ঢাকা ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাবার লাইব্রেরিতে স্মৃতিময় কিছু সময়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০২০
  • ২৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশ থেকে এসে প্রথম যেদিন ওমরার জন্য ঢুকলাম বাদশা ফাহাদ গেটের ডানপাশে লেখা দোখলাম ‘মাকতাবাতুল হারাম’। দলবদ্ধ থাকার কারণে সেদিন মাকতাবায় ঢুকতে পারিনি।

দলবদ্ধ থাকার এই এক অসুবিধা। নিজের মনমতো কিছুই করা যায় না। সবকিছু করতে হয় আমীরের কথামতো। অন্যথায় দশজনের কথা শুনতে হয়।

ভেবেছিলাম ওমরা করে এসে ঢুকব। কিন্তু ওমরার পর শরীর এতটাই ক্লান্ত ছিল, হেঁটে হোটেলে যাওয়াই দায় হয়ে পড়েছিল।

সৌদিতে চলাচলের দুই ব্যবস্থা। হয় হেঁটে নয়তো জিপে করে। অন্য কোনো অপশন নেই। বাংলাদেশ বা ভারতের মতো রিকশা, অটোর ব্যবহার এদেশে এখনও শুরু হয়নি। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটে হোটেলে গিয়ে উঠলাম।

কিন্তু মন পড়ে রইল সেই লেখাটির ওপর। মাকতাবাতুল হারাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের জামাতে শরিক হলাম। বিভিন্ন আমল শেষে বাদশা ফাহাদ গেটের কাছে গিয়ে একজনকে আরবিতে জিজ্ঞেস করলাম, মাকতাবায় যাওয়ার পথ কোনটি?

সে আমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝল না। আবার জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সৌদি নাগরিক? বললো, হ্যাঁ, অবশ্যই। বুঝলাম তাকে বইয়ের ভাষা বললে কিছুই বুঝবে না। শুধু এটুকু বললাম, মাকতাবা। সে ইশারায় দেখিয়ে দিলেন দোতলায়। আর হাসল।

আমি তার হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। হাসার দরকার ছিল আমার। সৌদিয়ান অথচ বিশুদ্ধ আরবি জানে না! আবার গর্বের সাথে বলে জি-অবশ্যই।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। সম্ভবত চারতলায় মাকতাবা। হেরেম শরিফের ১ম তলা ২য় তলা ঠাহর করা কঠিন ব্যাপার। সবই মনে হয় নিচতলা আবার সবই মনে হয় দ্বিতীয়তলা।

মাকতাবায় ঢুকলাম। বিশাল লাইব্রেরি। কমপক্ষে এক লাখ কিতাবের সমারোহ। সবই সৌদি ছাপা। হিন্দুস্তানি ছাপায় অস্পষ্টতায় ভরপুর। সৌদি ছাপায় কোনো অস্পষ্টতা নেই।

এ পর্যন্ত যত আরবি কিতাব পড়েছি সবই দেখলাম আছে। কোনোটাই বাদ পড়েনি কিন্তু দেখলাম একশ’ ভাগের একভাগ কিতাবও পড়া হয়নি। তাতে আমার জ্ঞানের পরিধি বুঝলাম। মনকে বললাম, নিজেকে তো অনেক বড় পড়ুয়া মনে করো, অথচ একটা লাইব্রেরির কিতাবও তুমি শেষ করতে পারনি।

সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে শরহুল বিকায়া কিতাবের নুসখাটি। এত সুন্দর ছাপা! হিন্দুস্তানি ছাপায় নামাজের ওয়াক্তের বর্ণনা বুঝে আসেনি কিন্তু এই নুসখায় অনেকটা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। আশা করি এখন ঘড়ি ছাড়াও নামাজের ওয়াক্ত বলে দিতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না।

আরেকটি কিতাবের শরাহ (ব্যাখ্যাগ্রন্থ) দেখলাম। নাম ঠিক মনে করতে পারছি না। মাকামাতে হারিরির শরাহ। সানাবিয়া উলয়ায় মাকামাতের যে শরাহটি পড়েছিলাম সেটি ছিলো মাওলানা আহমদ মাইমূন সাহেবের।

বাংলা ভাষায় হলেও প্রথম প্রথম বুঝতে বারোটা বেজে যেত। কিন্তু মাকামাতের এই আরবি শরাহটি এতটাই সুন্দর ও সহজ- যে কেউ বুঝবে আশা করি। প্রায় দুই ঘণ্টা শুধু এই শরাহটিই মুতায়ালা করেছি।

আরবি শরাহ সহজপাঠ্য, এটা জানতাম এবং সবসময় আরবি শরাহ মুতায়ালা করতাম। কিন্তু আরবি শরাহ এতটা সহজ ও আসান সেটা জানতাম না।

ইচ্ছে করছিল শরাহটি কিনে ফেলি কিন্তু আশপাশে কোনো লাইব্রেরিতে শরাহটি পেলাম না। আর এই লাইব্রেরিতে বিক্রয় নিষিদ্ধ!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কাবার লাইব্রেরিতে স্মৃতিময় কিছু সময়

আপডেট টাইম : ০৭:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশ থেকে এসে প্রথম যেদিন ওমরার জন্য ঢুকলাম বাদশা ফাহাদ গেটের ডানপাশে লেখা দোখলাম ‘মাকতাবাতুল হারাম’। দলবদ্ধ থাকার কারণে সেদিন মাকতাবায় ঢুকতে পারিনি।

দলবদ্ধ থাকার এই এক অসুবিধা। নিজের মনমতো কিছুই করা যায় না। সবকিছু করতে হয় আমীরের কথামতো। অন্যথায় দশজনের কথা শুনতে হয়।

ভেবেছিলাম ওমরা করে এসে ঢুকব। কিন্তু ওমরার পর শরীর এতটাই ক্লান্ত ছিল, হেঁটে হোটেলে যাওয়াই দায় হয়ে পড়েছিল।

সৌদিতে চলাচলের দুই ব্যবস্থা। হয় হেঁটে নয়তো জিপে করে। অন্য কোনো অপশন নেই। বাংলাদেশ বা ভারতের মতো রিকশা, অটোর ব্যবহার এদেশে এখনও শুরু হয়নি। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটে হোটেলে গিয়ে উঠলাম।

কিন্তু মন পড়ে রইল সেই লেখাটির ওপর। মাকতাবাতুল হারাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের জামাতে শরিক হলাম। বিভিন্ন আমল শেষে বাদশা ফাহাদ গেটের কাছে গিয়ে একজনকে আরবিতে জিজ্ঞেস করলাম, মাকতাবায় যাওয়ার পথ কোনটি?

সে আমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝল না। আবার জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি সৌদি নাগরিক? বললো, হ্যাঁ, অবশ্যই। বুঝলাম তাকে বইয়ের ভাষা বললে কিছুই বুঝবে না। শুধু এটুকু বললাম, মাকতাবা। সে ইশারায় দেখিয়ে দিলেন দোতলায়। আর হাসল।

আমি তার হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। হাসার দরকার ছিল আমার। সৌদিয়ান অথচ বিশুদ্ধ আরবি জানে না! আবার গর্বের সাথে বলে জি-অবশ্যই।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। সম্ভবত চারতলায় মাকতাবা। হেরেম শরিফের ১ম তলা ২য় তলা ঠাহর করা কঠিন ব্যাপার। সবই মনে হয় নিচতলা আবার সবই মনে হয় দ্বিতীয়তলা।

মাকতাবায় ঢুকলাম। বিশাল লাইব্রেরি। কমপক্ষে এক লাখ কিতাবের সমারোহ। সবই সৌদি ছাপা। হিন্দুস্তানি ছাপায় অস্পষ্টতায় ভরপুর। সৌদি ছাপায় কোনো অস্পষ্টতা নেই।

এ পর্যন্ত যত আরবি কিতাব পড়েছি সবই দেখলাম আছে। কোনোটাই বাদ পড়েনি কিন্তু দেখলাম একশ’ ভাগের একভাগ কিতাবও পড়া হয়নি। তাতে আমার জ্ঞানের পরিধি বুঝলাম। মনকে বললাম, নিজেকে তো অনেক বড় পড়ুয়া মনে করো, অথচ একটা লাইব্রেরির কিতাবও তুমি শেষ করতে পারনি।

সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে শরহুল বিকায়া কিতাবের নুসখাটি। এত সুন্দর ছাপা! হিন্দুস্তানি ছাপায় নামাজের ওয়াক্তের বর্ণনা বুঝে আসেনি কিন্তু এই নুসখায় অনেকটা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। আশা করি এখন ঘড়ি ছাড়াও নামাজের ওয়াক্ত বলে দিতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না।

আরেকটি কিতাবের শরাহ (ব্যাখ্যাগ্রন্থ) দেখলাম। নাম ঠিক মনে করতে পারছি না। মাকামাতে হারিরির শরাহ। সানাবিয়া উলয়ায় মাকামাতের যে শরাহটি পড়েছিলাম সেটি ছিলো মাওলানা আহমদ মাইমূন সাহেবের।

বাংলা ভাষায় হলেও প্রথম প্রথম বুঝতে বারোটা বেজে যেত। কিন্তু মাকামাতের এই আরবি শরাহটি এতটাই সুন্দর ও সহজ- যে কেউ বুঝবে আশা করি। প্রায় দুই ঘণ্টা শুধু এই শরাহটিই মুতায়ালা করেছি।

আরবি শরাহ সহজপাঠ্য, এটা জানতাম এবং সবসময় আরবি শরাহ মুতায়ালা করতাম। কিন্তু আরবি শরাহ এতটা সহজ ও আসান সেটা জানতাম না।

ইচ্ছে করছিল শরাহটি কিনে ফেলি কিন্তু আশপাশে কোনো লাইব্রেরিতে শরাহটি পেলাম না। আর এই লাইব্রেরিতে বিক্রয় নিষিদ্ধ!