একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ২০ হাজারের বেশি সদস্যের কেউই নেননি বা পাননি মুক্তিযোদ্ধা সনদ। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আবেদন করা দেড় হাজার বাম মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে তাদের এ সনদ দেওয়া হবে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এর আগে ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট বামপন্থি দুই হাজার ৩৬৭ জনকে ‘বামপন্থি গেরিলা বাহিনীর সদস্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাত্র এক বছর পার হতেই ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে সে গেজেট বাতিল করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাম যোদ্ধাদের প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে। ২০১৩ সালে কয়েক হাজার বাম যোদ্ধাকে একবার গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে। তবে এবার দেড় হাজার বাম যোদ্ধার তথ্যাদি যাছাই-বাছাইয়ের পর তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামুকার পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও উভয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের গড়ে তোলা বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অনেকেই ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারি তৎকালীন ঢাকা (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু) স্টেডিয়ামে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন। অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও যার ছবি প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন! কারণ তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই। ইতিমধ্যে বামপন্থি গেরিলাদের ১ হাজার ৫৩৭টি পৃথক আবেদন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জামুকায় উপস্থাপন করা হয়েছে। জামুকার প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৬৭টি আবেদন করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর প্রথমবারের মতো বামপন্থি নেতারা সম্মিলিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিতে গেরিলা বাহিনীর সব সদস্যের নামের তালিকা জমা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতিবাচক অনুমোদন পাওয়ার পর বামপন্থি দুই হাজার ৩৬৭ যোদ্ধাকে বামপন্থি গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট জারি করে। যদিও এক বছর পর ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই গেজেট বাতিল করা হয়।
এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। হাইকোর্টে বর্তমানে রুলটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সনদের জন্য গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নয়, অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর বামপন্থি গেরিলা বাহিনীর ১ হাজার ৫৩৭ জন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘২০১৩ সালে বামপন্থি গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট জারির পর সেটি সর্বাংশে বাতিল করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানকর। তাই মোজাফফর আহমেদসহ অনেকেই অনলাইনে আবেদন করেননি।’ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গেজেট বাতিলের বিষয়টি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। তাই রায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’