ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জল কাঁদায় মাছ ধরার উৎসব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২৪২ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদায় জানাচ্ছে শ্রাবণ মাস। চলে যাবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে বর্ষাকাল। মাসখানেক আগেও চারদিকে ছিলো থৈ থৈ পানি। নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গিয়েছিলো ধানের ক্ষেত, নিচু জমি। আর এতে এসব ক্ষেতের পানিতে ভেসে এসেছিলো কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, পুঁটি, চিংড়ি, টেংরার মতো নানা দেশীয় মাছ।
এক সময় গ্রাম বাংলায় বর্ষার শেষে এসব ক্ষেত-নিচুর জমির পানিতে মাছ সেচে ধরা হতো। গ্রাম বাংলা থাকলেও সেচে মাছ ধরার চিরায়ত দৃশ্য সচরাচর এখন আর চোখে পড়েনা।
ভর বর্ষায় নদী-নদী আর পুকুরের পানি বেড়ে যাওয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পরে পানি। আর সেসব পানিতে ভেসে যায় নানা জাতের দেশীয় মাছ। শ্রাবন-ভাদ্র মাসের তীব্র গরম আর রোদে নদীর নদীর পানি কমে যাবার সাথে সাথে অনেকটাই শুকিয়ে যায় কিছুদিন আগেও ডুবে থাকা ক্ষেত খলা। পানি শুকিয়ে গেলেও এসব স্থানে আটকা পড়ে যায় বিভিন্ন মাছ। আর সে সময় কাঁদা পানিতে নেমে হাত দিয়ে মাছ শিকার করে গ্রামের মানুষ। তীব্র রোদে হাঁটু কাঁদা সেই পানিতে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার অন্যতম বিনোদনও বটে। শত শত বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে, যা আজও বহমান।
নদী বেষ্টিত টাঙ্গাইল জেলার চারদিকে রয়েছে যমুনা-ধলেশ^রী সহ একাধিক নদী। কালের বিবর্তনে এসকল নদীর আয়তন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। তারপরও বর্ষা মৌসুয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানিতে টই-টম্বুর হয়ে উঠে এসকল নদী। শুধু নদী নয়, পানি বৃদ্ধি পায় পুকুর-ডোবা আর খাল-বিলের। নদী-নালা আর পুকুরের পানি এক হয়ে যাওয়ায় ডুবে যায় ধানী ক্ষেত আর নিচু জমি। পানির সাথে সেই জমিতে বয়ে আসে বিভিন্ন দেশী জাতের মাছের রেনু পোনা।
শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের শুরুতে তাই খাল-বিল, পুকুর-ডোবা আর ক্ষেত-খলার হাঁটুপানিতে মাছ ধরা চলে। ঘরের থালা বালতি দিয়ে চলে সামান্য পানি সেচার কাজ। আর পুকুর-ডোবার পানি সেচা হয় পাম্প মেশিন দিয়ে। পুরোপুরি পানি শূন্য হলে তবেই শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের শূন্য পানির কাঁদার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। সেচ দেয়া পুকুরে চাষ করা মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছ। আর ডোবায় মেলে শোল, টাকি, গজাল, পুঁটি, খলসে, ভেদি, কৈ, মাগুর, সিং, ট্যাংরাসহ দেশী প্রজাাতির বিভিন্ন মাছ।
কাঁদায় মাছ ধরার এমনই এক উৎসবের দেখা মিললো টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চল মাহমুদনগরে। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল-মাহমুদনগর সড়কের পাশের এক ধানী ক্ষেতে দেখা পাওয়া যায় এমন আয়োজনের।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষার শেষ সময়ে পানি কমে গেলে এই এলাকার নিচু জমিগুলোতে এমন মাছ ধরার উৎসব হয়ে যায়। সেই উৎসবে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই একসাথে মেতে উঠে হাত দিয়ে মাছ ধরায়। হাঁটু কাঁদা পানিতে নেমে কে কার আগে বেশি মাছ ধরতে পারে, এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলে অলিখিত প্রতিযোগীতা। কিন্তু আগে এমন করে নানা জাতের দেশীয় মাছ ধরা হলেও, এখন খুব বেশি জাতের মাছের দেখা মেলে না।
প্রতিনিয়ত মাছের অভৈয়ারন্য কমে যাওয়ায়, এসব দেশীয় মাছের দেখা পাওয়া কমে গেছে। দিন শেষে ধরা পরা মাছ নিয়ে কেউ চলে যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। আবার কেউবা বাড়িতে আয়োজন করে রান্নার। কাঁদা পানির আর একাধিক জাতের এই সকল পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদে সুগ্রাণ ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জল কাঁদায় মাছ ধরার উৎসব

আপডেট টাইম : ০৯:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদায় জানাচ্ছে শ্রাবণ মাস। চলে যাবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে বর্ষাকাল। মাসখানেক আগেও চারদিকে ছিলো থৈ থৈ পানি। নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গিয়েছিলো ধানের ক্ষেত, নিচু জমি। আর এতে এসব ক্ষেতের পানিতে ভেসে এসেছিলো কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, পুঁটি, চিংড়ি, টেংরার মতো নানা দেশীয় মাছ।
এক সময় গ্রাম বাংলায় বর্ষার শেষে এসব ক্ষেত-নিচুর জমির পানিতে মাছ সেচে ধরা হতো। গ্রাম বাংলা থাকলেও সেচে মাছ ধরার চিরায়ত দৃশ্য সচরাচর এখন আর চোখে পড়েনা।
ভর বর্ষায় নদী-নদী আর পুকুরের পানি বেড়ে যাওয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পরে পানি। আর সেসব পানিতে ভেসে যায় নানা জাতের দেশীয় মাছ। শ্রাবন-ভাদ্র মাসের তীব্র গরম আর রোদে নদীর নদীর পানি কমে যাবার সাথে সাথে অনেকটাই শুকিয়ে যায় কিছুদিন আগেও ডুবে থাকা ক্ষেত খলা। পানি শুকিয়ে গেলেও এসব স্থানে আটকা পড়ে যায় বিভিন্ন মাছ। আর সে সময় কাঁদা পানিতে নেমে হাত দিয়ে মাছ শিকার করে গ্রামের মানুষ। তীব্র রোদে হাঁটু কাঁদা সেই পানিতে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার অন্যতম বিনোদনও বটে। শত শত বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে, যা আজও বহমান।
নদী বেষ্টিত টাঙ্গাইল জেলার চারদিকে রয়েছে যমুনা-ধলেশ^রী সহ একাধিক নদী। কালের বিবর্তনে এসকল নদীর আয়তন অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। তারপরও বর্ষা মৌসুয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানিতে টই-টম্বুর হয়ে উঠে এসকল নদী। শুধু নদী নয়, পানি বৃদ্ধি পায় পুকুর-ডোবা আর খাল-বিলের। নদী-নালা আর পুকুরের পানি এক হয়ে যাওয়ায় ডুবে যায় ধানী ক্ষেত আর নিচু জমি। পানির সাথে সেই জমিতে বয়ে আসে বিভিন্ন দেশী জাতের মাছের রেনু পোনা।
শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের শুরুতে তাই খাল-বিল, পুকুর-ডোবা আর ক্ষেত-খলার হাঁটুপানিতে মাছ ধরা চলে। ঘরের থালা বালতি দিয়ে চলে সামান্য পানি সেচার কাজ। আর পুকুর-ডোবার পানি সেচা হয় পাম্প মেশিন দিয়ে। পুরোপুরি পানি শূন্য হলে তবেই শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের শূন্য পানির কাঁদার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। সেচ দেয়া পুকুরে চাষ করা মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছ। আর ডোবায় মেলে শোল, টাকি, গজাল, পুঁটি, খলসে, ভেদি, কৈ, মাগুর, সিং, ট্যাংরাসহ দেশী প্রজাাতির বিভিন্ন মাছ।
কাঁদায় মাছ ধরার এমনই এক উৎসবের দেখা মিললো টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চল মাহমুদনগরে। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল-মাহমুদনগর সড়কের পাশের এক ধানী ক্ষেতে দেখা পাওয়া যায় এমন আয়োজনের।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষার শেষ সময়ে পানি কমে গেলে এই এলাকার নিচু জমিগুলোতে এমন মাছ ধরার উৎসব হয়ে যায়। সেই উৎসবে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই একসাথে মেতে উঠে হাত দিয়ে মাছ ধরায়। হাঁটু কাঁদা পানিতে নেমে কে কার আগে বেশি মাছ ধরতে পারে, এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলে অলিখিত প্রতিযোগীতা। কিন্তু আগে এমন করে নানা জাতের দেশীয় মাছ ধরা হলেও, এখন খুব বেশি জাতের মাছের দেখা মেলে না।
প্রতিনিয়ত মাছের অভৈয়ারন্য কমে যাওয়ায়, এসব দেশীয় মাছের দেখা পাওয়া কমে গেছে। দিন শেষে ধরা পরা মাছ নিয়ে কেউ চলে যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। আবার কেউবা বাড়িতে আয়োজন করে রান্নার। কাঁদা পানির আর একাধিক জাতের এই সকল পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদে সুগ্রাণ ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়।