ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রীষ্মে আসে, শীতে ফিরে যায় পাখিবাড়ির পাখিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ৫৬১ বার

গ্রীষ্মের শুরুতে সদলবলে আসে তারা। নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাড়িটির গাছে গাছে সংসার পাতে। চলে কয়েক মাসের ঘরকন্না। এরপর গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত পেরিয়ে যেই শীত তার চাদর মেলে ধরে, তখনি এখানে বসবাসের পালা সাঙ্গ হয় তাদের।

শীত জমে বসতে না বসতেই ঘর-দোর খালি করে ফিরে যায় পরিযায়ী এসব পাখি।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের মাধবডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল হাসান ওরফে ভূটান সরকারের বাড়িটি পাখিদের এ আসা-যাওয়ার কারণে সবাই চেনেন ‘পাখিবাড়ি’ নামেই।

এভাবেই চলছে গত ২০ বছর ধরে। একবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও ফিরে যেতে শুরু করেছে ‘পাখিবাড়ি’তে বেড়াতে এসে সংসার পাতা পরিযায়ী পাখিরা।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূটান সরকারের বাড়ির বিভিন্ন গাছে গ্রীষ্মের শুরুতেই আসতে শুরু করে নানা জাতের পাখি। বাসা তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে তারা। এ কারণে বাড়িটিই পরিচিতি পেয়েছে ‘পাখিবাড়ি’ নামে।

কিন্তু শীত মৌসুম শুরু হতেই পাখিগুলো পাখিবাড়ির গাছ থেকে সরে যেতে শুরু করে। এগুলো গ্রামের আশপাশ ও উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে চলে যায়। এ সময়টা পাখিবাড়ি পুরোটা পাখিশূন্য হয়ে পড়ে।

গ্রীষ্ম থেকে হেমন্ত পর্যন্ত তাই পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙলেও শীতকাল কাটে তার উল্টো।

পাখিবাড়ির বাসিন্দা ভূটান সরকার বাংলানিউজকে জানান, তার বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর তাদের এ বসতবাড়ি। পূর্বমুখী বাড়ির চারপাশে মেহগনি, আকাশমনি, নিম, বেল ও তেতুলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। আছে অনেক পুরনো বেশ বড় বাঁশবাগানও।

ভূটান সরকার জানান, তার বাড়িতে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরুর কথাও।

সে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। চৈত্র মাসের কোনো একদিন বিকেলে একঝাঁক পাখি আসে তাদের গাছে। পাখিগুলো আশ্রয় নেয় বাড়ির সামনের দিকে পুকুর পাড়ে একটি তেঁতুল গাছে। সেখানেই বাসা বেঁধে শুরু হয় তাদের ঘরকন্না। এক সময় মা পাখিগুলোর ডিম থেকে জন্ম নেয় বাচ্চা। বাড়তে থাকে তাদের বহর।

এরপর থেকে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের শুরুতে নানা প্রজাতির পাখিরা দল বেঁধে আসতে শুরু করে বাড়ির অন্যান্য গাছেও। সেই থেকে শুরু তাদের আসা। আর শীতের শুরুতে শুরু হয় চলে যাওয়া। এর মধ্যে গ্রামের অনেক পরিবর্তন এলেও পাখিদের এ নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত ২০ বছর ধরেই পাখিবাড়িতে আসছে-যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।

ভূটান সরকার বাংলানিউজকে জানান, এসব পাখির মধ্যে রয়েছে সরালি, ছোট জিরিয়া, মানিকজোড়, চামচঠুঁটি, সাদা বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। রয়েছে নাম না জানা কয়েক প্রজাতির পাখিও।

ভূটান সরকারের বড় ভাই আবু হোসেন জানান, যতোদূর জেনেছি, শীতকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদেশে পাখিরা এসে বাসা বাঁধে। কিন্তু এ গ্রামে এটা তার বিপরীত। তাদের বাড়ির পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পাখিপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষেরা।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ সময় পাখিগুলো থাকায় তাদের সঙ্গে এক ধরনের সখ্যতা তৈরি হয়েছে। ফলে শীতকালে পাখিরা ফিরে গেলে এলাকায় নেমে আসে অনেকটাই সুনশান নীরবতা। এজন্য তাদের খারাপও লাগে। গ্রামবাসী ঝাঁকে ঝাঁকে আবারো পাখিদের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় থাকেন।

ধুনট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বাড়িটি পাখিদের জন্য নিরাপদ স্থান। পাখিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, গ্রামের পাশ দিয়েই বহমান যমুনা নদী। ফলে নদীতে পাখিরা নিরাপদে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণেই প্রতি বছর পাখিরা এ বাড়িতে এসে বাসা বাঁধে, বাচ্চার জন্ম দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রীষ্মে আসে, শীতে ফিরে যায় পাখিবাড়ির পাখিরা

আপডেট টাইম : ১২:৪৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

গ্রীষ্মের শুরুতে সদলবলে আসে তারা। নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাড়িটির গাছে গাছে সংসার পাতে। চলে কয়েক মাসের ঘরকন্না। এরপর গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত পেরিয়ে যেই শীত তার চাদর মেলে ধরে, তখনি এখানে বসবাসের পালা সাঙ্গ হয় তাদের।

শীত জমে বসতে না বসতেই ঘর-দোর খালি করে ফিরে যায় পরিযায়ী এসব পাখি।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের মাধবডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল হাসান ওরফে ভূটান সরকারের বাড়িটি পাখিদের এ আসা-যাওয়ার কারণে সবাই চেনেন ‘পাখিবাড়ি’ নামেই।

এভাবেই চলছে গত ২০ বছর ধরে। একবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও ফিরে যেতে শুরু করেছে ‘পাখিবাড়ি’তে বেড়াতে এসে সংসার পাতা পরিযায়ী পাখিরা।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূটান সরকারের বাড়ির বিভিন্ন গাছে গ্রীষ্মের শুরুতেই আসতে শুরু করে নানা জাতের পাখি। বাসা তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে তারা। এ কারণে বাড়িটিই পরিচিতি পেয়েছে ‘পাখিবাড়ি’ নামে।

কিন্তু শীত মৌসুম শুরু হতেই পাখিগুলো পাখিবাড়ির গাছ থেকে সরে যেতে শুরু করে। এগুলো গ্রামের আশপাশ ও উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে চলে যায়। এ সময়টা পাখিবাড়ি পুরোটা পাখিশূন্য হয়ে পড়ে।

গ্রীষ্ম থেকে হেমন্ত পর্যন্ত তাই পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙলেও শীতকাল কাটে তার উল্টো।

পাখিবাড়ির বাসিন্দা ভূটান সরকার বাংলানিউজকে জানান, তার বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর তাদের এ বসতবাড়ি। পূর্বমুখী বাড়ির চারপাশে মেহগনি, আকাশমনি, নিম, বেল ও তেতুলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। আছে অনেক পুরনো বেশ বড় বাঁশবাগানও।

ভূটান সরকার জানান, তার বাড়িতে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরুর কথাও।

সে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। চৈত্র মাসের কোনো একদিন বিকেলে একঝাঁক পাখি আসে তাদের গাছে। পাখিগুলো আশ্রয় নেয় বাড়ির সামনের দিকে পুকুর পাড়ে একটি তেঁতুল গাছে। সেখানেই বাসা বেঁধে শুরু হয় তাদের ঘরকন্না। এক সময় মা পাখিগুলোর ডিম থেকে জন্ম নেয় বাচ্চা। বাড়তে থাকে তাদের বহর।

এরপর থেকে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের শুরুতে নানা প্রজাতির পাখিরা দল বেঁধে আসতে শুরু করে বাড়ির অন্যান্য গাছেও। সেই থেকে শুরু তাদের আসা। আর শীতের শুরুতে শুরু হয় চলে যাওয়া। এর মধ্যে গ্রামের অনেক পরিবর্তন এলেও পাখিদের এ নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত ২০ বছর ধরেই পাখিবাড়িতে আসছে-যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।

ভূটান সরকার বাংলানিউজকে জানান, এসব পাখির মধ্যে রয়েছে সরালি, ছোট জিরিয়া, মানিকজোড়, চামচঠুঁটি, সাদা বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। রয়েছে নাম না জানা কয়েক প্রজাতির পাখিও।

ভূটান সরকারের বড় ভাই আবু হোসেন জানান, যতোদূর জেনেছি, শীতকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদেশে পাখিরা এসে বাসা বাঁধে। কিন্তু এ গ্রামে এটা তার বিপরীত। তাদের বাড়ির পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পাখিপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষেরা।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ সময় পাখিগুলো থাকায় তাদের সঙ্গে এক ধরনের সখ্যতা তৈরি হয়েছে। ফলে শীতকালে পাখিরা ফিরে গেলে এলাকায় নেমে আসে অনেকটাই সুনশান নীরবতা। এজন্য তাদের খারাপও লাগে। গ্রামবাসী ঝাঁকে ঝাঁকে আবারো পাখিদের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় থাকেন।

ধুনট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বাড়িটি পাখিদের জন্য নিরাপদ স্থান। পাখিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, গ্রামের পাশ দিয়েই বহমান যমুনা নদী। ফলে নদীতে পাখিরা নিরাপদে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণেই প্রতি বছর পাখিরা এ বাড়িতে এসে বাসা বাঁধে, বাচ্চার জন্ম দেয়।