ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরনো বছরের যে মুহূর্তের স্মৃতিগুলো মাশরাফিকে তাড়িয়ে বেড়ায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ৪৮৪ বার

অেনক অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের মতো একটা বছর চলে গেল। তবে অনেক ছবিই স্মৃতির দেয়ালে থেকে যাবে সোনালি ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে নিজের চোখে স্মরণীয় ১০টি মুহূর্তের কথা জানালেন বাংলা টাইগারদের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নিজেই জানালেন মাশরাফি। এক. সবার আগে বলব বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর সবাই যে মাঠে গড়াগড়ি করছিলাম, ওই মুহূর্তটার কথা। ২০১৫ সালে যে আমরা এত ভালো করেছি, সবাই এত প্রশংসা করল; ওই ম্যাচই কিন্তু ছিল সবকিছুর টার্নিং পয়েন্ট। সে জন্যই এটাকে এক নম্বরে রাখব। দুই. ইংল্যান্ড ম্যাচেই সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহর উদযাপন আমার খুব ভালো লেগেছে। ও ওর বাচ্চার উদ্দেশে যেটা করল…দুই হাতের আঙুল দিয়ে ‘হার্ট’ চিহ্ন আঁকল। বাচ্চাটা তখনো অনেক ছোট ছিল। তিন. এটাও ওই ম্যাচেরই মুহূর্ত…রুবেলের তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নেওয়ার পরের সময়টা। দলের সবার মাথার ওপর পাহাড় সমান চাপ ছিল। সেখান থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে সব চাপ নেমে গেল। কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও একটা ম্যাচ বাকি ছিল। কিন্তু আমরা জানতাম নিউজিল্যান্ড খুব ভালো ফর্মে আছে। ইংল্যান্ড ম্যাচটা তাই আমাদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। চার. পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুলের জুটির বিশ্ব রেকর্ড করার পরের সময়টা। আমি খেলাটা টেলিভিশনে দেখেছি। মাঠে থাকলে হয়তো ওই অনুভূতিই এক নম্বরে আসার মতো হতো। বাংলাদেশ দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে খুব গর্ববোধ করছিলাম সেদিন। টেস্ট খেলাটাও তখন মিস করেছি ভীষণ। পাঁচ. দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ের পর আসলেই মনে হচ্ছিল, বিরাট একটা কাজ করে ফেলেছি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি বলে নয়। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টানা তিন সিরিজ জিতলাম, অনুভূতিটা আসলে সে কারণেই। এ তিন সিরিজে কয়েকটা ম্যাচ জিততে হবে, এ রকমই পরিকল্পনা ছিল শুরুতে। কিন্তু তিনটা সিরিজই জিতে যাব, সম্ভবত খেলোয়াড়েরাও কেউ ভাবেনি। ছয়. এরপরই বলব আমাদের ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সাতে আসার কথা। সেদিন বাসা থেকে বের হয়েই জানতে পারি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা সাত নম্বরে চলে এসেছি। আমরা সব সময় স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে ওপরের দিকে যাবে। ওটা ছিল সে রকমই একটা ধাপ, যার অংশ হতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। শুধু আমি নই, বাংলাদেশে যারা ক্রিকেট ভালোবাসে তাদের সবার জন্যই বিরাট মুহূর্ত ছিল ওটা। সাত. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকের ৮৯ রানে আউট হওয়ার সময়টাও আমার চোখে ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। একটু খারাপও লাগছিল অবশ্য। এমন একটা ইনিংস সেঞ্চুরিতে রূপ নিল না! তবে অধিনায়ক হিসেবে আমার কাছে ওই ৮৯ রানের গুরুত্ব সেঞ্চুরির চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বুঝি তার সেরা ইনিংসটা খেলে বের হচ্ছে। তবে মুশফিকের হতাশা দেখে মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরিটা হলেই ভালো হতো। আট. পাকিস্তানের বিপ‌ক্ষে তামিমের ফর্মে ফেরাও আসবে এই তালিকায়। অনেক চাপের মধ্যে ছিল, নানা রকম কথা হচ্ছিল ওকে নিয়ে। বাংলাদেশের হয়ে করা তামিমের কীর্তিগুলো যেন সবাই তখন ভুলে গিয়েছিল! সেখান থেকে ও যেভাবে ফিরে এসেছে, এটাই একজন বড় খেলোয়াড়ের পরিচয়। পাকিস্তান সিরিজে পর পর দুই সেঞ্চুরি, সুযোগ ছিল তৃতীয় ওয়ানডেতেও। তামিমের ফিরে আসাটা আসলে ছিল সময়ের ব্যাপার। সেটা সামনে থেকে দেখতে পেরে ভালো লেগেছে। নয়. ওয়ানডেতে সাকিবের প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার মুহূর্ত। অনেক বড় বোলার সাকিব। এটা তার প্রাপ্য ছিল। অনেকবারই কাছাকাছি গিয়ে পারেনি। চার উইকেটেই আটকে গেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবার যখন চার উইকেট পেল, তখন মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে চলে এসেছিলাম। সেই অধিনায়কত্ব করছিল তখন। ওই ম্যাচ খেলেই সাকিব সন্তানের জন্ম উপল‌ক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেল। ওর সন্তানের জন্য হলেও এই বিশেষ অর্জনটা খুব দরকার ছিল। দশ. বিশ্বকাপ এবং সবগুলো সিরিজ শেষ করার পরের অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। পেছন ফিরে পুরো বছরটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো যেন স্বপ্ন-সাগর পাড়ি দিয়ে এলাম! দলের সবাইকে মনে হচ্ছিল খুব পরিণত আর পেশাদার। মনে হচ্ছিল, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতাটা সবার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে। এগুলোই আসলে বড় দল হয়ে ওঠার লক্ষণ। আগে হয়তো এসবের কিছুটা অভাব ছিল। ভালো করলেও আরও ভালো করার তাড়না এবং সমালোচনা হলে সেটাকে সহ্য করার শক্তি থাকতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরনো বছরের যে মুহূর্তের স্মৃতিগুলো মাশরাফিকে তাড়িয়ে বেড়ায়

আপডেট টাইম : ১১:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

অেনক অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের মতো একটা বছর চলে গেল। তবে অনেক ছবিই স্মৃতির দেয়ালে থেকে যাবে সোনালি ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে নিজের চোখে স্মরণীয় ১০টি মুহূর্তের কথা জানালেন বাংলা টাইগারদের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নিজেই জানালেন মাশরাফি। এক. সবার আগে বলব বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর সবাই যে মাঠে গড়াগড়ি করছিলাম, ওই মুহূর্তটার কথা। ২০১৫ সালে যে আমরা এত ভালো করেছি, সবাই এত প্রশংসা করল; ওই ম্যাচই কিন্তু ছিল সবকিছুর টার্নিং পয়েন্ট। সে জন্যই এটাকে এক নম্বরে রাখব। দুই. ইংল্যান্ড ম্যাচেই সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহর উদযাপন আমার খুব ভালো লেগেছে। ও ওর বাচ্চার উদ্দেশে যেটা করল…দুই হাতের আঙুল দিয়ে ‘হার্ট’ চিহ্ন আঁকল। বাচ্চাটা তখনো অনেক ছোট ছিল। তিন. এটাও ওই ম্যাচেরই মুহূর্ত…রুবেলের তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নেওয়ার পরের সময়টা। দলের সবার মাথার ওপর পাহাড় সমান চাপ ছিল। সেখান থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে সব চাপ নেমে গেল। কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও একটা ম্যাচ বাকি ছিল। কিন্তু আমরা জানতাম নিউজিল্যান্ড খুব ভালো ফর্মে আছে। ইংল্যান্ড ম্যাচটা তাই আমাদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। চার. পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুলের জুটির বিশ্ব রেকর্ড করার পরের সময়টা। আমি খেলাটা টেলিভিশনে দেখেছি। মাঠে থাকলে হয়তো ওই অনুভূতিই এক নম্বরে আসার মতো হতো। বাংলাদেশ দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে খুব গর্ববোধ করছিলাম সেদিন। টেস্ট খেলাটাও তখন মিস করেছি ভীষণ। পাঁচ. দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ের পর আসলেই মনে হচ্ছিল, বিরাট একটা কাজ করে ফেলেছি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি বলে নয়। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টানা তিন সিরিজ জিতলাম, অনুভূতিটা আসলে সে কারণেই। এ তিন সিরিজে কয়েকটা ম্যাচ জিততে হবে, এ রকমই পরিকল্পনা ছিল শুরুতে। কিন্তু তিনটা সিরিজই জিতে যাব, সম্ভবত খেলোয়াড়েরাও কেউ ভাবেনি। ছয়. এরপরই বলব আমাদের ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সাতে আসার কথা। সেদিন বাসা থেকে বের হয়েই জানতে পারি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা সাত নম্বরে চলে এসেছি। আমরা সব সময় স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে ওপরের দিকে যাবে। ওটা ছিল সে রকমই একটা ধাপ, যার অংশ হতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। শুধু আমি নই, বাংলাদেশে যারা ক্রিকেট ভালোবাসে তাদের সবার জন্যই বিরাট মুহূর্ত ছিল ওটা। সাত. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকের ৮৯ রানে আউট হওয়ার সময়টাও আমার চোখে ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। একটু খারাপও লাগছিল অবশ্য। এমন একটা ইনিংস সেঞ্চুরিতে রূপ নিল না! তবে অধিনায়ক হিসেবে আমার কাছে ওই ৮৯ রানের গুরুত্ব সেঞ্চুরির চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বুঝি তার সেরা ইনিংসটা খেলে বের হচ্ছে। তবে মুশফিকের হতাশা দেখে মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরিটা হলেই ভালো হতো। আট. পাকিস্তানের বিপ‌ক্ষে তামিমের ফর্মে ফেরাও আসবে এই তালিকায়। অনেক চাপের মধ্যে ছিল, নানা রকম কথা হচ্ছিল ওকে নিয়ে। বাংলাদেশের হয়ে করা তামিমের কীর্তিগুলো যেন সবাই তখন ভুলে গিয়েছিল! সেখান থেকে ও যেভাবে ফিরে এসেছে, এটাই একজন বড় খেলোয়াড়ের পরিচয়। পাকিস্তান সিরিজে পর পর দুই সেঞ্চুরি, সুযোগ ছিল তৃতীয় ওয়ানডেতেও। তামিমের ফিরে আসাটা আসলে ছিল সময়ের ব্যাপার। সেটা সামনে থেকে দেখতে পেরে ভালো লেগেছে। নয়. ওয়ানডেতে সাকিবের প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার মুহূর্ত। অনেক বড় বোলার সাকিব। এটা তার প্রাপ্য ছিল। অনেকবারই কাছাকাছি গিয়ে পারেনি। চার উইকেটেই আটকে গেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবার যখন চার উইকেট পেল, তখন মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে চলে এসেছিলাম। সেই অধিনায়কত্ব করছিল তখন। ওই ম্যাচ খেলেই সাকিব সন্তানের জন্ম উপল‌ক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেল। ওর সন্তানের জন্য হলেও এই বিশেষ অর্জনটা খুব দরকার ছিল। দশ. বিশ্বকাপ এবং সবগুলো সিরিজ শেষ করার পরের অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। পেছন ফিরে পুরো বছরটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো যেন স্বপ্ন-সাগর পাড়ি দিয়ে এলাম! দলের সবাইকে মনে হচ্ছিল খুব পরিণত আর পেশাদার। মনে হচ্ছিল, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতাটা সবার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে। এগুলোই আসলে বড় দল হয়ে ওঠার লক্ষণ। আগে হয়তো এসবের কিছুটা অভাব ছিল। ভালো করলেও আরও ভালো করার তাড়না এবং সমালোচনা হলে সেটাকে সহ্য করার শক্তি থাকতে হবে।