ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুমের সঙ্গে মিষ্টি পান, সম্ভাবনার উঁকি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাঁচা-পাকা ধানে ভরে গেছে জুম। এ যেন ঘন সবুজে মোড়ানো পাহাড়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সীমানাপাড়ার বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে জুমের সঙ্গে এবার পাহাড়ে পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষিরা। পানের চাষ ভালো হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

লক্ষ্মীপুরে পান থেকে ২০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা – শেয়ার বিজ

পানের বরজ

অতীতে এক পাহাড়ে জুম চাষ করার ১০ থেকে ১৫ বছর পর আবার সেই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হতো। এবারই প্রথম জুমের সঙ্গে পান চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন সীমানাপাড়ার অন্তত ৬০ চাষি। এতে উঁকি দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

জুমে ধান, হলুদ, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। তবে পাহাড়ে রাবার বাগান, সেগুনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বনায়নের কারণে কমেছে জুমের পরিমাণ। বাধ্য হয়ে মাত্র দুই থেকে তিন বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। এতে কমছে জমির উর্বরতা। জুম চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারছে না জুম চাষিরা।

বিস্ময়কর হলেও পাহাড়ের চূড়ায় এবার পান চাষ করেছেন ৬০ চাষি। আর জুমের চেয়ে পান চাষে বেশি লাভ বলে জানিয়েছেন চাষিরা। পান চাষিরা জানান, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দিন দিন পান চাষির সংখ্যা বাড়ছে। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমবারের মতো ৬০ বরজে পানের আবাদ করা হয়েছে।

পানের বরজ

পানের বরজ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ের চূড়া বা ঢালু জমিতে পানের বরজ দৃশ্যমান। এক সময় এসব পাহাড়ে কেবল জুম চাষ হলেও প্রথমবাবের মতো পান চাষ করেছেন চাষিরা। পাহাড়ে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পর পানের আবাদ শুরু করেন চাষিরা। প্রতি ২৫ শতাংশ জমিতে পানের আবাদ করতে খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বাজারে পানের দাম ভালো থাকলে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন চাষিরা। পান চাষ করে অনেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।

সীমানাপাড়ায় পাহাড়ের ঢালুতে জুম ক্ষেতের অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষ করেছেন নবীন ত্রিপুরা। নবীন ত্রিপুরার বরজে গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পানের বরজের যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

নবীন ত্রিপুরা বলেন, আমরা এখানে বছরের পর বছর জুম চাষ করেছি। তবে এক স্বজনের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষের কৌশল সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। পরে নিজে নিজে ২০ শতাংশ জমিতে পান চাষ শুরু করি। এতে দ্রুত সাফল্য পেয়েছি।

তিনি বলেন, মে মাসে পানের বরজে চারা রোপণ করেছি। ধীরে ধীরে পুরো বরজ সবুজ পানে ভরে যায়। প্রতি সপ্তাহে ১শ’ বিড়া পান বিক্রি করা হয়। এ বরজ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারব।

পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস বিলেন, কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থাকার পরও পাহাড়ে পান চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তবে এসব কৃষককে যেন কৃষি ঋণের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেই বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জুমের সঙ্গে মিষ্টি পান, সম্ভাবনার উঁকি

আপডেট টাইম : ০৫:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাঁচা-পাকা ধানে ভরে গেছে জুম। এ যেন ঘন সবুজে মোড়ানো পাহাড়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সীমানাপাড়ার বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে জুমের সঙ্গে এবার পাহাড়ে পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষিরা। পানের চাষ ভালো হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

লক্ষ্মীপুরে পান থেকে ২০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা – শেয়ার বিজ

পানের বরজ

অতীতে এক পাহাড়ে জুম চাষ করার ১০ থেকে ১৫ বছর পর আবার সেই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হতো। এবারই প্রথম জুমের সঙ্গে পান চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন সীমানাপাড়ার অন্তত ৬০ চাষি। এতে উঁকি দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

জুমে ধান, হলুদ, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। তবে পাহাড়ে রাবার বাগান, সেগুনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বনায়নের কারণে কমেছে জুমের পরিমাণ। বাধ্য হয়ে মাত্র দুই থেকে তিন বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। এতে কমছে জমির উর্বরতা। জুম চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারছে না জুম চাষিরা।

বিস্ময়কর হলেও পাহাড়ের চূড়ায় এবার পান চাষ করেছেন ৬০ চাষি। আর জুমের চেয়ে পান চাষে বেশি লাভ বলে জানিয়েছেন চাষিরা। পান চাষিরা জানান, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দিন দিন পান চাষির সংখ্যা বাড়ছে। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমবারের মতো ৬০ বরজে পানের আবাদ করা হয়েছে।

পানের বরজ

পানের বরজ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ের চূড়া বা ঢালু জমিতে পানের বরজ দৃশ্যমান। এক সময় এসব পাহাড়ে কেবল জুম চাষ হলেও প্রথমবাবের মতো পান চাষ করেছেন চাষিরা। পাহাড়ে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পর পানের আবাদ শুরু করেন চাষিরা। প্রতি ২৫ শতাংশ জমিতে পানের আবাদ করতে খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বাজারে পানের দাম ভালো থাকলে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন চাষিরা। পান চাষ করে অনেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।

সীমানাপাড়ায় পাহাড়ের ঢালুতে জুম ক্ষেতের অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষ করেছেন নবীন ত্রিপুরা। নবীন ত্রিপুরার বরজে গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পানের বরজের যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

নবীন ত্রিপুরা বলেন, আমরা এখানে বছরের পর বছর জুম চাষ করেছি। তবে এক স্বজনের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষের কৌশল সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। পরে নিজে নিজে ২০ শতাংশ জমিতে পান চাষ শুরু করি। এতে দ্রুত সাফল্য পেয়েছি।

তিনি বলেন, মে মাসে পানের বরজে চারা রোপণ করেছি। ধীরে ধীরে পুরো বরজ সবুজ পানে ভরে যায়। প্রতি সপ্তাহে ১শ’ বিড়া পান বিক্রি করা হয়। এ বরজ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারব।

পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস বিলেন, কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থাকার পরও পাহাড়ে পান চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তবে এসব কৃষককে যেন কৃষি ঋণের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেই বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি।