কলারোয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন তৃতীয় লিঙ্গের দিতি।
যদিও নির্বাচন কমিশনের ফরমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ পরিচয়ে আলাদাভাবে কোনো ঘর না থাকায় সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে হচ্ছে তাকে।
৪৫ বছর বয়সী দিতির বলেন, ‘আমাদের নিয়ে অনেকে টিজ করে, অবহেলা করে। এসবের প্রতিবাদ জানাতে আমি প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে জিতলে আমি গরীব আর অবহেলিত মানুষের পাশে থাকব এবং তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবো।’
সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে চাওয়া দিতি বলেন, ‘এলাকার গরীব, অবহেলিত মানুষই আমাকে বলেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে। আমি তাদের কথামত নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। তারা আমার শক্তি। তারা আমার অনুপ্রেরণা।’
দিতি আরো বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দরিদ্র মানুষের নামে বরাদ্দ হওয়া ত্রাণ যখন শুনি ধনী মানুষরা খেয়ে ফেলে, তখন মনে হলো এর প্রতিবাদ করতে আমার নির্বাচন করা দরকার। তাই এলাকার জনগণ আমাকে বলেছেন, আপনি নির্বাচনে দাঁড়ান, আমরা আপনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আমি গরীব মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। নির্বাচিত হলে সাধ্যমতো তাদের সেবা করবো। কেননা আমার কোনো পিছুটান নেই।’
৭ নং ওয়ার্ডের মুরারীকাঠি গ্রামের অধিবাসী আব্দুস সবুর, নজরুল ইসলাম ও আরিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘দিতি খুবই ভাল মানুষ। আমরা দলমত বুঝি না। তাকে ভোট দেব। তিনি নির্বাচিত হলে আমাদের গ্রামের কবরস্থান পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
তার নির্বাচনের কর্মী সুফিয়া খাতুন ও সালেহা খাতুন বলেন, ‘তার যেহেতু কোনো সন্তান নেই, আমাদেরকেই তিনি সন্তানের মত ভালবাসেন। গরীবের প্রতি তার ভালবাসা দেখে মানুষ দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দেবে।’
দিতি স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিয়ে প্রচারে সাহায্য করছে। এখন রাত দিন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন দলীয় কর্মীরা।
দিতির তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গী সীমা, অপু, পায়েল, নদী ও নূপুরসহ অন্যরাও তার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে। সাধারণ জনগণ তাদের সহায়তা করছেন। তারা উৎসাহ দিচ্ছেন।
কলারোয়া পৌর নির্বাচনের সদ্য বিদায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘কলারোয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে তার পছন্দের চুড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন দিতি।’
এখানে মোট ভোটার ৭ হাজার ৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৯২২ ও মহিলা ৩ হাজার ১০৮ জন।
জানা গেছে, যশোরের বেজপড়া গ্রামের হামিদ মিয়া ও দুর্লভী বেগমের সন্তান দিতি। এসএসসি পাশ করে ১৯৯৬ সালে এক গুরু মা চম্পার হাত ধরে চলে আসেন কলারোয়ায়। সে বছরেই পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে নারী ভোটার হিসেবে তালিকাভূক্ত হন