গাছ বিক্রি করছেন বনকর্তা, আসামি গ্রামবাসী

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত ইছামতি বীজ বাগান কেন্দ্রের কর্মকর্তা মিজানুল ইসলামের ফাঁদে পড়ে মামলাসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। যারা চট্টগ্রাম বনগবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের বরাবরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা জানান, চট্টগ্রাম বনগবেষণা কেন্দ্রের ইছামতি বীজ বাগান কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় বনগবেষণা কাজে সৃজিত পাইন ও আকাশমনি বাগানের মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি এবং টাকার বিনিময়ে বনের ভেতর অবৈধ বসতঘর তৈরি করে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে।
আর এই গাছ কাটার দায় থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করছেন তিনি। মামলায় পুলিশ স্থানীয় লোকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতসহ নানারকম হয়রানি করছেন। সম্প্রতি মিজানুল ইসলামের বিরুদ্ধে বনগবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের বরাবরে অভিযোগ করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগে জানা যায়, মিজানুল ইসলাম ২০১০ সালে ইছামতি বীজ বাগান কেন্দ্রে ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর থেকে বাগানের মূল্যবান গাছ একের এক হাওয়া হতে থাকে। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে চুক্তি করে গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটান।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ২৫টি আকাশমণি গাছ কেটে বিক্রি করে দেন। এসব ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ বহু লোকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। যাদের অনেকে এখন জামিনে আছেন।
আবু তাহের নামে এক ব্যক্তির ভাষ্য, ১৯৮৬-৯৬ সালে রোপন করা এসব বাগানের প্রত্যেকটি গাছ ৭-৮ হাজার টাকা মূল্যমানের হয়েছে। যা নজরে পড়েছে ইছামতি বীজ কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুল ইসলামের।
তিনি বলেন, মিজানুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ইঞ্জিনিয়ার সামশুল আলম ওরফে লোহা সমশুর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সামাজিক বনায়নের মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বনের ভেতর অবৈধ বসতঘর তৈরি করে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি ২৫টি আকাশনি গাছ কেটে বিক্রির প্রায় দুই লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রতিবাদ করায় উল্টো গাছ কাটার মামলায় আসামি করে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। কয়েকদিন পর সেখান থেকে আমি জামিনে বেরিয়ে আসি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইছামতি বীজ কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম বলেন, ওই কেন্দ্রে আমি অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্বে আছি। অতএব বাগানের সবকিছু আমার নজরে রাখা সম্ভব হয় না। তবে কেন্দ্রে অবস্থিত অন্য কর্মকর্তাদের নজরদারি মোতাবেক গাছ কেটে যারা বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। গাছ বিক্রি ও বনের ভেতর অবৈধ বসতঘর তৈরি করে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. শাহীন আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, মিজানুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর