ঢাকা ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় কুরবানি ও ইসলামি শিক্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
  • ১৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সমগ্র বিশ্ব যখন মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ পরিস্থিতিতে কুরবানি দেয়া বৈধ কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব অতি ব্যাপক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো মহামারির সময় একজন মুমিন তার ইবাদতে দুর্বলতা দেখায় না বরং আরও গতির সঙ্গে ইবাদতে রত হয়। তাই বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পশু কুরবানি থেকে বিরত থাকার কোনো বিধান ইসলামে নেই।

কেবল গোশত খাওয়াই এ কুরবানির উদ্দেশ্য নয় বরং কুরবানির পশুর মত নিজেদের পশুত্বকে বলি দেয়ার শিক্ষাও আমরা এ থেকেই পেয়ে থাকি। আল্লাহ পাক বলেছেন-
‘এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে কুরবানি পালনের মাধ্যমে প্রতি বছর একজন মুসলমান নিজের মাঝে তাকওয়াকে আরও একবার ঝালিয়ে নেন, যেন প্রয়োজনের দিনে আল্লাহর পথে কুরবানির পশুর ন্যয় নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কুরবানির অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ১০ই জিলহজ তারিখে পশু কুরবানি করে থাকে। ইসলামে এই যে কুরবানির শিক্ষা তা কি কেবল একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়ে যায়?

আসলে পশু কুরবানি করাটা হচ্ছে একটা প্রতীকীমাত্র। আল্লাহ তাআলা চান মানুষ যেন তার পশুসূলভ হৃদয়কে কুরবানি করে, তার আমিত্বকে কুরবানি করে আর সেই সঙ্গে তার নিজের সমস্ত চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর খাতিরে কুরবানি করে দেয়।

এ কুরবানির অর্থ কেবল পশু জবেহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ কুরবানি কারও জন্য নিজ প্রাণের কুরবানিও হতে পারে আবার কারও নিজ পশুত্বের কুরবানিও হতে পারে। আমরা যদি মনের পশুকে কুরবানি করতে পারি তাহলেই আমরা আল্লাহ তাআলার প্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত হতে পারব।

প্রত্যেক বছরই কুরবানি করা আবশ্যক
কুরবানির গুরুত্ব তুলে ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময় তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন-
– ‘হে লোক সকল! জেনে রাখ, প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কুরবানি করা আবশ্যক।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)।

– ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য লাভ করে অথচ কুরবানির আয়োজন করেনি, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)।

– হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় দশ বছর অবস্থানকালে প্রতি বছর পশু কুরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি)

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মদিনা জীবনের প্রারম্ভের কয়েকটি বছর অত্যন্ত কষ্ট ও দারিদ্রের মাঝে মুসলমানদেরকে অতিবাহিত করতে হয়েছে।

তাই কেউ যদি মনে করে যে, করোনা পরিস্থিতে এ বছর কুরবানি না দিলে কি এমন ক্ষতি তা মোটেও ঠিক হবে না। এমনটি মনে করা হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের বিরুদ্ধে কাজ।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবিরা কত কষ্টই না সহ্য করেছেন, কিন্তু কখনই তার পবিত্র সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম একবারের জন্যও বলেন নি যে, হে আল্লাহর রাসুল! এ বছর আমাদের জন্য কুরবানি করাকে মাফ করে দিন। এমন প্রশ্ন কখনও উত্থাপনই করা হয়নি।

তাহলে কীভাবে আমরা এ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি যে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কুরবানিতে অংশ না নিলে হয় না?

তাই করোনার জন্য কুরবানি করা থেকে বিরত থাকার কোনো অনুমতি যে ইসলাম দেয় না তা আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

কুরআন-হাদিস এবং বুযুর্গানে দ্বীনের ভাষ্য থেকে যতটুকু জানা যায়, কুরবানির পেছনে যে উদ্দেশ্যটি কাজ করা আবশ্যক তা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর সন্তুষ্টি।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। যে কুরবানির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কাজ করে না সে কুরবানি, কুরবানির আওতায় পড়ে না।

পরিশেষে এটাই বলব-
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কুরবানি দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কুরবানি দিতে হবে। এছাড়া যাদেরকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দান করেছেন তারা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গরীব এলাকায় নিজেদের পক্ষ থেকে কুরবানির ব্যবস্থা করে অশেষ কল্যাণের ভাগি হতে পারেন। এতে আল্লাহর হক এবং বান্দার হক উভয় আদায় হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে আমাদেরকে কুরবানির পশু ক্রয় করা থেকে নিয়ে অন্যান্য সব কাজে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে হবে। আমরা যেন সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের যথাযথভাবে করবানি আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমাদের এ কুরবানি কবুল করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

করোনায় কুরবানি ও ইসলামি শিক্ষা

আপডেট টাইম : ১০:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সমগ্র বিশ্ব যখন মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ পরিস্থিতিতে কুরবানি দেয়া বৈধ কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব অতি ব্যাপক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো মহামারির সময় একজন মুমিন তার ইবাদতে দুর্বলতা দেখায় না বরং আরও গতির সঙ্গে ইবাদতে রত হয়। তাই বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পশু কুরবানি থেকে বিরত থাকার কোনো বিধান ইসলামে নেই।

কেবল গোশত খাওয়াই এ কুরবানির উদ্দেশ্য নয় বরং কুরবানির পশুর মত নিজেদের পশুত্বকে বলি দেয়ার শিক্ষাও আমরা এ থেকেই পেয়ে থাকি। আল্লাহ পাক বলেছেন-
‘এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে কুরবানি পালনের মাধ্যমে প্রতি বছর একজন মুসলমান নিজের মাঝে তাকওয়াকে আরও একবার ঝালিয়ে নেন, যেন প্রয়োজনের দিনে আল্লাহর পথে কুরবানির পশুর ন্যয় নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কুরবানির অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ১০ই জিলহজ তারিখে পশু কুরবানি করে থাকে। ইসলামে এই যে কুরবানির শিক্ষা তা কি কেবল একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়ে যায়?

আসলে পশু কুরবানি করাটা হচ্ছে একটা প্রতীকীমাত্র। আল্লাহ তাআলা চান মানুষ যেন তার পশুসূলভ হৃদয়কে কুরবানি করে, তার আমিত্বকে কুরবানি করে আর সেই সঙ্গে তার নিজের সমস্ত চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর খাতিরে কুরবানি করে দেয়।

এ কুরবানির অর্থ কেবল পশু জবেহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ কুরবানি কারও জন্য নিজ প্রাণের কুরবানিও হতে পারে আবার কারও নিজ পশুত্বের কুরবানিও হতে পারে। আমরা যদি মনের পশুকে কুরবানি করতে পারি তাহলেই আমরা আল্লাহ তাআলার প্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত হতে পারব।

প্রত্যেক বছরই কুরবানি করা আবশ্যক
কুরবানির গুরুত্ব তুলে ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময় তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন-
– ‘হে লোক সকল! জেনে রাখ, প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কুরবানি করা আবশ্যক।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)।

– ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য লাভ করে অথচ কুরবানির আয়োজন করেনি, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)।

– হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় দশ বছর অবস্থানকালে প্রতি বছর পশু কুরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি)

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মদিনা জীবনের প্রারম্ভের কয়েকটি বছর অত্যন্ত কষ্ট ও দারিদ্রের মাঝে মুসলমানদেরকে অতিবাহিত করতে হয়েছে।

তাই কেউ যদি মনে করে যে, করোনা পরিস্থিতে এ বছর কুরবানি না দিলে কি এমন ক্ষতি তা মোটেও ঠিক হবে না। এমনটি মনে করা হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের বিরুদ্ধে কাজ।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবিরা কত কষ্টই না সহ্য করেছেন, কিন্তু কখনই তার পবিত্র সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম একবারের জন্যও বলেন নি যে, হে আল্লাহর রাসুল! এ বছর আমাদের জন্য কুরবানি করাকে মাফ করে দিন। এমন প্রশ্ন কখনও উত্থাপনই করা হয়নি।

তাহলে কীভাবে আমরা এ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি যে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কুরবানিতে অংশ না নিলে হয় না?

তাই করোনার জন্য কুরবানি করা থেকে বিরত থাকার কোনো অনুমতি যে ইসলাম দেয় না তা আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

কুরআন-হাদিস এবং বুযুর্গানে দ্বীনের ভাষ্য থেকে যতটুকু জানা যায়, কুরবানির পেছনে যে উদ্দেশ্যটি কাজ করা আবশ্যক তা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর সন্তুষ্টি।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। যে কুরবানির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কাজ করে না সে কুরবানি, কুরবানির আওতায় পড়ে না।

পরিশেষে এটাই বলব-
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কুরবানি দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কুরবানি দিতে হবে। এছাড়া যাদেরকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দান করেছেন তারা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গরীব এলাকায় নিজেদের পক্ষ থেকে কুরবানির ব্যবস্থা করে অশেষ কল্যাণের ভাগি হতে পারেন। এতে আল্লাহর হক এবং বান্দার হক উভয় আদায় হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে আমাদেরকে কুরবানির পশু ক্রয় করা থেকে নিয়ে অন্যান্য সব কাজে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে হবে। আমরা যেন সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের যথাযথভাবে করবানি আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমাদের এ কুরবানি কবুল করুন। আমিন।