হাওর বার্তা ডেস্কঃ চিরতার রস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তেঁতো স্বাদের এই রস শরীরের বিভিন্ন রোগ মুক্তির মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এই করোনাকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
সুপ্রাচীনকাল থেকে চিরতা ভারতবর্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে হিমালয়ের পাদভূমিতে এর উৎপত্তি। সেখান থেকে ভারতের বিভিন্ন অংশে নেপাল ও ভুটানে তা ছড়িয়ে পড়ে। এ গাছের সব অংশই রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা যায়।
রোগ নিরাময়ে চিরতার সমস্ত গাছই ব্যবহার করা হয়। তবে এর শিকড় সবচেয়ে বেশি কার্যকর। চিরতা চর্ম রোগ ও জ্বর সারাতে এক ওস্তাদ গাছ। এছাড়াও হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, ম্যালেরিয়া জ্বর, অ্যাজমা প্রভৃতি কঠিন অসুখের চিকিৎসাতেও চিরতা ব্যবহার করা হয়। নিচে চিরতার উল্লেখযোগ্য কিছু ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
> চিরতা খেলে যেকোনো কাটা, ছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত শুকায়। ঘা হয়েছে অথচ কিছুতেই সারছে না। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে ঘায়ের পচানি চলে যাবে ও দ্রুত শুকাবে।
> গায়ে চুলকানি হলে ২০ গ্রাম চিরতাতে অল্প পানি ছিটিয়ে বেঁটে বা ছেঁচে নিতে হবে। তারপর তা সরিষার তেল দিয়ে জ্বাল দিয়ে চিরতা মেশাতে হবে। ভালো করে ভাজা হলে নামিয়ে ছাঁকতে হবে। এই তেল চুলকানোর জায়গায় ঘষে অল্প অল্প করে মালিশ করলে দ্রুত চুলকানি সেরে যাবে।
> অ্যালার্জির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এজন্য আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বারে খেতে হবে।
> ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে চিরতা। এই পাতা নিয়মিতভাবে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমে। চিরতা দেহে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
> চিরতার মধ্যে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে দিতে পারে। এমনকি নিয়মিত চিরতা সেবনে ক্যান্সার ও হৃদরোগে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
> ঠাণ্ডা-জ্বর কাবু করতেও চিরতা কার্যকর। এ অবস্থা হলে ৫-১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরে তা ছেঁকে সকালে অর্ধেক ও বিকেলে অর্ধেক খেতে হবে।
> কাশি-হাঁপানি-ও শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে এই পাতা। এক্ষেত্রে আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়া তিন ঘণ্টা অন্তর মধুসহ চেটে খাবেন। এতে ২-৩ দিনের মধ্যে প্রবল হাঁপানি কমে যাবে।
> রক্তশূন্যতা কমায়, চিরতা রক্ত পরিষ্কার রাখে। তাই চিরতা সেবনে রক্তশূন্যতা কমে যায়। এমনকি ঋতুস্রাব বা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাও কমাতে পারে। কোথাও কেটে গেলে সে কাটা স্থানে চিরতার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়। অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তপড়া এসবও চিরতা বন্ধ করতে পারে।
> কৃমি হলে পেটের উপরের অংশটা মোচড়ায়, ব্যথা করে। পেটে কৃমি হলে আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়া সকালে মধুসহ বা চিনি মিশিয়ে চেটে খাবেন। এরপর পানি খেতে পারেন। এতে কৃমির উপদ্রব চলে যাবে।
> চুল ওঠা বন্ধ করে চিরতা। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে। একদিন পর পর একদিন এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। ৩-৪ বার এভাবে ধুতে পারলে চুল ওঠা অনেক কমে যাবে।
> অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চিরতায় হৃদরোগে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
> বাড়তি ওজন কমাতেও পান করা যায় চিরতা ভেজানো পানি।
> হজমশক্তি বাড়ে ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।