হঠাৎ বাড়ল পেঁয়াজ-আদার দাম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ দেড় মাস ধরে সবজির বাজার মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। ভোক্তারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে রবি (শীত) মৌসুমের সবজির দিকে। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় এখনো প্রায় সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে। শাকের আঁটি ২৫-৪০ টাকা পর্যন্ত। তার ওপর হঠাৎ বেড়ে গেছে আদা, পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। ফলে করোনা দুর্যোগে কমে যাওয়া আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, কমলাপুর ও মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টি আর বন্যার কারণেই বাড়ছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। কিছু বাড়ছে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, উৎপাদক বা পাইকার থেকে হাতবদল হয়ে খুচরা বাজারে আসতেই দাম বাড়ছে বেশি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি ছাড়াও ১২টি নিত্যপণ্যের দামে পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে ১০টির দামই বেড়েছে।

ঈদুল আজহার আগে থেকেই পেঁয়াজ, রসুন ও আদা—এসব পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এ সময় আমদানি করা ও দেশি আদা পাওয়া যেত ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। ঈদুল আজহার পর তা আরো কমে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় নামে। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। খুচরা বাজারে আদা প্রতি কেজি এখন ১৪০-২০০ টাকা।

পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা করে। খোসা ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এখন ৩৫ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। তবে চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হওয়ায় আগের ৭০-৮০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে রসুন।

মুগদা বাজারের খুচরা বিক্রেতা ওয়ালি উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জ বাজার তলিয়ে গেছে। এতে সেখান থেকে রাজধানীতে মাল আসছে না, প্রচুর আদা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে আদার বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। তাই খুচরায়ও দাম বেড়েছে। গত মৌসুমের পেঁয়াজ একেবারেই শেষের দিকে। তাই পেঁয়াজেও দাম কিছুটা বাড়তির দিকে।

অস্বস্তি রয়েছে শাকসবজি ও কাঁচা মরিচের বাজারে। আমদানি করলেও দাম কমছে না কাঁচা মরিচের। গতকাল ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বিভিন্ন খুচরা বাজারে টমেটো বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, করলা, বেগুন ও বরবটি ৭০-৯০ টাকা। চিচিঙ্গা, পটোল, ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহের মতো কচুর লতি ও কাঁকরোল বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে। কচুরমুখী প্রতি কেজি ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা। একটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, চালকুমড়া ৪০-৫০ টাকা এবং কাঁচা কলার হালি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আলুর দামও চড়া, ৩৫-৩৭ টাকা কেজি।

মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা আব্দুল্লাহ নামের একজন ক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের আয় কমে গেছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বিপরীতে পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত। জীবনযাত্রার ব্যয় সমন্বয় করা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা ঢাকায় যখন ৮০ টাকা কেজি সবজি খাই তখনো পত্রিকায় দেখি কৃষক ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তাহলে দাম এত কেন বাড়ছে, সরকারের এটি দেখা উচিত, শক্তভাবে তদারকি করা উচিত।’

কমেনি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা ডজন দরে। মুরগির দাম কিছুটা কম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজি দরে। মাছের দাম আগের মতোই আছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ কিনতে হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। আধাকেজি ওজনের আশপাশের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর