ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লাগামী বাসে দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে গণধর্ষণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লাগামী বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে গণধর্ষণ অভিযোগ ওঠেছে। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লাগামী ‘তিশা প্লাস’ নামের যাত্রীবাহী বাসে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল (২৬) ও হেলপার বাবু শেখকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সুপারভাইজার (৩২) আলম পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুইজনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর আদালতে জবানবন্দি শেষে বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

তরুণীর পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই তরুণী শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার জেঠাতো বোনের বাসায় যান। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফেরার উদ্দেশে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হন। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছেন।

ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা হন ওই তরুণী। পথে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাখেন। এতে তারা তাকে সেখানে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু বাসের চালক ওই তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়। এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাবু শেখের ঘরে নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে। পরে তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে ঘটনা জানান।

মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে তরুণীর মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওইদিন রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন।

ওই তরুণীর মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। করোনার কারণে তিনি ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসেন। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হন। তিনি তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসটির মালিক এই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ওই পরিবহনের এমডি দুলাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮ নম্বর গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দুইজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লাগামী বাসে দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে গণধর্ষণ

আপডেট টাইম : ০৭:০৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লাগামী বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে গণধর্ষণ অভিযোগ ওঠেছে। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লাগামী ‘তিশা প্লাস’ নামের যাত্রীবাহী বাসে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল (২৬) ও হেলপার বাবু শেখকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সুপারভাইজার (৩২) আলম পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুইজনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর আদালতে জবানবন্দি শেষে বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

তরুণীর পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই তরুণী শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার জেঠাতো বোনের বাসায় যান। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফেরার উদ্দেশে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হন। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছেন।

ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা হন ওই তরুণী। পথে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছার পর তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাখেন। এতে তারা তাকে সেখানে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু বাসের চালক ওই তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়। এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাবু শেখের ঘরে নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে। পরে তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে ঘটনা জানান।

মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে তরুণীর মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওইদিন রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন।

ওই তরুণীর মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। করোনার কারণে তিনি ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসেন। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হন। তিনি তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেই বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসটির মালিক এই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। তবে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ওই পরিবহনের এমডি দুলাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮ নম্বর গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দুইজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।