্রিয় আম্মাজান। আবদুল হামিদের মতোই সাধারণ ও সহজিয়া জীবনে অভ্যস্ত বেগম রাশিদা হামিদ। আবদুল হামিদ স্পিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সান রাইজ কিন্ডারগার্টেন নামক একটি স্কুল। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাশিদা হামিদ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে আদর্শ স্বামী-স্ত্রী, আজ রাষ্ট্রপতির ৫৬তম বিবাহ বার্ষিকী

আপডেট টাইম : ১১:৩৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা মিঠামইনের প্রত্যন্ত গ্রাম কামালপুর থেকে উঠে আসা একজন আবদুল হামিদের সাফল্যের ক্ষেত্রেও আড়াল থেকে তাকে সুন্দরের অভিযাত্রায় এগিয়ে নিয়েছেন, তেমনি একজন অসম্ভব মমতাময়ী প্রেরণাদাত্রী নারী বেগম রাশিদা হামিদ।

আজকের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ৫৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ রাশিদা খানমের প্রেরণা ও সহযোগিতাই এই জননেতাকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে আবদুল হামিদও অকপটে স্বীকার করেন।

করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের মৃত আবদুল হালিম খানের চার ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে রাশিদা সবার বড়। বাড়ির পাশের মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে এসভি সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন।

এ সময় পরিচয় হয় কামালপুরের সেই সম্ভাবনাময় তরুণ গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন জিএস মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। তারপর বিয়ে। এইচএসসি পাস করার আগেই আবদুল হামিদের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।

তবে তাদের বিয়েটা এত সহজ ছিল না। রাজনীতি করা বোহেমিয়ান ছেলের সঙ্গে কিছুতেই বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তার মামা-খালারা। কিন্তু আবদুল হামিদ আর রাশিদার মন যে সবার অন্তরালে বাঁধা পড়ে গেছে একে অন্যের প্রেমের বন্ধনে। এ বন্ধন ছিন্ন করার ক্ষমতা কারোর নেই। তাদের অকৃত্রিম প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য রাশিদার পরিবার থেকে অনেক চেষ্টা ছিল বটে, কিন্তু তরুণী রাশিদার প্রেমের প্রগাঢ়তার কাছে পরিবারের সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তাই একসময় উভয় পরিবারের সম্মতির মধ্য দিয়ে এই প্রেমিকযুগলের অবিচ্ছিন্ন প্রেম সামাজিকভাবে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।

প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে তারা হয়ে ওঠেন আদর্শ স্বামী-স্ত্রী। রাশিদার মাতামহ সেই সময়কার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য মাওলানা সাইদুর রহমানের হস্তক্ষেপে ও মধ্যস্থতায় ১৯৬৪ সালে ৪ অক্টোবর এই প্রেমিকযুগল বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সময়ের হিসেবে আজ তাদের ৫৬তম বিয়েবার্ষিকী।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন রাশিদা হামিদ। বর্তমানে রাশিদা হামিদ বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আবদুল হালিম খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। প্রতি বছর এ ফাউন্ডেশন কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুদান প্রদান করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তার পরিবারের সদস্যরা এটি পরিচালনা করে থাকেন।

রাশিদা হামিদ বলেন, এসএসসি পাস করার পর বিয়ে! মামা বিয়ের বিষয়ে মত বদলে ফেলতে পারেন। এজন্য তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী রাজনীতি করেন। কিশোরগঞ্জে একটি ছোট বাসায় থাকতাম। গ্রামের বাড়ি থেকে ছোট ছোট অনেক দেবর আর ভাগ্নে বাসায় থেকে লেখাপড়া করে। তাদের কেউ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, কেউবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সারাদিন বাসায় লোকজন লেগেই থাকত। তাদের চা-নাশতা দেওয়া, পরিবারের লোকজনের জন্য রান্না, খাওয়ানো সব আমাকে সামলাতে হতো।

‘বিয়ের পর হঠাৎ করে এমন অবস্থায় পড়লাম, কোনো অবসর ছিল না। নিজের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ ছিল না। টানাপোড়েনের সংসার। দিনেদিনে সংসার বড় হতে থাকে। ছন্দপতন ঘটে নিজের লেখাপড়ায়। তারপরও হতোদ্যম না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। গভীর রাতে একটু একটু করে পড়ি। এভাবে এইচএসসি পাস করি। স্বামী আর বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তার সুযোগ পাইনি। তবে আমার স্বামী মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি অতিশয় সহজিয়া ও সৎ রাজনীতিক। এজন্য একদিন সে ভালো করবে—এমন বিশ্বাস ছিল আমার।’ এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন দেশের টানা দুবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা হামিদ।

তিনি আরও বলেন, তিনি এখনও সেই আগের মতোই আছেন। সংসার জীবন শুরু করেছিলাম এক কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তখন রাত দেড়টা-দুটার আগে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই ঘুমিয়ে গেলে বই নিয়ে পড়তে বসতাম। এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখনও রাত ২টার আগে ঘুমাতে পারি না।

তিনি হাসতে হাসতে বলেন, আবদুল হামিদকে কতটা ভালোবাসি তা কেবল আমিই জানি। ওকে কলেজ জীবন থেকেই ভালোবাসি, কারণ সে মানুষকে ভালোবাসে। কারও ক্ষতি করে না। তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এখনও বঙ্গভবনে লুঙ্গি পরে এলাকার কোন সাধারণ মানুষ এলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে পড়েন। এ কারণেই এ মানুষটিকে এতবেশি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।

মাকে নিয়ে গর্বিত তিন ছেলে এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, রাসেল আহমেদ তুহিন ও রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং একমাত্র মেয়ে স্বর্ণা হামিদ। তারা জানান, প্রচণ্ড অভাব-অনটনের মধ্যেও কোনোকিছু অপূর্ণ রাখেননি তাদের প্রিয় আম্মাজান। আবদুল হামিদের মতোই সাধারণ ও সহজিয়া জীবনে অভ্যস্ত বেগম রাশিদা হামিদ। আবদুল হামিদ স্পিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সান রাইজ কিন্ডারগার্টেন নামক একটি স্কুল। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাশিদা হামিদ।