হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের ক্যাসিনোকাণ্ডের মূলহোতা যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন ২২৮ কোটি টাকারও বেশি। তবে এই টাকার সিংহভাগ অর্থই ব্যয় করেছেন সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আসর মেরিনা বে-স্যান্ডস ক্যাসিনোতে। দুদকের তদন্তে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। তবে এখনো দেশ দুটিতে সম্রাটের কিছু টাকা রয়েছে। যা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পরই নিরুদ্দেশ ছিলেন প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা সম্রাট। এরপর গ্রেপ্তার ও দল থেকে বহিষ্কার হন। ক্যাসিনোসহ অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য দেয়া হয়।
এরপর সম্রাটের বিদেশে থাকা সম্পদের বিষয়েও তদন্তে নামে দুদক। সম্প্রতি একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম সম্রাটের অর্থপাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে দুদকের হাতে। তাতে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সম্রাট সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন ৩ কোটি ৬৫ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার। প্রতি ডলারের দাম ৬২.৩৯ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় এ অর্থের পরিমাণ ২২৭ কোটি ৭২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর একই সময়ে সম্রাট মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন ২ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। প্রতি রিঙ্গিত ২০ টাকা হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ ৪১ লাখ ২২ হাজার টাকা। সবমিলে এ দু-দেশে সম্রাটের পাচারের পরিমাণ প্রায় ২২৮ কোটি ১৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত)এ এফ এম আমিনুল ইসলাম জানান, তদন্ত চলছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবো। দুদকের তদন্ত বলছে, সম্রাট এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে ওই দুই দেশে পাচার করেছেন। পাচারের বেশিরভাগ অর্থই উড়িয়েছেন সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে-স্যান্ডস ক্যাসিনোতে। বাকি যেসব অর্থ রয়েছে তা দেশে আনতে শিগগিরই বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক আইনগত সহায়তার অনুরোধ (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) পাঠানো হবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। তবে দেশে তার খুব বেশি সম্পদের তথ্য পায়নি দুদক।
ক্যাসিনোবিরোধী বিশেষ অভিযানের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর চৌধুরী বাড়ি থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা আছে। সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর মানি লন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে আরো একটি নতুন মামলা দায়ের করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উল্লেখিত মামলাসহ সম্রাটের বিরুদ্ধে মোট ৪টি মামালা দায়ের হলো।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, সম্রাট ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ৩৫ বার সিঙ্গাপুরে, ৩ বার মালয়েশিয়ায়, ২ বার দুবাইতে ও ১ বার হংকংয়ে ভ্রমণ করেছে। এছাড়া তার সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ২৩ বার সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেছেন। সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান অবৈধ অর্থ দিয়ে যৌথভাবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।