ঢাকা ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহররম মাসের অনন্য মর্যাদা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০
  • ১৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোরআন-হাদিসের বর্ণনায় ১২ মাস : হজের মৌসুম শেষ না হতেই হাজির হয়েছে মহররম মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা পবিত্র মাস বলা হয়, যার একটি মহররম। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি, যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এ বিষয়ে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার কোরো না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)

আবু বাকরা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে বা অবয়বে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার নিজস্ব আকৃতিতে বা অবয়বে ফিরে এসেছে। আর বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হলো—জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং আরেকটি হলো মুজার সম্প্রদায়ের রজব মাস, যা জুমাদাল উলা এবং শাবানের মধ্যে আছে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

মহররম সর্বোত্তম মাস : এই মাসগুলোর মধ্যে মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ)।’ (সহিহ মুসলিম)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এই মাসগুলোর সম্মান ও মর্যাদার কারণে আল্লাহ তাআলা এতে জুলুম ও অবিচার করতে নিষেধ করেছেন। যদিও জুলুম সব সময় নিষিদ্ধ। তাফসিরবিদদের মতে, এ জুলুম বারো মাসজুড়ে নিষিদ্ধ।

হারাম মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস : ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন, হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, মহররম শ্রেষ্ঠ মাস। কেননা আল্লাহ হারাম মাস দিয়ে বছর শুরু করেছেন এবং হারাম দিয়ে বছর শেষ করেছেন। হাদিসে মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। রমজানের পর মহররম মাস শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। আবু জর (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে রাতের শ্রেষ্ঠ অংশ ও শ্রেষ্ঠ মাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, রাতের শেষ ভাগ শ্রেষ্ঠ এবং মাসের মধ্যে মহররম মাস শ্রেষ্ঠ। (নাসায়ি)

মহররম আল্লাহর মাস কেন : রাসুল (সা.) মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলেছেন। এর কারণ উল্লেখ করে ইবনে রজব (রহ.) বলেন, এই মাসের সম্মান ও গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। তা ছাড়া আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিজের বলে সম্বোধন করে থাকেন। যেমন— মুহাম্মদ (সা.), ইবরাহিম (আ.), ইসহাক (আ.) ও অন্যদের নিজের বান্দা বলেছেন। কাবাকে নিজের ঘর ও সালেহ (আ.)-এর উটনীকে নিজের উটনী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সম্মানিত মাসগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ : সাধারণত জিলকদ মাস থেকে মানুষ হজে যাওয়া শুরু করে। জিলহজ মাসে হজের বিধিমালা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের সুবিধার্থে এ মাসেও যুদ্ধ হারাম। আর মহররম মাসে মানুষ যেন হজ থেকে নিরাপদে ফিরতে পারে তাই যুদ্ধ হারাম। রজব মাসে নিরাপদে আল্লাহর ঘর জিয়ারত ও ওমরার সুবিধার্থে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম।

ইসলামের আগে জাহেলি যুগে মানুষ দীর্ঘদিন যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পারত না। তাই ওই সময় মহররম মাস ছাড়া বাকি তিন মাসকে হারাম মাস গণনা করা হতো। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছ, ‘তারা (মুশরিকরা) আপনাকে হারাম মাসে যুদ্ধ সম্পর্ক জিজ্ঞেস করে, আপনি বলে দিন তাতে যুদ্ধ করা বড় অন্যায় ও গোনাহের কাজ।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৭)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর নিদর্শন ও হারাম মাসে যুদ্ধ করাকে বৈধ মনে কোরো না। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মহররম মাসের অনন্য মর্যাদা

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোরআন-হাদিসের বর্ণনায় ১২ মাস : হজের মৌসুম শেষ না হতেই হাজির হয়েছে মহররম মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা পবিত্র মাস বলা হয়, যার একটি মহররম। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি, যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এ বিষয়ে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার কোরো না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)

আবু বাকরা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে বা অবয়বে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার নিজস্ব আকৃতিতে বা অবয়বে ফিরে এসেছে। আর বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হলো—জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং আরেকটি হলো মুজার সম্প্রদায়ের রজব মাস, যা জুমাদাল উলা এবং শাবানের মধ্যে আছে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

মহররম সর্বোত্তম মাস : এই মাসগুলোর মধ্যে মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ)।’ (সহিহ মুসলিম)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এই মাসগুলোর সম্মান ও মর্যাদার কারণে আল্লাহ তাআলা এতে জুলুম ও অবিচার করতে নিষেধ করেছেন। যদিও জুলুম সব সময় নিষিদ্ধ। তাফসিরবিদদের মতে, এ জুলুম বারো মাসজুড়ে নিষিদ্ধ।

হারাম মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস : ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন, হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, মহররম শ্রেষ্ঠ মাস। কেননা আল্লাহ হারাম মাস দিয়ে বছর শুরু করেছেন এবং হারাম দিয়ে বছর শেষ করেছেন। হাদিসে মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। রমজানের পর মহররম মাস শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। আবু জর (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে রাতের শ্রেষ্ঠ অংশ ও শ্রেষ্ঠ মাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, রাতের শেষ ভাগ শ্রেষ্ঠ এবং মাসের মধ্যে মহররম মাস শ্রেষ্ঠ। (নাসায়ি)

মহররম আল্লাহর মাস কেন : রাসুল (সা.) মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলেছেন। এর কারণ উল্লেখ করে ইবনে রজব (রহ.) বলেন, এই মাসের সম্মান ও গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। তা ছাড়া আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিজের বলে সম্বোধন করে থাকেন। যেমন— মুহাম্মদ (সা.), ইবরাহিম (আ.), ইসহাক (আ.) ও অন্যদের নিজের বান্দা বলেছেন। কাবাকে নিজের ঘর ও সালেহ (আ.)-এর উটনীকে নিজের উটনী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সম্মানিত মাসগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ : সাধারণত জিলকদ মাস থেকে মানুষ হজে যাওয়া শুরু করে। জিলহজ মাসে হজের বিধিমালা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের সুবিধার্থে এ মাসেও যুদ্ধ হারাম। আর মহররম মাসে মানুষ যেন হজ থেকে নিরাপদে ফিরতে পারে তাই যুদ্ধ হারাম। রজব মাসে নিরাপদে আল্লাহর ঘর জিয়ারত ও ওমরার সুবিধার্থে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম।

ইসলামের আগে জাহেলি যুগে মানুষ দীর্ঘদিন যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পারত না। তাই ওই সময় মহররম মাস ছাড়া বাকি তিন মাসকে হারাম মাস গণনা করা হতো। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছ, ‘তারা (মুশরিকরা) আপনাকে হারাম মাসে যুদ্ধ সম্পর্ক জিজ্ঞেস করে, আপনি বলে দিন তাতে যুদ্ধ করা বড় অন্যায় ও গোনাহের কাজ।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৭)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর নিদর্শন ও হারাম মাসে যুদ্ধ করাকে বৈধ মনে কোরো না। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২)