হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনার থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উন্নয়ন ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ। গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ব্যয় হয়নি ৩৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। অর্থবছরজুড়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৫২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অথচ বরাদ্দ ছিল দুই লাখ এক হাজার ১৯৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিগগির এটি প্রকাশ করবে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ রোববার যুগান্তরকে বলেন, এবার করোনার কারণে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ আরএডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। এর কারণ প্রথমবারের মতো পরিকল্পনামন্ত্রী বিভাগীয় পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালক ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক শুরু করেছিলেন। আমিও প্রতিমাসে ডিসিদের নিয়ে দুটি করে উন্নয়ন সভা করতাম। আইএমইডির মহাপরিচালকদের পিডিদের সঙ্গে প্রতিমাসে কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করতাম। ফলে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যাপক গতি পেয়েছিল। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের শেষদিকে এসে লকডাউনের কারণে সব কাজ স্থবির হয়ে যায়। তিনি জানান, অব্যয়িত এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে সারেন্ডার করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথে এসে গত মার্চ মাসে কাটছাঁট করে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত গত অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে এক লাখ ৬১ হাজার ৫২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ফলে অব্যয়িত রয়ে গেছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আরএডিপি অনুমোদন পাওয়ার পর করোনা সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় লকডাউন। ফলে এপ্রিল-মে এবং জুন মাসে উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির ছিল। বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আরএডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্ব সময়ে শেষদিকে শুধু বিল পরিশোধ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক আরএডিপি বাস্তবায়নের ওপর।
এদিকে গত অর্থবছরে আরএডিপি বাস্তবায়নের যে হার দাঁড়িয়েছে সেটি এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই হার ছিল ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার কারণে উন্নয়নের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে হলে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। অর্থাৎ এই যে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করা গেল না। সেটি কোন কোন প্রকল্পে এবং করোনার জন্য কোন কারণে ব্যয় করা যায়নি সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এরপর জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং করোনা মোকাবেলায় সহায়ক এরকম প্রকল্পগুলোয় শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা দিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কাজ করাতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারকে জাতীয় গুরুত্বও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। করোনার আগের গুরুত্ব আর এখনকার গুরুত্ব এক হলে চলবে না। তিনি বলেন, করোনা বিবেচনায় এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর সবচেয়ে কম ১৫ দশমিক ০৩ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এরপর পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৫১ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সর্বোচ্চ আরএডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, সেতু বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, জ্বালনি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।