রসুন এক দারুণ পেনিসিলিন জাতীয় মসলা। আমরা নিত্যদিন বিভিন্ন তরকারীতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি এই মসলাটি। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এর গুণাগুণের মাত্রা কতখানি। আপনি অবাক হয়ে যাবেন যদি জানেন যে এই রসুন মানুষের দেহে এমন কোনো রোগ বালাই নেই যার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ ওয়েবসাইট ‘মেডলাইন প্লাস’ জানিয়েছে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষ কোলন, রেক্টাল, পাকস্থলী, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন ব্যবহার করে থাকেন।
মিনারেলস সমৃদ্ধ মসলা রসুন। এর পরিমাণ এত বেশি যে কারো কারো কাছে এটি মিনারেলসের মিনি স্টোর হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও ভিটামিন ‘সি’। এটি চমৎকার অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে দূরে রাখে।
১. প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক :
রসুনে থাকা ভিটামিন ‘সি’র কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। কেননা এই ভিটামিন স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। একই সঙ্গে তা রক্তনালি নমনীয় রাখে।
২. রক্ত চলাচলে সহায়তা :
রসুনে ‘অ্যাজোইন’ নামক এক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এ পদার্থ নির্বিঘ্নে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। একই সঙ্গে রক্তের কোলেস্টরেল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩. হরমোন নিঃসরণ :
রসুনে থাকা সালফার আমাদের শরীরের নানা হরমোন নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।
৪. হৃদরোগজনিত সমস্যা :
হৃদজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভীষণ কার্যকর এ ভেষজ। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত, এটি উচ্চ রক্তচাপও কমিয়ে দেয়।
৫. রোগজীবাণু ধ্বংস :
রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ পদার্থ ক্ষত সারাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পদার্থটি যক্ষা, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতির রোগজীবাণু ধ্বংস করে।
৬. ঠান্ডা কমায় :
ঠান্ডা লাগা, গলা বসে যাওয়া কিংবা গলাব্যথা, মাথাব্যথা, গেঁটে বাত, হাঁপানি, ব্রংকাইটিসের সমস্যায় রসুন চিবিয়ে খেলে এ ধরণের সমস্যাগুলো একেবারেই থাকে না।
৭. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে :
ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী মসলা এই রসুন। এটি ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৮. হজমের সমস্যা দূর করে :
লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমের সমস্যা দূর করে এ ঔষধি। অ্যালার্জি সারিয়ে তুলতে এর ভূমিকা সুবিদিত।
৯. ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনে :
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ফুড পয়জনিং নিবারণ করে এ মসলা।
১০. পুরুষের সুস্থ স্পার্ম তৈরি :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি মিলিলিটার শুক্রাণুতে ২০ মিলিয়নের কম স্পার্ম থাকলে যেকোনো পুরুষ অনুর্বর হতে পারেন। বাজে খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন, ব্যায়ামে অনীহা প্রভৃতি কারণে দিন দিন অনুর্বরতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক মসলা রসুন। কেননা সুস্থ স্পার্ম তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার।